দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনাল সম্পন্ন

পর্বটির নাম ছিলো জয়ধ্বনি, আর সেটি ছিলো সেমি-ফাইনাল। দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সেই জমজমাট পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় গতকাল শনিবার (১১ মে ২০২৪)।

সকাল ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত একটানা এ পর্বটি যুগপৎভাবে চলে চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের তিন তলাস্থ মিলনায়তনে এবং চাঁদপুর রোটারী ভবনের ডাঃ নুরুর রহমান কনফারেন্স হলে। এ প্রতিযোগিতায় সেমি-ফাইনালে পাঁচটি গ্রুপে চারটি করে ২০টি বিতর্ক দল অংশ নেয় এবং বিজয়ী হয় সেরা ১০টি দল, যারা আগামী ৮জুন ২০২৪ শনিবার ‘উল্লাস’ (ফাইনাল) পর্বে অংশ নেবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রুপে হাজীগঞ্জ সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফরিদগঞ্জের ইকরা মডেল একাডেমি, মাধ্যমিক (হাইস্কুল) গ্রুপে হাজীগঞ্জের বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চাঁদপুর সদরের বাবুরহাট হাইস্কুল এন্ড কলেজ, কলেজ গ্রুপে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, সংসদীয় গ্রুপে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ এবং ইংরেজি গ্রুপে চাঁদপুর জেলা সদরের মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সেমি-ফাইনালে বিজয়ী হয়ে ফাইনালে অবতীর্ণ হবার টিকেট পেয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ) ও চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির ব্যবস্থাপনায় পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের দ্বাদশ আয়োজন অর্থাৎ যুগপূর্তি গত ২০২০ সালে ১৫০টি দল নিয়ে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে তখন সেটি সম্ভব হয় নি। সে কারণে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুগপূর্তির আয়োজনটি শুরু হয় এবং যেটি প্রান্তিক, অভিযাত্রা, অগ্রযাত্রা, জয়যাত্রা (কোয়ার্টার ফাইনাল), জয়ধ্বনি (সেমি-ফাইনাল) পর্ব ধাপে ধাপে অতিক্রম করে চলতি ২০২৪ সালের জুনে উল্লাস (ফাইনাল) পর্বের মধ্য দিয়ে সফল সমাপ্তির দিকে গেলো।

গতকাল শনিবারের সেমি-ফাইনাল পর্বটি শেষে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনোয়ার হোসেন। সিকেডিএফ সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক কাজী শাহাদাতের সভাপ্রধানে এবং চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক ও চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া।

সেমি-ফাইনালে প্রধান অতিথি জনাব মোঃ মনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন এবং এর রেশ ধরে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি এ আয়োজনটি দেখে ভীষণ অভিভূত, যেটি জাতীয় মানের। এতো বড় পরিসরে দীর্ঘদিন ধরে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার উপর ‘ইত্যাদি’তে ফিচার প্রচারিত হওয়ার যোগ্য। চাঁদপুরের মতো এতো বুদ্ধিবৃত্তিক, এতো মনস্তাত্ত্বিক চর্চা তিনি আর কোথাও দেখেননি এবং তিন নদীর মিলনস্থলের কারণে এখানে মানুষের সংস্কৃতি চর্চা অত্যন্ত বেগবান বলে মন্তব্য করেন।

তিনি তাঁর ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, যখনই আমার কোনো বুদ্ধিদীপ্ত বন্ধুর বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করেছি, তখনই জেনেছি তার বাড়ি চাঁদপুর। তিনি খুদে বিতার্কিকদের কৃতিত্বে মুগ্ধ হয়ে বলেন, আমার কাছে যারা বিজয়ী হয়েছে বা এতোদূর পর্যন্ত এসেছে তাদের চেয়ে যারা উপজেলা লেভেলে প্রতিযোগিতা করে এখানে আসতে পারেনি, তাদের মূল্য অনেক বেশি। কেননা তারা সেই ব্যর্থতা হতে শিক্ষা নিয়ে জীবনে সফলতাকে জয় করবে। তিনি ভালোভাবে কথা বলতে পারা এবং নিজের অভিমত প্রকাশ করতে পারার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, যারা সরকারি চাকুরিতে আসে তাদের বিতর্ক বিষয়ে দক্ষতা থাকাটা খুবই জরুরি। বিতর্কের সাথে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যোগসূত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, তা গঠন করতে হলে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন দরকার আর বিতর্ক শিল্পের মাধ্যমে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটো উপাদান স্মার্ট সিটিজেন এবং স্মার্ট সোসাইটি গঠন করতে সক্ষম হবো। তিনি আট উপজেলার সেরা বিতার্কিক ও বিতর্ক দলের জন্যে প্রণোদনা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সেমি-ফাইনালের ১০টি বিতর্কে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক রাধেশ্যাম কুরী, অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম, সামীম আহমেদ খান, এএইচএম আহসান উল্লাহ, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী, রাজন চন্দ্র দে, মাসুদুর রহমান, মোঃ হানিফ, সৈকত অধিকারী, সাইফুল ইসলাম, রাসেল হাসান, মুক্তা পীযূষ, আনাছ আল জায়েদ প্রমুখ। মডারেটর ছিলেন মোঃ আবু সালেহ, শামীম হাসান ও কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন।

গতকালকের সেমি-ফাইনালে পাঁচটি গ্রুপে সর্বোচ্চ নাম্বারপ্রাপ্ত তিনটি বিতর্ক দল হচ্ছে : হাজীগঞ্জের বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (২৭৫), ফরিদগঞ্জের ইকরা মডেল একাডেমি (২৭৪.৫) ও হাজীগঞ্জ সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় (২৭৪)। সেরা বক্তাগণ হচ্ছে : প্রাথমিকে সায়মা হোসেন সারা ও মাহবুবা আক্তার মাহেরা, মাধ্যমিকে ইসরাত জাহান ইফা ও রিউনা তাহরিন, কলেজে মোঃ সৌরভ হাসান ও উম্মে হাবিবা মুমু, ইংরেজিতে প্রখর পীযূষ বড়ুয়া ও সায়রা ইসলাম এবং সংসদীয় ধারায় মোসাম্মৎ অবণী খন্দকার ও মুনিরা আক্তার পল্লবী।

সম্পর্কিত খবর