চাঁদপুরে ৬১ হাজার ৪শত পশু প্রস্তুত : ভালো দামের আশায় দেশীয় খামারীরা

মহসিন হোসাইন: পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে চাঁদপুরে  কোরবানির পশু প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যেই ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার খামারিরা। তবে সরকারিভাবে চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ১৭ হাজার ৭৭টি পশু কম রয়েছে।

চাঁদপুর  জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানায়, এ বছর চাঁদপুর জেলায় কোরবানিযোগ্য ৬১হাজার ৪শত ৮৯টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অথচ জেলায় চাহিদা রয়েছে ৭৮হাজার ৫শত ৬৬টি পশু। সেখানে বর্তমানে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া মিলে কোরবানি পশু রয়েছে, ৬১হাজার ৪শত ৮৯টি। এক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় কম রয়েছে ১৭হাজার ৭৭টি পশু।

কোরবানীর জন্য প্রস্তুত থাকা ৬১হাজার ৪শত ৮৯টির মধ্যে গরু রয়েছে ৩৩হাজার ৮শত ৪৩টি, মহিষ ২২৬টি ও ছাগল ২৫হাজার ৮শত ৭৬টি এবং ভেড়া ১হাজার ৪শত ২টি রয়েছে।এছাড়াও অন্যান্য পশু রয়েছে ১৪২টি।

জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকা মোতাবেক মোট ১৫১টির মতো পশুর হাট থাকবে এ জেলায়। এছাড়াও কোরবানী ঈদ উপলক্ষে জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পশু হাটে তাদের টিম কাজ করবে। তবে, এক্ষেত্রে ২-৩টি ইউনিয়ন একসাথে মিলে ১জন ডাক্তার থাকবেন তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় যে পরিমান পশু রয়েছে তাতে কোরবানি ঈদের চাহিদা মেটাতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক।

জানা যায়, কোরবানি কে কেন্দ্র করে পশু মালিক, ব্যবসায়ী ও কোরবানিদাতাদের মধ্যে হিসেব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। সাপ্তাহিক হাট, পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, একটু কম দামের আশায় আগে থেকে অনেকেই অগ্রীম টাকা দিয়ে পশু বায়না করে রাখছেন। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি, পশু খাদ্য বৃদ্ধি ও উৎপাদনে দামের প্রভাব পড়বে গরুর হাটে।

ভারতীয় গরু আমদানি সম্পর্কে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, দেশে সরকারিভাবেই ইন্ডিয়ান গরু আমদানি করা নিষিদ্ধ আছে। ইন্ডিয়ান গরু না থাকলেও কোরবানি পশুর চাহিদা মেটাতে সমস্যা হবে না।

এছাড়াও অনলাইনে পশু ক্রয়- বিক্রয় নিয়ে তিনি বলেন, যারা মূলতঃ বড় খামারী তাদেরকেই বেশিরভাগ অনলাইনে পশু বিক্রি করতে হয়। তবে, চাইলেই ফেসবুক পেইজ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও পশু বিক্রি করা যাবে এতে কোনো ধরনের বাঁধা নেই। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে কোনো প্রকার সমস্যা হলে তার সমাধানের জন্য জেলা ভোক্তা অধিকার সব সময় পাশে আছে এবং কোনো ক্ষতির আশংকা নেই বলে তিনি জানান ।

এই পশুগুলো মূলত মানুষের বাসা বাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে। যা কোরবানিতে বিক্রির আশায়। তবে পশু খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়বে কোরবানির হাটে।

জেলাপ্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমানে রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে খাদ্য সংকটে সমস্যা হয়ে গেছে সারাবিশ্বে। পশুর মূলত প্রধান খাদ্য ভূট্টা ও গম। খাদ্য যথাসময়ে আমদানি না হলে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে করে পশুর দামের প্রভাব পড়ে ও মূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে করে যারা খামারী আছেন, তারা অধিক দাম দিয়ে খাদ্য কিনতে হয়। এতে খামারিদের‌ও কিছু করার থাকেনা। খামারীরা‌ও চায় কষ্ট করে পশু পালনের পর ভালো দাম পেতে। নয়তো তারাও পশু পালনে উৎসাহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন।

খামারি মোবারক বলেন, এবারও কোরবানির পশুর দাম চ‌ওড়া হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে পশু পালনকারীদের লাভের পরিমাণ কমার শঙ্কা রয়েছে। তারপরেও কেউ তো আর লোকসান দিয়ে পশু বিক্রি করবে না। কোরবানির হাট এখনও শুরু হয়নি। এখন পশু কম দামে পাওয়া গেলেও কোরবানির আগে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দামের আশা করছেন।

চাঁদপুর তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের বাবু নামের একজন খামারি বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার আরও বেশি পশু লালন পালন হয়েছে। কোরবানির ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগ থেকে বিক্রির চেষ্টা করব। যদি না হয় এক সপ্তাহ আগে হাটে তুলব। আশা করছি, এবার ঈদে ভালো দাম পাবো।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের কয়েকটি পশুর হাটের ইজারাদার বলেন, সপ্তাহে ২দিন হাট বসে। কুরবানির হাট শুরু হতে দেরি আছে। তবে কোরবানির পশু হাটে কেমন পশু উঠবে তা এখনি বলা সম্ভব নয়। ঈদের ১০ থেকে ১৫ আগে জমে উঠবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক জানান, চাঁদপুরে বিগত বছরের ন্যায় এবারও পশু ক্রয়ে ভালো দাম পাবেন খামারীরা। যেহেতু উৎপাদন খরচ বেশি, এবার দামও কিছুটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।

কোরবানি উপলক্ষে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক কুরবানি পশু ক্রয় বিক্রয় করার বিষয়ে বলেন, ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো গরু দেখে শুনে ক্রয় ও বিক্রয় করতে হবে। যে সকল খামারি ও ব্যবসায়ী বিক্রি করবেন, আপনারা অবশ্যই ভালো গরু বাজারে উঠাবেন। খোঁড়া ও অসুস্থ্য এবং রোগা গরু বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্পূর্ন সুস্থ্য গরু বাজারে তুলবেন।

এছাড়াও যারা পশু ক্রয় করতে যাবেন, অবশ্যই আপনারা ভালো , সুস্থ্য ও সাবলীল পশু দেখেশুনে ক্রয় করবেন। অসুস্থ্য বা রোগা ও খোঁড়া পশু ক্রয় করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

তিনি আরো জানান, এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে পুরো চাঁদপুর জেলায় পশুর হাটে তাদের ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করবে।

সম্পর্কিত খবর