ভর মৌসুমেও ক্রেতার ক্রয় ক্ষয় ক্ষমতার বাইরে ইলিশ

শওকত আলী,চাঁদপুর॥ এখন চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনায় রুপালী ইলিশের পুরো ভর মৌসুম চলছে। দেশের রাজনৈতিক সংহিসতার কারনে জেলায় কারফিউ ও সাড়ডাউনের কারনে অনেকটা ক্রেতা শূর্নতার সৃষ্টির ফলে ইলিশের বাজার ছিল এলোমেলো। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাদের চালান বা পুঁজি ঠিক রাখতে সিন্ডিকেট ভেঙে নিজেদের ইচ্ছামতই ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এখানকার ব্যবসায়ীরা চাঁদপুর তথা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমদানীকৃত রুপালী ইলিশ বিগত দিনের মত চড়া দামে বিক্রি করতে না’পেরে অনেক কমদামে বিক্রি করেছে ।

এখন পরিস্থিতি অনেকটা সিথিল হওয়ায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার আমদানীকৃত ইলিশ ও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আমদানী থাকলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে ইলিশের বাজার আবারও ভর মৌসুমে সরগরম হয়ে উঠেছে। এতে করে সাধারন ক্রেতারা তাদের ইচ্ছা থাকলে ইলিশ ক্রয় করে ইরিশের স্বাদ গ্রহন করতে পারছেনা। ইলিশ এখন ক্রেতার ক্রয় ক্ষয় ক্ষমতার বা নাগালের বাইির থেকে যাচ্ছে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এই সময আসায় সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর মৎস্য আড়ৎ গুলো।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক বলেন, গত বছর ইলিশের মৌসুমের এই সময় প্রায় ৩ হাজার মণ ইলিশ এসেছে এ ঘাটে। কিন্তু এবার অনেক কম ইলিশ আমদানী। এখন প্রতিদিন স্থানীয় পদ্মা-মেঘনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে গড়ে দেড়শ থেকে ২২০ মণ ইলিশ আমদানী হচ্ছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে ইলিশ উৎপাদন কিভা্েব বাড়ানো যায়।

ব্যবায়ীরা জানান,এখন প্রতিদিন আড়াইশ’ থেকে প্রায় ৩০০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। তবে কারফিউর কারণে গত কয়েকদিন মাছঘাটে আসা ইলিশ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে পরিবহন সংকটে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায় হাঁক-ডাক দিয়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চলমান পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে গত কয়েকদিন ইলিশের আমদানি হলেও দেশের পরিবহন সংকটে অন্যান্য জেলাগুলোতে ইলিশ পাঠানো সম্ভব হয়নি এবং ব্যবসায়ীরাও আসতে পারেনি। কারফিউর কারণে অনেক পরিবহন মালিক তাদের গাড়ি ভাড়ায় চালাতে নারাজ।

চাঁদপুর মাছঘাটের ব্যবসায়ী দেলোযার জমাদার জানান, বুধবার ঘাটে প্রায় ৩০০ মণ ইলিশ আমদানী হয়েছে। এসব ইলিশ নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে আসে। পরিবহন চলাচলে ঠিক থাকলে কেনা-বেচা আরো বাড়বে।

ঘাটের আরেক ব্যবসায়ী ফারুক চোকদার বলেন, বুধবার ইলিশের বিভিন্ন সাইজের মধ্যে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এক কেজি ওজন ও এর বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।

ঘাটে মাছ ক্রয় করতে আসা ক্রেতা নারায়ন চন্দ্র দাস বলেন, ঘাটের কয়েকটা আড়ত ঘুরে দেখেছি, সব ইলিশেরই দাম বেশি। ইলিশের দাম সাধারন ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ।

হাজীগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা বাবলু ও কামরুজ্জামান বলেন, আমরা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের বাসিন্দা হলেও ইলিশের স্বাদ নিতে পাচ্ছি’না। কারণ কয়েকটি খুচরা দোকানে ইলিশ দেখে মনে হলো, আমাদের ইলিশ কেনার সাধ্য নেই। দামদর করছি যদি কপালে থাকে তবে ইলিশ কিনবো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বছর জুড়েই জেলেরা ইলিশ পেয়ে থাকে। এখন পুরো ভরা মৌসুম হলেও সামনে ইলিশের আরও বেশি ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ী ও জেলেদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যতদিন যাবে ততই ইলিশ আমদানী বাড়বে।

সম্পর্কিত খবর