এ বছর চাঁদপুরে ১২ হেক্টর জমিতে পুষ্টিগুনে ভরপুর গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফল

শওকত আলী : সুষ্টির সেরা জীব মানবজাতীর জন্য খোদা প্রদত্ত বছরের একটি মৌসুমি ফলের মধ্যে অনেক ফলের মত (হুট বা বাঙ্গি) বাঙ্গিও একটি উৎকুষ্ট সুস্বাসু ও শরীরের জন্য উপকারী একটি ফল। এর চাষও কদর বিগত বছরের তুলনায় অনেক চাহিদা এখন মানুষের মাঝে।

এর নাম যাই হোক না’কেন বাঙ্গি একটি স্বাস্থ্যকর ফলও বটে। পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং অনেক উপকারী ফল এটি। হুট বা বাঙ্গি এক রকমের শষা জাতীয় ফল। তবে বাঙ্গি শষার চেয়ে বেশ বড় হয়। কাঁচা বাঙ্গি সবুজ হয়, পাকলে সেইটি হলুদ রঙের হয়ে যায়। এর বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরাকাট খাজযুক্ত এবং ভেতরে কাটলে দেখা মিলে ফাঁকা দেখা যায়।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া ও কালোচো দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের এবার ভাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে অনেক। এছাড়াও এবার বাঙ্গির চাষ হয়েছে জেলার হাইমচর উপজেলার একাধিক গ্রামে। সেখানেও হয়েছে বাম্পার ফলন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার ফলন ভাল ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। বাঙ্গি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বাঙ্গি চাষে এ বছর অনেক ঝুঁকেছে। তবে এ বছর ফলন ভাল ও বেশী হওয়ায় বাঙ্গির বাজার মূল্য বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম। যার ফলে এ বছর কৃষকরা দাম পাচ্ছেনা আশানুরুপ।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে গত বছর এ উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে (হুট বা বাঙ্গি) বাঙ্গি চাষ করা হয়। উপজেলার দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া, রাজারগাঁও ইউনিয়নের কির্তনখোলা, কালোচোঁ উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুরা গ্রামে দিগন্তজোড়া মাঠে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ, হুট বা বাঙ্গি দৃশ্যমান হয়ে আছে। এই সবুজের মাঝে থর থরে সাজানো আছে বড় বড় বাঙ্গির অপরুপ অবস্থান। দেখলে শুধু চোখ নয়, মনও জুড়িয়ে ও ভরে যায়।

এ সব গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে কৃষক বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে বাঙ্গি সংগ্রহ করে, কেহ আবার বাঙ্গি ক্ষেতের পরিচর্যা করতে দেখা যাচ্ছে।

কৃষকদের সাথে আলাপকালে বাঙ্গি চাষি আবদুল খালেক জানান, প্রায় কানি খানিক জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছে। এতে তার প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমান জমির বাঙ্গি সাড়ে ৪ লাখ টাকায় বিক্রী করেন তিনি। এবার তিনি ৪ হাজার গর্তে ১৬ হাজার চারা লাগিয়েছেন। এক্ষেত্রে একটি গর্তে ৬টি করে বাঙ্গি হলেও ৯৬ হাজার বাঙ্গি বিক্রীর আশা রয়েছে তার।

আরেক চাষীর স্ত্রী জোহরা খাতুন বলেন, এবার প্রায় ৩ একর জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রতি পিস বাঙ্গি পাইকারী দামে বড় হলে ৫০ টাকা আর ছোট হলে ১৫ টাকা আবার মাঝারী আকারের বাঙ্গি ২৫/৩০টাকায় বিক্রয় করা যাবে।

এ বিষয়ে বাঙ্গি কিনতে আসা হাজীগঞ্জের বেপারী আব্দুল লতিফ বলেন চরপাড়া অঞ্চলের ভাঙ্গি মানে অনেক ভাল। তাই তিনি এখানে ভাঙ্গি কিনতে আসেন।

পাইকার লতিফ বেপারী আরো জানান, তিনি কৃষকের ক্ষেত থেকে ৪০/৫০ টাকা দরে প্রতিটি ভাঙ্গি কিনেছেন। ক্ষেত থেকে এনে গাড়ীতে উঠানো এবং গাড়ী ভাড়া দিয়ে হাজীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পৌছাতে ভাঙ্গি প্রতি আরো প্রায় ৭/৮ টাকা খরচ রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষি ক্ষেতের মাটি বাঙ্গি চাষের উপযোগী ও উৎকৃষ্ট মাটি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। এ বছর আমাদেরর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।

আগামীতে আরো বেশি পরিমান জমিতে বাঙ্গি চাষের আশা করছি। প্রথমে বাঙ্গির দাম কম থাকলেও প্রচণ্ড গরম পড়ায় বাঙ্গির কদর বেড়েছে অনেকগুন।

তিনি আরো বলেন, বাঙ্গি উপকারী একটি মৌসুমি ফল। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। এতে খাদ্য উপাদান হিসাবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম প্র্রচুর পরিমানে রয়েছে। তাই গ্রীষ্মকালে এবং এ বছর রমজানে ইফতারিতে বাঙ্গি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হওয়ায় অনেক চাহিদা উপলব্দি করা গেছে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধা মন্দা,হজম শক্তিসহ অনেক রোগের প্রতিকার করে থাকে এ বাঙ্গি । বাঙ্গিতে দেহের ওজন কমাতে সহায়ক এবং ত্বকের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে ও ব্যাপক ভাবে সহায়ক একটি ফল বলে পরি সংখ্যানকারে পেয়েছি।

সম্পর্কিত খবর