শাহরাস্তিতে গৃহবধূ রিনা হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি হাবিবুর আটক

স্বপন কর্মকার মিঠুন / রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী শাহরাস্তি : চাঁদপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম দিকনির্দেশনায় সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোঃ রিজওয়ান সাঈদ জিকু ও শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ এর তত্ত্বাবধানে রিনা আক্তার হত্যা মামলার প্রধান আসামী (ভিকটিমের স্বামী) হাবিবুর রহমান খোকন (৪৫) কে আটক করা হয়েছে।

গতকাল ২০নভেম্বর (সোমবার)সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহরাস্তি থানাধীন টামটা উত্তর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রাম হতে গ্রেফতার করে চাঁদপুর শাহরাস্তি থানার একটি চৌকস দল।

জানা যায়, ১৭নভেম্বর বিকাল অনুমান ৩টায় শাহরাস্তি থানাধীন টামটা উত্তর ইউনিয়নের সুরসই গ্রামে একটি নৃশংস ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। আসামী হাবিবুর রহমান খোকন তার নব বিবাহিতা স্ত্রীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আসামী হাবিবুর রহমান খোকন (৪৫) শাহরাস্তি থানাধীন সুরসই গ্রামের লুৎফুর রহমান এর বড় ছেলে এবং নিহত রিনা আক্তার (২৫) শাহরাস্তি থানাধীন টামটা গ্রামের বিল্লাল হোসেন এর মেয়ে। ঘটনার পর থেকে প্রধান আসামী মোঃ হাবিবুর রহমান খোকন আত্মগোপন করে। ঘটনাটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর চাঁদপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

এর প্রেক্ষিতে কচুয়া সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ রিজওয়ান সাঈদ জিকু এর সার্বিক তত্বাবধানে এবং শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন এর নেতৃত্বে শাহরাস্তি থানা পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। আসামীর দেওয়া তথ্যমতে নিহত রিনা আক্তার এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আসামীর পাশের বাড়ীর পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ধ্যার শাহরাস্তি থানা পুলিশের প্রেস কনফারেন্সে সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) রেজওয়ান সাঈদ জিকো জানান, গত ১৭ নভেম্বর শাহরাস্তি উপজেলার সুরসই এলাকায় গৃহবধূ রিনা আক্তার খুন হওয়ার পর থেকে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের মহোদয়ের নির্দেশে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার ৭২ ঘন্টা ও মামলার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই প্রধান আসামি হাবিবুর রহমানকে আটক করে শাহরাস্তি থানা পুলিশ।

সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল রেজওয়ান সাঈদ আরো জানান, গত দুমাস পূর্বে হাবিব রিনা আক্তার কে বিবাহ করে। বিবাহর পর গত ১৭ অক্টোবর রিনা আক্তার তার স্বামী হাবিবুর রহমানকে কোন কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এক মাস পর ১৭ নভেম্বর রিনা আক্তার তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় একপর্যায়ে হাবিব উত্তেজিত হয়ে ছুরিকাঘাত করে স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এরপর ৫ জনকে আসামি করে রিনা আক্তারের পিতা বিল্লাল হোসেন শাহরাস্তি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি আরও বলেন, হাবিবের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রিনা আক্তারের ব্যবহত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এবং হত্যার কাজে ব্যবহার করা ছুরি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। শাহরাস্তি থানার ওসি মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

এদিকে এলাকাবাসী জানায় , হাবিব মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত তিনি দীর্ঘদিন ধরে কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। তার আগের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা করার পর তিনি কয়েকদিন কারাগারে ছিলেন। এরপর তিনি গত দুই মাস আগে রিনা আক্তারকে বিবাহ করেন। বিবাহর পর তার সংসারে অশান্তি বিরাজ করছিল। অনেকেই জানান রিনা টিকটিকের সাথে জড়িত ছিল। এর আগেও রিনার বিবাহ হয়।

থানা পুলিশের প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক ( তদন্ত) মোঃ খাইরুল আলম, শাহরাস্তি প্রেসক্লাব ও গনমাধ্যমের কর্মী বৃন্দ।

উল্লেখ্য যে, ঘটনার অনুমান ২মাস পূর্বে আসামী হাবিবুর রহমান খোকন এর সাথে রিনা আক্তারের বিবাহ হয়েছিল। বিবাহের পর হতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সর্ম্পকের অবনতি ঘটে। গত ১৭অক্টোবর ভিকটিম রিনা আক্তার কাউকে কোন কিছু না বলে শ্বশুর বাড়ী হতে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়।

ঐদিন দুপুর অনুমান ২টায় রিনা আক্তার স্বামীর বাড়ীতে আসলে আসামী হাবিবুর রহমান খোকন এতদিন কোথায় ছিল জিজ্ঞাসা করলে উভয়ের মধ্য তর্কবির্তক হয়। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আসামী হাবিবুর রহমান খোকন উত্তেজিত হয়ে তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে স্ত্রী রিনা আক্তারকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।

সম্পর্কিত খবর