অভিভাবকদের কাউন্সিলে সন্তানদের আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ রোধ হবে

চাঁদপুর খবর রিপোর্ট ঃ চাঁদপুরে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা অপরাধ বেড়ে চলছে। হানাহানিসহ পারিবারিক বিরোধ আত্মহত্যা এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে খুন, আত্মহত্যা, ইভটিজিং, মিথ্যা মামলা সংখ্যা পূর্বের যে কোন সময় তুলনা বৃদ্ধি পাওয়া ভাবিয়ে তুলছে সর্বমহলকে।

তবে এজন্য সচেতন মহল দায়ী করছেন সামাজিক বন্ধনে ফাটলসহ ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবকে। তাদের মতে এখনই এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা না হলে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে পড়বে।

জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ৫২ জনের নাম অপমৃত্যুর খাতায় রেজিষ্ট্রি হয়। গত ১লা জানুয়ারী থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ১টি হত্যা মামলা ও ২০ অপমৃত্যুর অভিযোগ জমা হয়েছে।

চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারী থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ২০ অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তারমধ্যে গত ২ জানুয়ারী সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রালদিয়া তপাদার বাড়ির বাবার বাড়িতে এসে ফয়সাল মাঝির স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৯) বৈদ্যুতিক পাখার সাথে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

গত ১ ফেব্রুয়ারী পৌরসভার ১৩নং ওয়াডস্থ খুলিশাডুলী এলাকার মো. লিটন বেপারীর মেয়ে ১০ম শ্রেণরি শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার লিমা (১৬) বৈদ্যুতিক পাখার সাথে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। গত ৫ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ৯টায় সদর উপজেলার উত্তর মৈশাদী মজুমদার বাড়ির মো. মিন্টু মজুমদারের ছেলে মো. আজাদ মজুমদার (৩৫) বাড়ির পাশে কলা বাগানের ভিতরে বিষপান করে ১০ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

গত ৪ মার্চ পুরাণবাজার বাকালী পট্টি এলাকার সুমন ঘোষের স্ত্রী পূজা ঘোষ (২০) বৈদ্যুতিক পাখার সাথে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। গত ১৭ মে লক্ষ¥ীপুর ২নং ওয়ার্ডের বহরিয়া লতিফ খাঁর মাদ্রাসার পাশে শুক্কুর মিয়ার স্ত্রী লিপি আক্তার (৩০) স্বামীর সাথে অভিমান করে তার কক্ষে বিষপানে আত্মহত্যা করে।

এভাবে প্রতিদিনই জেলার কোনো না কোনো উপজেলায় এধরনের সামাজিক অপরাধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে পারিবারিক বিরোধীই ব্যাপক অস্থিরতার কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সবকিছুর পেছনে নৈতিক অবক্ষয় চরম আকারে দাঁড়িয়েছে। মাদকের সহজলভ্যতায় উঠতি বয়সের যুবক তরুণরা নেশার রাজ্যে বুদ হয়ে অপরাধ জগত পা রাখছে। অপরদিকে মোবাইলে পরকীয়াসহ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তরুণীরা আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনা সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে সর্বমহলে।

সচেতন মহলের মতে এসব সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পারিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব চরম আকার ধারণ করায় অধিকাংশ পরিবারগুলোতেই দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এসব রোধ করা না গেলে বড় ধরনের সামাজিক বিপর্যয় মেনে নিতে সবাইকে। এমনটাই অভিমত সচেতন মহলের।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, আত্মহত্যা মানুষ বিভিন্ন কারণে করেছে। ইদানিং পারিবারিক ভায়োলেন্স খুব বেশি বেড়ে গেছে। একারণেও আত্মহত্যা করছে। বিশেষ করে মেয়েরা অবাঞ্চিত বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী কোন কিছু না পাওয়ায় তাদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়, তখন তারা আত্মহত্যা করে। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। এজটিল সামাজিক ব্যবস্থা সাথে নতুন প্রজন্ম খাপÍখাইয়ে উঠা খুব কষ্টকর। তাদের কাউন্সিল করা খুব প্রয়োজন। আমি মনেকরি অভিভাবকরা যদি যার যার অবস্থান থেকে নিজেরা সচেতন হয়ে ছেলেÍমেয়েদের কাউন্সিল করে তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতাসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তিনি আরো জানান, এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। এখন পাড়া মহল্লার রাস্তায় শিক্ষার্থীরা আড্ডা দিবে। কিন্তু সন্ধ্যার পর পাড়া মহল্লার রাস্তায় কাউকে পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের এ চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। চাঁদপুরবাসীকে কিশোর গ্যাংমুক্ত একটি শহর উপহার দিতে চাই। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে অভিভাবকদের জানাতে চাই আপনার সন্তানের ওপর নজর রাখুন। কোনো অবস্থাতেই তারা যেন অকারণে সন্ধ্যার পর বাইরে বের না হয়।

মাদক ও কিশোর গ্যাং বিষয়ে কোনো ধরনের অপরাধ সংগঠিত হওয়ার লক্ষণ দেখা মাত্রই চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।

সম্পর্কিত খবর