চাঁদপুরে বাজার পরিস্থিতি ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক মতবিনিময়

স্টাফ রিপোটার : কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সদা নিয়োজিত। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব চাঁদপুরের আয়োজনে বাজার পরিস্থিতি ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক মত বিনিময় সভা ২৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব চাঁদপুরের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এ মুহূর্তে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভেজাল রুখতে হলে উৎপাদক-ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা সবার সচেতনতার বিকল্প নেই। এছাড়াও আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকলের সহযোগিতার পাশাপাশি নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

তিনি বলেন,আমাদের সবার পরিশ্রমী হতে হবে।তাহলে সকলের পরিশ্রমে দেশের অনেক কল্যানকর কাজ হবে। আমার সরকারি বাসভবনে আমি কিছু আলু চাষ করেছিলাম তাতে প্রায় ৭০ কেজি আলুর ফলন হয়েছে। এছাড়াও আমি শীতকালীন সবজির চাষ করেছি। এতে করে আমি কিছু টাটকা শাকসবজি খেতে পেরেছি। প্রত্যেকে যদি যার যতটুকু মাটি রয়েছে তাতে কিছু ফলন ফলাই বা ফল গাছ লাগাই তাহলে নিজের খাবারের অনেক কিছু আমরা টাটকা পেতে পারি। তাতে করে বাজারের উপরও চাপ কমবে বলে আমি মনে করি।

ডিসি আরও বলেন, জেলা মৎস্য অফিসের সামনে একটি পুকুর রয়েছে তা বেশ নোংরা। আমি মৎস্য কর্মকর্তাকে বেশ;কয়েকবার বলেছি তা পরিষ্কান করে কিছু মাছ ফেলে দেন তাতে পুকুরটি ভাল থাকবে, আপনি না খেলেও অন্যরা খেলেও তাতে করে সমাজের উপকার হবে। আমাদের চার পাশে অনেক আবর্জনাময় ডোবা বা পুকুর রয়েছে তা যদি আমরা পরিষ্কার করে কিছু মাছের পোনা ফেলে দেই তাতে খাদ্যেরও যোগান হবে অন্যদিকে পরিবেশের ভারস্ম্য রক্ষা হবে।

জেলা প্রশাসক শিশুদের মুখরচক খাবারের প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আমাদের শিশুদের দোকানের চটকদার মুখরোচক খাবার খাইয়ে থাকি। বিশেষ করে চিকেনের গ্রীল, এটা যে প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় তাতে করে এ খাবারের মধ্য দেহে ক্যান্সার রোগের বাসা বাধতে পারে। গ্রীলসহ ফাস্টফুড খাবার থেকে আমাদের শিশুদের দূরে রাখতে পারলে শিশুরা অনেক মেধা সম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মতো হয়ে গড়ে উঠবে।

পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য পণ্যের বিষয়ে ডিসি বলেন, আরব আমিরাতে ১০ হাজার পণ্যের দাম কমিয়েছে রমজান উপলক্ষে। তাদের তেল ছাড়া কিছুই হয়না, সবই কিনতে হয়। তারপরও তারা পন্যের দাম কমিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশে হচ্ছে তার উল্টো। যারা জাহাজ তৈরি করে তারা আবার মুড়িও বিক্রী করছেন। বড় কোম্পানিগুলো আজ ছোট ছোট নিত্য পন্য প্যাকেটজাত করে বাজার দখল করেছে। তাতে করে ছোট ছোট ক্ষুদ্র শিল্প মালিকরা সমস্যায় পড়েছে। রমজান আসছে তাই খাবারের প্রতি আমাদের নজর রাখতে হবে। কোনভাবেই যেন আমার রং মিশানো খাবার বিক্রি বা পরিবেশন না করি সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

সেবা পেতে হলে সরকারি হাসপাতালে আসতে হবে। আমরা সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ছুটে যাই। গতকালও ফ্যামিলি কেয়ার নামে একটি হাসপাতালকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাদের কোন ব্লাড ব্যাংক নেই কিন্তু তারা ফ্রিজে রক্ত স্টোর করে তা রোগীদের দিচ্ছে। তাদের অপারেশন থিয়েটার নোংরা পরিবেশ। সচেতনতা বৃদ্ধী না করতে পারলে আমাদের এত মতবিনিময় সভা করে লাভ নেই। আমি একজন সাধারণ ক্রেতা তাহলে আমি কি করবো। সচেতনতার সাথে সাথে সামজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এণ্ড অপর্স) রাশেদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, পিপি অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী,চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি রহিম বাদশা,চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, সনাক সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া।

জেলা ক্যাবের ব্যাংকার মুজিবুর রহমান ও মোঃবিপ্লব সরকারের যৌথ সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, ভোক্তা অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন রুবেল, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রিয়াদ ফেরদৌস, সাধারন সম্পাদক কাদের পলাশ, বিএসটিআই কুমিল্লার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম শাকিল, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাবুল, হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আখন্দ, চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পরেশ মালাকার, সাধারন সম্পাদক নাজমুল আলম পাটোয়ারী, জনতা ফুডের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

সবার শুরুতে কোরআন তেলোয়াত করেন ক্যাব সাংগঠনিক সম্পাদক সাঁতারু ছানাউল্যাহ খান। গীতাপাঠ করেন ক্যাব কোষাধক্ষ গোপাল সাহা।

সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সামনে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ উৎসব পবিত্র মাহে রমজান। রমজানকে সামনে রেখে বাজার পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রনে আনা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এই মতবিনিময় সভা। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফিতি এত বেশি হতে পারে না। অধিক মুনাফার জন্য পণ্য মজুদ করে রাখা যাবে না। বাজার পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে চাঁদপুরে প্রশাসনের সকল কার্যক্রমে ক্যাব চাঁদপুর সহায়তা করবে।

উপস্থিত ছিলেন গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দীন,চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, বিসিডিএস সহ সভাপতি সুভাষ সাহা, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শ্যাম প্রসাদ চাকমা, খাদ্য পরিদর্শক নাছির উদ্দীন, রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লালু, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মজিবুর রহমান আখন্দ, পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপ পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান,

জেলা স্যানেটরী ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম, জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান রুপম,জেলা ক্যাব সহ-সভাপতি সেলিম পাটোয়ারী, সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল ফারুক আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন,বিপ্লব চক্রবর্তী, আসমাসহ আরো অনেকে।

সম্পর্কিত খবর