চাঁদপুরে মসজিদের ইমাম আরিফের বিরুদ্ধে ৬০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ!

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুরে প্লট ব্যবসা ও বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অর্থ হাতানোর অভিযোগে মোঃ আরিফ হোসেন (শাহাদাত কাজী) নামে এক মসজিদের ইমামকে আটক করেছে ভুক্তভোগীরা।

গত বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে আটক করে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মোঃ আরিফ হোসেন ও তার পিতা মোঃ আবুল হোসেন বেপারীকে বিবাদী করে একটি এজাহার দায়ের করেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কেতুয়া পাটওয়ারী বাড়ির মৃত আব্দুর রশিদ পাটওয়ারীর ছেলে ভুক্তভোগী মোঃ আলী আকবর পাটওয়ারী।

থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কেতুয়া দোরে আলী পাটোয়ারী বাড়ী জামে মসজিদে ২০১২ সাল হতে ইমামতি করে আসছেন হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বেপারী বাড়ির আবুল হোসেন বেপারীর ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন (শাহাদাত কাজী)। দীর্ঘদিন যাবত মসজিদের ইমাম থাকা অবস্থায় তার সাথে ভুক্তভোগী আলী আকবর পাটওয়ারী ও এলাকার বিভিন্ন মানুষের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। উক্ত সু-সম্পর্কের জের ধরে ১নং বিবাদি আলী আকবের নিকট প্লট ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয়। সরল বিশ্বাসে সে প্রস্তাবে রাজি হয়ে গত ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী দুপুর ৩টায় এবং পরবর্তী বিভিন্ন তারিখে উক্ত মসজিদের হুজরাখানায় তাকে সর্বমোট ৪৩ লক্ষ টাকা প্রদান করেন।

পরবর্তীতে টাকা নিয়ে আলী আকবর পাটওয়ারীকে প্লট বুঝিয়ে দিবে দিচ্ছি করে ২নং আসামী তার পিতা আবুল হোসেন বেপারীর প্ররোচনায় ঘুরাইতে থাকে। একপর্যায়ে ইমাম আরিফ হোসেন অত্র এলাকা হতে পালিয়ে আত্মগোপন করে। একপর্যায়ে স্থানীয়

লোকজনের সাথে আলোচনা করে জানা যায় যে, মসজিদের ইমাম মোঃ আরিফ হোসেন কেতুয়া এলাকার মৃত সৈয়দ আহাম্মেদ খানের ছেলে মতিউর রহমান খান কামালকে সৌদি আরব নেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা গ্রহন করে। বিবাদীদ্বয় টাকা গ্রহন করার পর হইতে বিবাদী তাহাকে সৌদি আরব না পাঠিয়ে বিভিন্ন ভাবে সময় প্রদান করে বিলম্ব করে। এছাড়াও একই এলাকার মোঃ নুরুল ইসলামের ছেলে গিয়াস উদ্দিন রাজনকে আমেরিকা

পাঠানোর কথা বলে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় এবং মৃত শাহজাহান পাটোয়ারীর ছেলে পিএম সাইদুর রহমান কে কানাডা নেওয়ার কথা বলে

তাহার কাছ থেকেও ১০ লাখ টাকা নেয়।

ইমাম মোঃ আরিফ হোসেন ও তার পিতা আবুল হোসেন বেপারী উক্ত এলাকার বিভিন্ন লোকজনের নিকট হইতে সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে সর্বমোট ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপন করে থাকে।

পরবর্তীতে গত বুধবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরে তাকে দেখতে পেয়ে আটক করে কেতুয়া এলাকায় নিয়ে এসে স্থানীয়রা সহ বসে বিষয়টি মিমাংসা করতে ব্যার্থ হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় খবর দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। শুক্রবার (২৯ মার্চ) ভুক্তভোগী আলী আকবর পাটওয়ারী বাদী হয়ে থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে উভয় আসামীকে আদালতে প্রেরণ করেন। আদালত ২নং আসামী আবুল হোসেন বেপারীকে অস্থায়ী জামিন দিয়ে ১নং আসামী মোঃ আরিফ হোসেনকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

মামলার বাদী ও উক্ত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী আলী আকবর পাটওয়ারী বলেন, তিনি হাজীগঞ্জ কাজী বাড়ির বাসিন্দা শাহাদাত কাজী নামে পরিচয় দিয়ে আমাদের মসজিদে ইমামতি করতেন। দীর্ঘদিন যাবত চাকরির সুবাদে আমাদের এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৬০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। ভুয়া পরিচয় দেয়ার কারনে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় গত বুধবার তাকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখতে পেয়ে আটক করে নিয়ে আসি। পরে বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়। তারপরও স্থানীয়রা বসে বিষয়টি মিমাংসা করতে চেষ্টা করি। পরিশেষে কোন উপায় না পেয়ে সে সহ তার বাবার বিরুদ্ধে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করি। পরে আদালতের মাধ্যমে ১নং আসামী আরিফ হোসেনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এবং তার বাবা ২নং আসামী আবুল হোসেন বেপারী অসুস্থ জনিত কারনে অস্থায়ী জামিন পান।

মামলার ১নং আসামী মোঃ আরিফ হোসেন (শাহাদাত কাজী) জেলহাজতে থাকায় তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বাদী পক্ষের দেয়া বিবাদীদের পরিবারের 018—–392 এই নম্বরে একাধিকবার কল দেয়ার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর সদর মডেল থানার সাব-ইন্সফেক্টর আবদুছ ছামাদ আজাদ বলেন, আসামী আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে উক্ত এলাকার মসজিদে দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৬ সালে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি এজাহার দায়েরের পর আমরা আসামীদের আদালতে প্রেরণ করি। তবে মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত করার পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

 

(১ম পৃষ্ঠার ২কলাম )

ক্যাপশনঃ শাহমাহমুদপুরের কেতুয়ায় বিভিন্ন প্রলোভনে ৬০ লক্ষাধিক টাকার আত্মসাৎ মামলায় মসজিদের ইমাম ও এজাহারের কপি। ছবিঃ দৈনিক চাঁদপুর খবর

 

সম্পর্কিত খবর