হাইমচরের আরিফ হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামী গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুরের হাইমচরে পরকিয়াকে কেন্দ্র করে ভাড়াটিয়া লোকদের মাধ্যমে আপন ছেলে মো. আরিফ হোসেনকে (২৫) হত্যার ঘটনায় গত ২৩ আগস্ট মা খুকি বেগম ও আসামী মো. জয়নাল গাজীকে মৃত্যুদন্ড ও অপর দুই আসামী ইউছুফ মোল্লা ও মাহবুব মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আদালত। কিন্তু রায়ের সময় আসামীরা উপস্থিত ছিলেন না। এর মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী ইউছুফ মোল্লা ও মাহবুব মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) র্যাব-১১ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুইজন আসামী গ্রেফতারের তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে।

র্যব জানায়, গত ২৩ আগস্ট চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যায় জড়িত ৪ জনকে দন্ডাদেশ প্রদান করে। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে র্যাব ছায়া তদন্ড শুরু করে। এক পর্যায়ে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রতিতে, র্যাব উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর অভিযানে ৩১ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন মাওয়া এলাকা হতে মোঃ ইউসুফ মোল্লা (৩৬) গ্রেফতার করা হয় এবং একইদিনে ফরিদগঞ্জ থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়।

অপরদিকে গ্রেফতারকৃত আসামীর সুত্র ধরে র্যাব-১১ এর পৃথক আরেকটি অভিযানে ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুর এলাকা হতে মোঃ মাহবুব মোল্লা (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় তাদের অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।

এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামী এখনো পলাতক আছেন। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সাথে আসামী জয়নাল গাজীর পরকিয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এই বিষয়ে মা ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পাশবর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজি বাড়ীর আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তার (১৯) কে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউ এর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে জগড়া বিবাদ হত।

এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকিয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগিদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে পোছ মেরে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায় ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষনিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসে এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ওইদিনই আসমা শ্বাশুড়ী খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের আসামী করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

সম্পর্কিত খবর