মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীর প্রেসক্রিপসন ‘দ্রুত ঢাকা যান’

শামীম আহম্মেদ জয় : চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই যেন রোগী হয়ে আছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রটিতে জটিল-কঠিন রোগের কোনো চিকিৎসাই হয় না। সামান্য কাটাছেঁড়া কিংবা ব্যথায়ও রোগীদের একটিই প্রেসক্রিপশন দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।

তা হলো-দ্রুত ঢাকা যান। সর্দি-কাশির মতো গতানুগতিক রোগের সেবা পেতেও এখানে পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীতি হলেও চিকিৎসকসহ রেডিওলজিস্টের পদগুলো শূন্য থাকায় রোগ নির্ণয়ে এখানে কোনো ব্যবস্থা নেই। বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাফিও।

দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা, ডাক্তার-কর্মচারীসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনবল সংকট সব মিলিয়ে এই হাসপাতালটির সেবার মান দাঁড়িয়েছে গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিকের পর্যায়ে। এই হাসপাতালটিতে ছোটখাটো সমস্যা ছাড়া বড় রোগের কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী দেখামাত্রই পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সীমিত জনবল দিয়ে সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তারা।

তবে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে। তবে এমন চেষ্টার কথা বহুদিন ধরে বলা হলেও দৃশ্যত তার কোনো ছাপ নেই কোথাও। বিশেষ করে এটি চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্টের শূন্যতায় ভুগছে দীর্ঘদিন ধরে। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পরেও কোনো কনসালট্যান্টসহ টেকনোলজিস্টের পদগুলো শূন্য রয়েছে। ফলে চিকিৎসার সেবা সংকটে পড়ছে। এ ছাড়া জরুরি শূন্যপদের মধ্যে রয়েছে সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি ও চক্ষু), জুনিয়র

কনসালট্যান্টের (সার্জারি ও চক্ষু) মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এ ছাড়া রয়েছে ইএনটি, অ্যানেস্থেসিয়া, গাইনি, কার্ডিওলজি সিনিয়র কনসালট্যান্ট। প্যাথলজি ও রেডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্টের পদও ফাঁকা।

হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে মাঝে মধ্যে হাসপাতালে দেখা যায়। যার কারণে হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম বিভাগও অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় রোগীদের রোগ নির্ণয় ও সেবা প্রদানে সমস্যা প্রকট হয়েছে। হাসপাতালের একজন সিনিয়র চিকিৎসক জানান, এ হাসপাতালে এখন সার্জারি করা হয় না বললেই চলে। সার্জিক্যাল সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত জরুরি প্রতিটি বিভাগেই লোক সংকট। সাধারণ বুকে ব্যথা নিয়ে কেউ হাসপাতালে এলে তারও পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপায় নেই। ঝুঁকি না নিয়ে তাই চিকিৎসক অন্যত্র রেফার করে দেন। হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মূল ভবনের প্রধান ফটকের সামনে রোগীর ভিড়। অনেকে জানতে চাচ্ছেন কোথায় গিয়ে ডাক্তার দেখাবেন। তবে রোগীদের এই নির্দেশনাটুকু দেওয়ার মতোও কাউকে দেখা যায়নি সেখানে।

এখানে সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটের পীড়া ছাড়া জটিল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নানামুখী সংকটের কারণে চিকিৎসকরাও কোনো ঝুঁকি না নিয়ে রোগীদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন অন্য কোথাও, বিশেষ করে ঢাকা। ওই চিকিৎসক জানান, ডাক্তাররা ওষুধ লিখে দিলে সেগুলো রোগীদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় না চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই যেন রোগী হয়ে আছে।

হাসপাতালে কোনটা আছে কোনটা নেই, সেটা দেখে স্লিপ দেওয়ার কাজটাও অনেকে ঠিকমতো করেন না। এতে অনেক রোগী মনে করেন, হাসপাতালে এসে ওষুধ পাওয়া যায় না।

সম্পর্কিত খবর