তাপদাহে ফলন বিপর্যয়ে : চাঁদপুরে মধ্যবিত্তের হাতের নাগালের বাইরে মৌসুমী ফল লিচু

মহসিন হোসাইন : বাংলাদেশের অন্যতম লিচু উৎপাদনকারী একটি জেলা হলো পাবনা। সেখানে গত মে মাস থেকেই লিচু পাড়া শুরু হয়েছে। পাবনা- ঈশ্বরদী লিচুর জন্য বেশ খ্যাত বললেই চলে।

গতমাস থেকে লিচু বাজারে আসা শুরু হলেও লিচু বিক্রিতে তেমন লাভ করতে পারছেন না ব্যাবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এবার তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ডিগ্রি থাকায় লিচুর ফলন বিপর্যয়ে নেমেছে।

পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হ‌ওয়ায় ভালো ফলন হয়নি এবার। তাই দামেও গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত বছর প্রতি হাজার লিচু ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় কিনে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি করেন পাইকারি বিক্রেতারা। তবে এ বছর বাগান থেকেই লিচু কিনতে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা পড়ে যাচ্ছে, ফলে খুচরা বাজারে লিচুর দাম তিন হাজার টাকার উপরে পড়ে যাচ্ছে।

এদিকে, দাম বেশি হলেও বাজারে লিচুর চাহিদা রয়েছে বলে জানান পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, ১শ লিচু ৫শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর এতে করে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতের নাগালের বাইরে মৌসুমী ফল লিচু।

একদিকে তীব্র তাপদাহ, অনাবৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিপর্যয়ের কারণে উৎপাদন কম হ‌ওয়ায় মৌসুমী ফল লিচু বিক্রিতে হিমসিম খাচ্ছে বাজার ব্যাবসায়ীরা। অন্যদিকে গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনে খেতে হচ্ছে রসালো এই মিষ্টি ফল লিচু।

১শ লিচু পাঁচ শত টাকা হলে ১পিচ লিচু খেতে হচ্ছে ৫টাকা দিয়ে। এই হিসেব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্তরা লিচু কিনে খাওয়ায় হিমসিম খেতে হচ্ছে এবার। তবে, লিচুর দাম যতোই হোক না কেন, এর চাহিদা বেশ ভালোই রয়েছে বাজারে।

লিচুতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি। প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট খুব অল্প পরিমাণে থাকে। লিচুতে ফ্যাট নেই। রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। খনিজ উপাদানগুলো হলো ম্যাঙ্গানিজ আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, কপার ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার অবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

লিচুতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় এটি খেলে গরমে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হয়। গরমে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই পানি খাওয়ার পাশাপাশি লিচুর মতো জলীয় উপাদান সমৃদ্ধ ফল খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।

লিচুতে রয়েছে এসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তে শ্বেতকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, শরীরে বাইরের কোনো ক্ষতিকারক জীবাণু প্রবেশ করতে বাধা দেয়। লিচুতে লিচিট্যানিন নামক ভাইরাস বিরোধী উপাদান আছে, যা ভাইরাস ছড়াতে বাধা দেয়।

লিচু ডায়াটেরি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন ও কপার রয়েছে লিচুতে। এগুলো লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নয়ন করে। রক্ত সঞ্চালনের উন্নয়ন হলে রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

লিচুতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এসব মিনারেল হাড়কে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম শুষে নিতে। ফলে হাড় শক্ত ও সুস্থ থাকে। শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর সময় খাদ্যতালিকায় এ ফল পরিমাণমতো রাখা ভালো।

লিচুতে থাকা ফাইবার এবং পানি পেট ভরিয়ে রাখে। ফ্যাট না থাকা ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাদ্যআঁশ দেহের ভেতর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে। লিচুতে আছে ফ্ল্যাভানল নামক উপাদান, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। লিচুতে থাকা উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধে ও সহায়তা করে। লিচুর উপাদান ত্বকের বলিরেখা দূর করে, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, ত্বক উজ্জ্বল করে।

লিচুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি খেলে ধীরে ধীরে রক্তে সুগার প্রবেশ করে। তাই এ ফলটি ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করে সেই অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় লিচুর পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। যেমন সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ৪০ গ্রাম পরিমাণ লিচু খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে। অন্যথায় অতিরিক্ত লিচু খাওয়া হলে রোগী অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

পটাশিয়াম থাকায় লিচু কিডনি রোগীদের খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। তবে পটাশিয়াম লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকলে সপ্তাহে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

লিচু সকালে খালি পেটে, খাওয়ার পরেই এবং ঘুমাতে খাওয়ার সময় খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীরে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে।
লিচু একটি গরম ফল। গরম ফল হওয়াতে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়।

এ ছাড়া বেশি খাওয়ার ফলে পেট ব্যাথা, পেটের সমস্যা,অ্যাসিডিটি, বমি হতে পারে।
মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে। ফলে শ্বাসকষ্ট,মাথা ঘোরা,বমি ভাব,দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

একজন সুস্থ ব্যাক্তি দিনে ১০-১২টি লিচু খেতে পারেন। তবে একসঙ্গে না খেয়ে একটু বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো।

সম্পর্কিত খবর