শাহরাস্তিতে ইউপি সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্যের বিতণ্ডা

শাহরাস্তি প্রতিনিধি : শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোঃ তুহিন খানের মাঝে বাকবিতণ্ডার ঘটনায় একে অপরকে মারধরের অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে ওই ইউনিয়নের কুরকামতা গ্রামে উভয়ের বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
তুহিন খান সরকারি রাস্তার ইট তুলে নিয়ে নিজের বাড়ির কাজে লাগিয়েছেন, সেই ইট ফেরৎ চাওয়ায় তিনি ইউপি সদস্য ফারুকের উপর হামলা চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য নিজে।

এদিকে সম্পূর্ন বিনা উস্কানিতে ইউপি সদস্য ফারুক তাকে মাথার পেছনে ঘুসি মেরে আহত করেছেন বলে দাবী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোঃ তুহিন খানের।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে কুরকামতা গ্রামের টিপু জানান, তুহিন খান রাস্তার কাজ করার সময় ইট তুলে নিয়ে গেছেন। ফারুক মেম্বার ওই ইট ফেরৎ চাইলে তিনি ফারুক মেম্বারের উপর হামলা চালান।

ওই গ্রামের মাসুদুল হকের পুত্র রিপন জানান, তুহিন খান রাস্তায় মাটি ফেলার সময় ইট তুলে নিয়ে যায়। মেম্বার ওই ইট ফেরৎ দেয়ার কথা বললে তুহিন খান তার উপর হামলা করে।

কাইথড়া গ্রামের ছটকি বাড়ির মৃতঃ নূরুল ইসলামের পুত্র অটো রিক্সা চালক জামাল হোসেন জানান, ঘটনার সময় পাড়ার চা দোকানি ইউনুসের সাথে তুহিন খান ঠাট্টা মশকরা করছিলেন, ওই সময় ফারুক মেম্বার মোটরসাইকেল থামিয়ে গালাগাল বন্ধ করতে বলেন। এ সময় তুহিন খান জানান, তারা ঠাট্টা মশকরা করছেন। এক পর্যায়ে উভয়ের মাঝে তর্কাতর্কি বেঁধে যায়। এতে উভয়েই একে অপরকে গালমন্দ ও ধাক্কাধাক্কি করে। তিনি আরও জানান এখানে কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি।

চা দোকানি ইউনুস জানান, আমার সাথে ঠাট্টা মশকরা করার সময় তুহিন খান ও ফারুক মেম্বারের সাথে তর্কাতর্কি লেগে যায়। এক পর্যায়ে একে অপরকে গালাগালি ও উভয়ে হাতাহাতি লেগে যায়।

এ বিষয়ে ৩ নং ইউপি সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন জানান, দেড়-দুই বছর পূর্বে এমপি মহোদয়ের বিশেষ বরাদ্দের অনুকুলে কুরকামতা আমান চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে থেকে মালি বাড়ি পর্যন্ত ২ শ’ ফুট রাস্তা ইটের সলিং করি। জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য তুহিন খান রাস্তায় মাটি ফেলার সময় নতুন ইট বসানোর কথা বলে পুরাতন ইট তুলে তার বাড়িতে বিল্ডিংয়ের কাজে ব্যবহার করে। আমি ওই ইট দিয়ে সামনের বাকি রাস্তার কাজ করে দিতে বলায় তুহিন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর হামলা চালায়। ওই সময় তুহিন সরকার আমাদের, ইটও আমাদের, তুই বিএনপির লোক কিছু করতে পারলে করিস বলে আমাকে হুমকী দেয় বলে ফারুক জানান।

তিনি আরও জানান, তুহিন খান মুসুল্লিদের দানের টাকায় করা মসজিদের বাথরুমে জেলা পরিষদের প্লেট লাগিয়ে ৩ বার বরাদ্দ এনে আত্মসাৎ করেছেন। মসজিদের ২য় তলার রড কেটে নিজের বাড়ি তৈরির কাজ করেছেন।

অপর দিকে তুহিন খান জানান, তার সঙ্গে আমি কিছুই করি নাই, বরং ফারুক আমার মা কে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং আমার উপর আক্রমন চালায়। আমি থানায় জিবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডাইরি করি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরাতন ইট তুলে নিয়ে সামনের রাস্তায় বসিয়েছি। মসজিদের কিছু রড নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে সেগুলো টাকার বিনিময়ে বাড়িতে নিয়েছি। এলাকার মুসল্লীদের দানে দেড় লাখ টাকার ব্যয়ে বাথরুম করি। সেই বাথরুম দেখিয়ে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ এনে সেই টাকা মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করেছি।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটিতে কিছু বিএনপির লোক সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি ওই স্কুলের এক ছাত্রীর সঙ্গে দুই শিক্ষকের অমানবিক ঘটনা ঘটে। তখন শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির বিএনপির সমর্থীত এক সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় পরিচালনা কমিটির বিএনপি সমর্থক মাহবুব আলম সম্প্রতি গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতার হওয়া মাহবুব আর মেম্বার ফারুক একই দলের সমর্থক হওয়ায় উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ফারুক গালাগাল করে। আমি বাধা দিলে সে আমার উপর হামলা চালায়।

রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইউপি সদস্য ফারুক ঘটনাটি আমাকে মোবাইলে জানিয়েছে। হানিফ চেয়ারম্যান থাকাকালীন তুহিন রাস্তার ইট নিয়েছে শুনেছি। আমার আমলে ওই রাস্তায় বরাদ্দ দিয়েছি। সদস্য ফারুক কাজ করেছে। তিনি আরও জানান, আমার সদস্যর উপর হামলা হয়েছে তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করবো। তার পর কি হয় দেখবো।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা খিলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত কুমার সরকার জানান, আমরা জানতে পেরেছি এখানে মারামারি হতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, কোন সমস্যা নেই।

 

সম্পর্কিত খবর