স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪ শ ৬৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে সরকার।
এমনকি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকেও দেয়া হচ্ছে ভাতা। খেতাব, শারীরিক অসামর্থ্যসহ নানা বিবেচনায় ভাতা এবং রেশন দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাধারণ শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে ।
চাঁদপুরে ৮ উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৪ হাজার ৪শ ৬৯ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। চাঁদপুরে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা একটি ।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে , চাঁদপুর সদরের ১৪টি ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন ৬৯৭ জন ,কচুয়ার ১২টি ইউনিয়নে ২৭০ জন, শাহরাস্তির ১০টি ইউনিয়নে ৬১৫ জন, হাজীগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নে ৭১৭ জন, মতলব দক্ষিণের ৬টি ইউনিয়নে ৩৪২ জন ,মতলব উত্তরের ১৫টি ইউনিয়নে ৭০৯ জন ,ফরিদগঞ্জের ১৬ টি ইউনিয়নে ৯৪৩ জন ও হাইমচরের ৬টি ইউনিয়নে ১৭৬ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ১২ হাজার টাকা করে মাসিক সম্মানী ভাতা পেয়েছেন।এর আগের অর্থবছর পর্যন্ত সম্মানী ভাতার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার টাকা । বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাচ্ছেন প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকাকরে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা দের সম্মানীভাতা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে বর্তমানে ২০ টাকায় উন্নীত করেন।
শুধু তাই নয় পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও বাড়িয়েছেন্। ্সম্মানী ভাতার পাশাপাশি সাধারণ, শহীদ ও যুদ্ধাহত এবং খেতাবপ্রাপ্ত এ তিন শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েক ধরনের ভাতা ও সম্মানী দেয়া হয়ে থাকে ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেশে ১ লাখ ৯১ হাজার ৫ শ ৩২ জন সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক সম্মানী ভাতা পেয়ে থাকেন বলে জানা যায়।
আর উৎসব ভাতা, সংবর্ধনাসহ মহান বিজয় দিবস ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পান ২ লাখ ৫ হাজার ১ শ ১৭ জন সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ ছাড়াও সম্মানী ভাতা পান ১১ হাজার ৯ শ ৯৮ জন শহীদ, যুদ্ধাহত ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মাসিক সম্মানী ভাতা পাওয়ার মধ্যে আরও রয়েছেন ৫ শ ৮৭ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মাসিক সম্মানী ভাতা একটু বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেন। ওই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন অ্যাকাউন্টে সরাসরি সম্মানী ভাতা পাঠানো কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন,‘ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর সরকারের সময় অবহেলায় থাকতে পারেন না।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মাসে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ৩০ হাজার, মৃত যুদ্ধাহত পরিবার ২৫ হাজার, ৭ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবার ৩৫ হাজার, বীর উত্তম খেতাবধারীরা ২৫ হাজার, বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্তরা ২০ হাজার এবং বীর প্রতীক খেতাবধারীরা ১৫ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন।
যাঁরা যুদ্ধ করেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কিছু করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তাই ’সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা সম্মানী ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করেন্ । ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়।
এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার ঘর নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের অ্যাকাউন্টে সরাসরি সম্মানী ভাতা পাঠানো কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘মুজিববর্ষের উপহার’ হিসেবে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের সাহায্যে ‘জিটুপি’ পদ্ধতিতে ভাতার প্রচলন করেছে। সরাসরিই তারা স্ব স্ব সেলফোনে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হন, তা হতে পারে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এক লাখ ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা মাসিক সম্মানী ভাতা পান। ২০১৪ সালের পর এ ভাতা তিনবারে বাড়িয়ে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা-২০১৬ অনুযায়ী, ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা দিচ্ছে সরকার। যাদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ ৩০ হাজার, বীর উত্তম ২৫ হাজার, বীর বিক্রম ২০ হাজার এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্তদের ১৫ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়।
শারীরিক অসামর্থ্য অনুযায়ী ৪টি ক্যাটাগরিতে মুক্তিযোদ্ধারা এ ভাতা পান।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পরিচয়পত্র দেয়া হয়। যা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নবায়ন করতে হয়। ওই পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারি যানবাহনে বিনা ভাড়ায় যাতায়তের করতে পারেন মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ সব রুটে বছরে একবার ও আন্তর্জাতিক রুটে বছরে দু’বার বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পান।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সরবরাহ করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। হুইলচেয়ারে চলাচলকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে একবার ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের ব্যবস্থা, একটি মোবাইল এবং সর্বোচ্চ এক হাজার ৯শ’ টাকা পর্যন্ত মোবাইল বিল দেয়া হয়।
এছাড়াও পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সড়ক ও মহাসড়কের টোল মওকুফ, ফেরিতে বিনা ভাড়ায় পারাপার, পর্যটন করপোরেশনের হোটেলে স্বপরিবারে দু’রাত এবং তিন দিন, ডাক বাংলোতে দু’দিন অবস্থানের সুবিধা দেয়া হয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের প্রতি সদস্য দৈনিক ১২৫ লিটার পানির বিল মওকুফ সুবিধা পান। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নিজস্ব বাড়ির ১৫ শত বর্গফুট পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স, দু বার্নার গ্যাসের বিল,দু’শ ইউনিট বিদ্যুৎ বিল মওকুফ সুবিধা পান।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন,‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। মাসিক ভাতার বাইরেও মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার ও সন্তানদের অনেক সুবিধা দিচ্ছে সরকার।
মুক্তিযোদ্ধারা ভাতার পাশাপাশি রেশন, ছেলে-মেয়ের শিক্ষা খরচ,উপবৃত্তি, চিকিৎসা খরচসহ বেশ কিছু সুবিধা পান।’