নতুন ভূমি আইনে মতলব দক্ষিণে মামলা : তদন্তে পিবিআই

স্টাফ রিপোর্টার : ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ । এটি একটি ফৌযদারি আইন। এই আইনে খুব দ্রুত সময়ে জমি সংক্রান্ত মামলা শেষ করতে বলা হয়েছে। “এই আইনের ৮ ধারা (৪) উপধারা (১) এর অধীন কোনো আবেদন প্রাপ্তির পর হইতে তিন মাসের মধ্যে উহার নিষ্পত্তি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, দখল পুরুদ্ধার করিতে হইবে এবং কোনো কর্মকর্তা বা কতৃপক্ষ উহাতে অসহযোগিতা বা অবহেলা করিলে তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা যাইবে।”

উক্ত আইনের ধারা (১৬) তে বলা হয়েছে ” অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনার দন্ড-। _ যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনে বর্নিত কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা প্রদান করেন তাহা হইলে উক্তরুপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি প্রকৃত অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ দন্ডে দন্ডিত হইবেন।”

অভিযোগ প্রতিবেশীরা সম্পত্তি দখল করে বিল্ডিং নির্মাণ করছে। প্রতিকার না মেলায় সর্বশেষ ভুমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর ৪/১ (ক), ৭/(১,২), ৮, ১০ ধারায় ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ মামলা করেন ভুক্তভোগী। আদালত তদন্তের জন্যে পিবি আই কে নির্দেশ দেয় মামলাটি। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পিবি আই সরেজমিনে তদন্ত করতে যায় ঘটনাস্থল।

জানা যায়, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বারোইগাও গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মো. হাবিবুর রহমানের প্রতিবেশীরা স্থানীয় কারো কোন কথা তোয়াক্কা না করায় জমি ফিরে পেতে বাধ্য হয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী, ১৪৫ ধারায় মামলা করেছেন গত ৭ জুন ২০২৩ । তবে গত ২২ জুন ২০২৩ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও অমান্য করে প্রতিপক্ষ বিবাদিরা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হলেন, পাশের বাড়ির তাজুল পাটোয়ারী (৪২) ও তার স্ত্রী জেসমিন (৩৫)।

আরো জানা যায়, তফছিল নালিশী ভূমি ও চৌহুদ্দি জেলা চাঁদপুর উপজেলা মতলব দক্ষিণ এলাকাধীন সাঊেশ ১৮৯ হালে ২০৭নং বারৈগাঁও মৌজার সি.এস ১৪ এস.এ ৮নং খতিয়ান হইতে সৃজিত বি.এস ৭০২ দাগে খতিয়ানভুক্ত সাবেক ১২১১/১৬৭৭ দাগের হালে ১৪৩৫ দাগে মোঃ .২৬ একর ভূমির অন্দরে .০০৫০ একর ভূমি। যাহার উত্তরে-প্রার্থী নিজ, দক্ষিণে-তাজু পাটোয়ারী, পূর্বে-প্রার্থী নিজ, পশ্চিমে-প্রার্থী নিজ উল্লেখিত জমি জোর পূবক দখলে পায়তারা করছেন বিবাদী পক্ষরা।

ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান একজন কৃষি উদ্যোক্তা, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কেঁচোসার উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ করেন। এর সুবাধে তিনি ঢাকার সাভারে তার নিজ খামারে অবস্থান করেন। প্রতিপক্ষ এই সুযোগ ব্যবহার করে বারবার বাধা দেওয়া স্বত্ত্বেও তারা উল্লেখিত জায়গায় এসে তাদের বিল্ডিং এর কাজ করে হাবিবুর রহমানের পৈত্রিক বসতভিটার ৬ ফিট ভেতরে এসে ৬.৩০ ফিট জায়গা বেদখল করার চেষ্টা করেন।

যদিও বিবাদিরা কাজ শুরুর সাথে সাথে তাকে তাদের জায়গায় বিল্ডিং করতে বলা হলে তারা কোন তোয়াক্কা না করে হাবিবুর রহমানের বিল্ডিং এর দেওয়াল ঘেষে তাদের বিল্ডিং-এর কাজ শুরু করেন। এতে দুই ভবনের মাঝে কোন খালি জায়গা না থাকায় ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সবশেষে দুই পক্ষের সার্ভেয়ার দ্বারা সীমানা নির্ধারণ করার তারিখ চুড়ান্ত করা হলে নির্ধারিত তারিখের আগের দিন শুক্রবার তারা ছাদ ঢালাই করে।

পরে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। পরে তফসিলভূক্ত নালিশী ভূমিতে শান্তি-শৃংখলা ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদালত আদেশ প্রদান করে। সেখানে আদালতের আদেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান গত প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর আগেই তার বাড়ির কাজ শুরু করে। তবে বাড়িতে না থাকায় তিনি বাড়ির কাজ এখনো শেষ করেননি। অপরদিকে আসামীগন বাদীর বিল্ডিং এর তিনটি (৩) পিলারের বেইজের উপর আসামীগন বেইজ ঢালাই করেন, যা স্থাপনাটিকে মারাতত্মক ঝুকিতে ফেলেছে।

এবং বাদীর বিল্ডিং এর দেয়াল ঘেষে দুটি জানালা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে তাদের বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন। এতে দুই ঘরের মাঝে কোন প্রকার আলো-বাতাস পৌছাও কোন সুযোগ নেই। যা নিয়ে কাজের শুরু থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে জটিলতা শুরু হয়। যদিও কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান কাজ শুরু প্রথম থেকেই সীমানা নিধারণের জন্য প্রতিপক্ষকে তাগাদা দেন। কিন্তু তারা কোন কথার তোয়াক্কা না করে এবং ভুক্তভোগী ঢাকায় থাকার সুবাধে তাদের কাজ সম্পন্ন করেন।

এ বিষয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান বলেন, সমস্যা সমাধানে দুই পক্ষের সার্ভেয়ার তিন দিন যাবৎ আইডিল স্টেশন থেকে মেপে সীমানা নির্ধারণ করেন। এই সীমানা নির্ধারণে দুই পক্ষের অনাপত্তি স্বাক্ষর, সার্ভেয়ারগণের স্বাক্ষর, উপস্থিত স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষর রয়েছে।

কিন্তু আমি আমার জায়গায় বুঝিয়া না পাওয়ায় গত ৭ জুন ২০২৩ আদালতের আশ্রয় নেই। আদালতের আদেশের ফৌ:কা:বি: ১৪৫ ধারার পক্ষে মতলব দক্ষিণ থানা ৮ জুন ২০২৩ স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নোটিশ জারি করে। কিন্তু প্রতিপক্ষ আদালতের আইন অমান্য করে পুনরায় গত ২২ জুন কাজ চালিয়ে যায়। যেহেতু আমার পৈতৃক বসতভিটা সিএস,এসএ, বিএস মূলে আমিই মালিক এবং দুই পক্ষের সার্ভেয়ার দ্বারা অনাপত্তি স্বাক্ষর রয়েছে। এমতাবস্থায় আমি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমার অধিকার চাই। আমি আশা করি সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাছাড়া তারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুনরায় ভবনের কাজ চালু করা আদালত অবমাননা শামিল বলে আমি মনে করি।

জমি দখল বিষয়ে তাজু পাটোয়ারী বলেন, আমি প্রতিবেশী জমি দখল করি নাই। আমি আমার পৈত্রিক জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমার সাথে প্রতিবেশীর কোন বিবাদ নেই। আমার প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান তিনি আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছেন। যা আদালতে চলমান আছে। বাড়ির কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে আইনি নোটিশের জবাবে বলেন আমি বিল্ডিং এর ছাদ ঢালাই দেওয়ার ১৫ দিন পর নোটিশ পাই। এখন মামলা আদালতে আছে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তাই মেনে নেব।

যখন আসামীগন ১৪৫ ধারা অমান্য করে নির্মান কাজ চালিয়েছিলেন তখন সাংবাদিক সরেজমিনে গিয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রতিবেশী তাজু পাটওয়ারীর স্ত্রী জেসমিন বলেন, আমরা বাড়ির কাজ শুরুর আগে সার্ভেয়ার দ্বারা সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা বলেছি আমরা তাদের যতটুকু জায়গা আমাদের দখলে রয়েছে সেই পরিমান জায়গা আমরা অন্য স্থান দিয়ে তাদের বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু তাতে তারা রাজি হচ্ছে না।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জেসমিন বলেছিলেন, আমরা রাজমিস্ত্রির কাছ থেকে সরঞ্জাম ভাড়া এনে ছাদের কাজ শেষ করি। তবে ভাড়া করা এসব সরঞ্জাম ফিরিয়ে দেয়ার আগেই আদালতের নিষেধাজ্ঞা আসে।

মামলার বিষয়ে বর্তমান পিবিআই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলক বরুয়া বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন কাগজপত্র যাচাই চলছে। মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় থাকায় কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

সম্পর্কিত খবর