সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী : পিবিআই মূলত ডাকাতি, খুন, দস্যূতা, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা, অগ্নি সংযোগ, সাইবার ক্রাইম ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইত্যাদি সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত করে থাকে।
বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন করতে অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাগুলো যেখানে হাল ছেড়ে দেয়, সেখান থেকেই কাজ শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
২০২২ সালের ২০ শে ডিসেম্বর পিবিআই চাঁদপুর জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে মোঃ মোস্তফা কামাল রাশেদ যোগদানের পর থেকে ৭ মাসে একাধিক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার করেছেন। তিনি নিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিশেষ টিম গঠন করে বহুসংখ্যক চাঞ্চল্যকর অপহরন মামলার ভিকটিম উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপহরন মামলার ভিকটিম উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার, এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বস্তুনিষ্ট তদারকীর মাধ্যমে অধিক সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করানো ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়াও মোস্তফা কামাল রাশেদ বিভিন্ন মামলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের অপহরন মামলার ভিকটিম দ্রততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ভিকটিম তড়িৎ গতিতে উদ্ধারের ফলে বিজ্ঞ আদালত সহ চাঁদপুর জেলার সর্ব মহলে পুলিশের ভুয়ষী প্রশংসা অর্জিত হয়।
বহুসংখ্যক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপহরন মামলার আসামী গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে বহু সংখ্যক আসামী গ্রেফতার এবং আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করাতে সক্ষম হন। যার প্রেক্ষিতে মামলার বাদী পক্ষের নিকট পিবিআই তথা পুলিশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়ন
তার বস্তুনিষ্ট তদারকীর মাধ্যমে সর্ম্পূন সাক্ষ্য প্রমান ভিত্তিক ১৭৭টি সিআর মামলা এবং ২৩টি জিআর মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্ত সমাপ্ত করাতে সক্ষম হন। যার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতে মামলার বাদী এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের অল্প সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রাপ্তীর পথ সুগম হয়। যার ফলে বিজ্ঞ আদালতে ,সাংবাদিক মহলে তথা সর্ব মহলে পিবিআই এবং সার্বিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি খুবই উজ্জল হয়। এ ক্ষেত্রে বলা সমীচীন উপরোক্ত কার্যক্রম সমূহের সাফল্যর নেপথ্যে পিবিআই পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তফা কামাল রাশেদের বিচক্ষনতা ,দূরদর্শিতা, যোগ্যতা সম্পন্ন এবং একনিষ্ঠ পরিশ্রম সম্পৃক্ত দায়িত্বশীল ভুমিকা সর্বমহলে প্রশংসা অর্জন করে। এর মধ্যে দিয়ে পিবিআই চাঁদপুর জেলার ভাবমূর্তি খুবই বৃদ্ধি পায়।
চাঁদপুর পিবিআই পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল রাশেদ বলেন, ‘পিবিআই হলো এমন একটি সংস্থা, যেখানে ইউনিট ইনচার্জ থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে ২৪ ঘণ্টা মামলা নিয়েই চিন্তা করতে হয়। আমরা একটি জিনিস নিশ্চিত করেছি যে, যে যেখানেই যাক, বাসায় কিংবা বাজারে, তাকে তার মামলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কারণ, কয়েকদিন পরপরই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ধনী কিংবা গরিব, শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, সব শ্রেণির মানুষের জন্য সমান গুরুত্ব দিয়েই মামলার তদন্ত করে পিবিআই। এ কারণে কয়েক বছর ধরে পিবিআইয়ের ওপর মামলা তদন্তের চাপ বেড়েই চলেছে। আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা আছে কি না তা জানি না। তবে আমাদের কাজটা হলো, যে তদন্তগুলো আমাদের কাছে আসে সেগুলোর মধ্যে ছোটখাটো বিষয়, জটিল খুন, চুরি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও জালিয়াতির মতো বিষয় থাকে। আমরা সব মামলা একই রকম গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি।
চাঁদপুর পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন পিবিআই’র গ্রেফতারের ক্ষমতা আছে। থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা জেলার পুলিশ সুপার এর মতো পিবিআই সকল ক্ষমতা ভোগ করে। কিন্তু গ্রেফতারের ক্ষেত্রে খুব বিচার-বিবেচনা করা হয়। আমাদের যত ক্ষমতাই থাকুক না কেন, যাকে গ্রেফতার করলে আমার কোনও কাজে আসবে না, তাকে আমরা গ্রেফতার করি না, জিজ্ঞাসাবাদ করে জিম্মানামা মুলে ছেড়ে দিই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার তদারক কর্মকর্তার অনুমতি ও পরামর্শ ছাড়া কোনও আসামিকে গ্রেফতার করেন না। এমনও হয়েছে যে, একজন লোক সন্দেহ ভাজন আসামি, কিন্তু তাকে ধরে কোনও তথ্য পাওয়া যাবে না, তাই আমরা তাকে ধরি না।’ আমরা ডিজিটালের পাশাপাশি এনালগ পদ্ধতিকেও গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাছাড়া ২৪ ঘণ্টা যদি আপনি তদন্ত নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে আপনার মাথায় একটা না একটা বুদ্ধি আসবেই। পিবিআইকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যে, কোনও মামলাই আর রহস্যাবৃত থাকবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের মূল কৌশল।’
উল্লেখ্য: মোস্তফা কামাল রাশেদ ২০১৫ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইবার ক্রাইম এন্ড ফরেনসিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা অর্জন করেন। এর স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি ইতালি, ভারতে, থাইল্যান্ডে তদন্ত বিষয়ক উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।