চাঁদপুর ৩ সদর ও হাইমচর আসনে বইছে ভোটের হাওয়া

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী : চাঁদপুর- ৩ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি সদর ও হাইমচর উপজেলা নিয়ে গঠিত।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরীর পর এ আসনে বরাবরই বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলটির যুগ্ম সম্পাদক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আসনটি পুনঃরুদ্ধার করেন।

চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসন গঠিত হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত ছয়বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলোতে জয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই আসনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গত ছয়টি নির্বাচনে দুটি দলের প্রার্থীরা তিনবার করে সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জয়ী বিএনপির প্রার্থীদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলে ডা. দীপু মনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও অন্য দলের প্রার্থীদের হারিয়ে তিনি এমপি হয়ে হ্যাটট্রিক করেন। এদাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীনজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বর্তমান সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে পরাজিত করেন ডা. দীপু মনি। এবার যখন ব্যবধান বাড়ানোর পালা, তখন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে অনঢ় রয়েছে বিএনপির।

এদিকে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনোয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। তারা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, চাঁদপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারীর সুযোগ্য সন্তান, চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের দুই বারের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগ নেতা রেদওয়ান খান বোরহান ও আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য জাকির হোসেন মারুফ।

এ আসনে আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির বিপরীতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। চাঁদপুর-হাইমচর নির্বাচনী এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ২০০৮ সালে তিনি তৃণমূলের সর্বাধিক সমর্থন পেয়েও মনোনয়ন পাননি। এবার দলীয় নেতাকর্মীদের পূর্ণ সমর্থন ও জনমত তার পক্ষেই রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া সবমহলে ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার দুবারের মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপি নির্বাচনে এলে এ আসনে একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বৰ্তমান সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। নির্বাচনে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বদ্বী হবেন বলে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তিনি ইতোমধ্যে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মূল নেতৃত্বে তার অনুগত নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে বর্তমানে দলীয়ভাবে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করেছেন।

জাতীয় পার্টি থেকে অ্যাড. মহসীন খানের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে গণফোরাম থেকে চাঁদপুর জেলার সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, জামায়াত ইসলামী থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. শাহজাহান মিয়া এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি জয়নাল আবেদীন শেখ একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন বলে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে জানা গেছে।এদিকে জানা গেছে, চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামীলীগ নিবাচনে ব্যস্ত মাঠে রয়েছেন । আর বিএনপির আন্দোলনে মাঠে রয়েছেন ।

উল্লেখ্য, নানান কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা ইলিশের বাড়ী খ্যাত চাঁদপুর। ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী চাঁদপুর জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করে। এ আসনে সদর-হাইমচর উপজেলায় ২০ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। চাঁদপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১২ হাজার ৩২৬ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার- ২ লাখ ৪৬ হাজার ০৬৬জন (চাঁদপুর সদর ১, ৯৯, ৩১৩ জন ও হাইমচর ৪৬, ৭৫৩জন), পুরুষ ভোটার-২, ৬৬, ২৫৮ জন (চাঁদপুর সদর ২, ১৫, ২৪৪জন ও হাইমচর ৫১, ১৪ জন) আার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২জন। এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র- ১৫৭টি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডা. দীপু মনি নৌকা প্রতীকে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮১২ ভোটে বিজয়ী হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫০১ ভোট।

 

সম্পর্কিত খবর