চাঁদপুর খবর রির্পোট: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলার পাঁচটি আসন থেকে ৪৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) থেকে পাঁচজন, চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ-মতলব উত্তর) থেকে আটজন, চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) থেকে পাঁচজন, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) থেকে ১৬ জন এবং চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসন থেকে ১০ জন।
১৮ নভেম্বর (শনিবার) থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে এসব মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দিচ্ছেন। চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। তবে এর সঠিক তথ্য উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের কাছে নেই। অনেকেই আবার ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। তবে দিন শেষে দল যাকে নৌকা দেবে তার জন্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে আওয়ামী লীগ।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন পাঁচজন। তারা হলেন, বর্তমান এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শিবলু ও অবসরপ্রাপ্ত জজ আমিনুল ইসলাম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কচুয়া আসনে আওয়ামী লীগের যৌথ মনোনয়নপ্রাপ্ত আলহাজ মো. গোলাম হোসেন। এই আসনে ২০০৮ সাল থেকে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর টানা ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকার টিকিট দেবেন আমরা তাকে নির্বাচন করার জন্য কাজ করবো।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাতজন। মনোনয়ন ফরম উত্তোলনকারীরা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম,
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. নুরুল আমিন রুহুল, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম ইসফাক আহসান সিআইপি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ও ঢাকাস্থ চাঁদপুর আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুস,
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকিয়া সুলতানা শেফালি, মতলব উত্তর উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (এসি মিজান) ও রেল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির এবং নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. লোকমান হোসেন। তাদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লেয়াকত হোসেন জানান, এদের মধ্যে শেখ হাসিনা যাকে মনোনীত করে আমরা তাকেই গ্রহণ করবো।
মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুস বলেন, আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ৬ জন। এরা হলেন, চাঁদপুর-৩ সদর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবু নাঈম পাটোয়ারী দুলাল ও মৎস্যজীবীলীগ নেতা আলহাজ রেদোয়ান খান বোরহান।
এ আসনে আ.লীগের দুইজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। এই দুইজন হচ্ছেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২০০৮ সাল থেকে টানা ৩ বার সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রাড়িরচর গ্রামের বাসিন্দা। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নের সাংগঠনিক কমিটি তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় দলীয়ভাবে শক্ত অবস্থানে আছেন তিনি।
এদিকে ২০০১ সাল থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আসছেন সুজিত রায় নন্দী। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা। তিনি সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কুমুরুয়া গ্রামের বাসিন্দা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হলেও তিনি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রেখেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র বেশ কয়কেজন নেতাসহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ কর্মী সমর্থক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে প্রতি সপ্তাহে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দেওয়ান নাজিম বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২০০৮ সাল থেকে টানা ৩ বার সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। এসময়ে তিনি এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন। জনগণ আবারও তাকে চায়। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আবারও মনোনয়ন দেবেন। এ মন্ত্রীকে তারা ভোট দিয়ে আবারও নির্বাচিত করবেন।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৬ জন। তারা হলেন, সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ডা. হারুন অর-রশিদ সাগর,
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান, আওয়ামী লীগের কাতার শাখার সহ-সভাপতি সিআইপি জালাল আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সিনিয়র সদস্য মহিউদ্দিন মজুমদার খোকা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হারিছ হাসান সাগর, আওয়ামী লীগ নেতা আমির আজম রেজা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাসানুজ্জামান তারেক, আওয়ামী লীগ নেতা মুকবুল আহমেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. বদরুন নাহার ভূঁইয়া, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুন্নাহার অনি, হকার্স লীগ সাবেক নেতা লিয়াকত হোসেন রনি ও চিকিৎসক নেতা ডা.মোস্তফা হোসেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার বলেন, আমি দলের দুঃসময়ে কাজ করেছি। আমি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। তবে দল যাকে নৌকা দেবে তার জন্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১০ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মিন্টু।
এ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম উত্তোলনকারীরা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর অব.রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর জাহান মুক্তা, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মামুন আলম, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, জেলা আওয়ামী লীগে উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল মজুমদার, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগকৃত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাঈনুদ্দিন,
কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য সফিউল আলম ফিরোজ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী সেচ্ছা সেবক লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন এবং সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন।
শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, শাহরাস্তিতে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর অবসবপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের বিকল্প আর কেউ নেই। তিনি এ আসনের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আমরা আশা করি জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেবেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগকৃত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাঈনুদ্দিন জানান, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। আমার যথেষ্ট জনসমর্থন আছে। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আমার সঙ্গে আছেন। আমি বিশ্বাস করি, দলের মনোনয়ন পেলে সংসদ নির্বাচনেও আমি জয়লাভ করবো।
হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, দল যাকে মনোনীত করবে আমরা তাকে গ্রহণ করবো। কেউ দলের ঊর্ধ্বে নয়।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল জানান, জেলা আওয়ামী লীগ থেকে কতজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না। তারা দুইজনই মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা চাঁদপুর সদর আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। দুইজনই আশাবাদী যে নেত্রী দলীয় মনোনয়ন দেবেন।