![](https://chandpurkhobor.com/wp-content/uploads/2024/02/kisi-jomi.jpg)
শামীম আহম্মেদ জয় : চাঁদপুরের মতলব উত্তরের চরাঞ্চলে আলু জমিতে ফোসকা রোগের (লেট ব্লাইট) হানায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয়রা আলু গাছের রোগটিকে বলছেন ফোসকা বা ঠোসা রোগ। আলুচাষিরা রোগটির হঠাৎ আক্রমণে এর প্রতিকারে কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।
গত কয়েকদিনে রোগটির হানায় এ অঞ্চলে আলুর আক্রান্ত জমিগুলোতে গাছ পচে যেতে শুরু করায় শতশত কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলছে। তবে অনেকে জমিতে লেট ব্লাইটের আক্রমণে আলু গাছ পচতে শুরু করায় ফসলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না পাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর প্রতিকারে বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির সংশ্লিষ্ট লোকজন যেসব কীটনাশকের কথা বলছেন সেসব কীটনাশক এই মুহূর্তে খোলাবাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেখা গেছে, বোরোচর, বাহাদুরপুর চরে প্রায় হাজার বিঘা আলু জমিতে রোগটির আক্রমণ হয়েছে। আক্রান্ত কোনো কোনো জমিতে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ সবুজ আলু গাছ পচে কালো হয়ে গেছে। এছাড়া খুনেরচর ও বাহেরচর এলাকার চরাঞ্চলের বিভিন্ন আলু ক্ষেতেও লেট ব্লাইটের হানার তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলার কৃষক হান্নান বেপারী বলেন, গত বুধবার একটি জমিতে আলু গাছের পাতায় ঠোসা পড়তে দেখা যায়। ২ দিনেই আলু গাছ ঢলে যাচ্ছে। এখন রোগটি যদি পুরো জমিতে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আলুর কাঙ্খিত উৎপাদন হবে না। এই রোগ দমনে প্রয়োজনীয় কীটনাশক স্প্রে করছি
বাহাদুরপুর এলাকার কৃষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, আমার প্রায় ২ বিঘার একটি জমিতে ফোসকা রোগের আক্রমণে প্রায় ৭০ ভাগ আলু গাছ মরে গেছে। আমার অন্য ক্ষেতের অবস্থাও ভালো না।
ষাটনল এলাকার কৃষক কবির বলেন, রোগটির আক্রমণে আমার জমির ৬০ ভাগ আলু গাছ পচে মাটিতে মিশে গেছে। আলু চাষে লোকসানের মুখে পড়বো।
ভুক্তভোগী অন্যান্য আলু চাষিদের ভাষ্য, মৌসুমের প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিতে বপন করা আলু জমি নষ্ট হয়। অতিরিক্ত খরচ করে আলুর বীজ সংগ্রহ করেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ব্রাকের আলুর বীজ ক্রয় করে জমিতে বপন করেন। ব্রাক ব্রান্ডের প্রতিবাক্স আলু বীজের দাম ধরা হয়েছে ১০-১৬ হাজার টাকা। অথচ জমিতে এসব আলু বীজের সিংহভাগই গজায়নি।
আমান উল্লাহ নামে এক আলুচাষী বলেন, আলু ক্ষেতের পচন রোগ দমনে প্রয়োজনীয় সব কীটনাশক এখন বাজারে মিলছে না। এ বছর প্রতিকানি (১৪০ শতাংশ) আলুর খেতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের খরচ পড়ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এতে জমিতেই প্রতি মণ আলুর উৎপাদন খরচ পড়বে ৭০০-৮০০ টাকা। খরচ পুষিয়ে উঠেতে সমপরিমাণ জমিতে অন্তত ৪০০ মণের বেশি আলু উৎপাদন হতে হবে। তা না হলে বর্তমান বাজার দরে আলু চাষে লোকশান হবে নিশ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলায় প্রায় ৬৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হচ্ছে। মৌসুমের প্রথম দিকে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির প্রভাব, পরবর্তীতে ঘন কুয়াশা ও হঠাৎ গরমে বপন করা আলুর জমি নষ্ট হয়। ভুক্তভোগীরা আলু চাষে আবারও মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন দেখেন। তবে লেট রাইটের আক্রমণে কৃষকের এই স্বপ্নভঙ্গ হতে চলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, আলু গাছের পচন দমনরোধে সবাইকে একযোগে একই মাঠে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোদ থাকা অবস্থায় একটানা ৫-৬ দিন। এতে আক্রান্ত জমিতে একেবারে গাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমবে। সাইক্সা, সিকিউর, এক্সাট্রামিন ও প্রয়োজন সাপেক্ষে অটেনস্টিন কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।