সমির ভট্টাচার্য্যঃ মতলব দক্ষিণ উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে খাদিজা আক্তার ( মিম) (২২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। গত বুধবার ঈদুল ফিতরের দিন সকালে উপজেলার নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের বকচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার হাসপাতালে মারা যান ওই গৃহবধূ। এ ঘটনায় গত রোববার সকালে ওই গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে গৃহবধূর স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূর শাশুড়ি জাহেদা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে।
খাদিজা আক্তার মিমের পৈতৃক বাড়ি উপজেলার বকচর গ্রামে। ওই গ্রামের খোকন তালুকদারের মেয়ে তিনি। অভিযুক্ত ইব্রাহিম প্রধানীয়া তাঁর স্বামী। ইব্রাহিমের বাড়িও একই গ্রামে। ইব্রাহিম ওই গ্রামের মোতালেব প্রধানীয়ার ছেলে। বিদেশ থাকার পর সম্প্রতি ইব্রাহিম দেশে ফেরেন। নিহত খাদিজাকে বিয়ে করার আগেও ইব্রাহিম আরও দুটি বিয়ে করেছিলেন। সেই বিয়ে টেকেনি। খাদিজা তাঁর তৃতীয় স্ত্রী। ইব্রাহিম ও খাদিজা দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। খাদিজা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
পুুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী ও শাশুড়ি খাদিজাকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন। গত মঙ্গলবারও পারিবারিক কলহের জেরে খাদিজাকে মারধর করেন তাঁর স্বামী ইব্রাহিম প্রধানীয়া। গত বুধবার ঈদুল ফিতরের দিন সকালে স্বামীর বাড়িতে খাদিজার সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ির ঝগড়া বাঁধে।
একপর্যায়ে খাদিজার গায়ে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি কেরোসিন ঢেলে দেন। এরপর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তাঁর সমস্ত শরীর দগ্ধ হয়। এ সময় তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গায়ের আগুন নেভান এবং খাদিজার বাবা-মাকে মুঠোফোনে খবর দেন। এ সময় তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
সূত্রটি আরও জানায়, গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় খাদিজাকে স্বজনেরা প্রথমে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিন (বুধবার) তাঁকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মারা যান ওই গৃহবধূ।
গৃহবধূটির বাবা খোকন তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর মেয়েকে নানা ভাবে নির্যাতন করতেন (খাদিজা) স্বামী ও শাশুড়ি। শেষ পর্যন্ত গায়ে আগুন লাগিয়ে তাঁর মেয়েকে মেরেই ফেলা হলো। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মেয়ের স্বামী ও শাশুড়ির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
ওই গৃহবধূর স্বামী ইব্রাহিম প্রধানীয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। এ ব্যাপারে মতলব দক্ষিণ থানার উপপরিদর্শক (এস আই) এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যাকান্ড। পারিবারিক কলহের জেরে এটি ঘটেছে।
এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে গৃহবধূর স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে আজ সকালে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার আসামি জাহেদা খাতুনকে আজ সকালে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।