চাঁদপুরে বহাল তবিয়তে প্রাইমারি শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম!

চাঁদপুর খবর রিপোর্ট ঃ চাঁদপুরে প্রথম স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষিকা রেহানা ইয়াছমিন এর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের ২৩নং পাইকাস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম আইন ও ইকুইট অনুযায়ী চাকুরী হতে বরখাস্তের দাবী উঠেছে ।

প্রশ্ন উঠেছে ২৩নং পাইকাস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম প্রথম স্ত্রী মামলায় ফৌজধারী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কিভাবে বর্তমানে চাকুরী করছেন। তার খুঁটির জোর কোথায়।

এ ব্যাপারে প্রথম স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষিকা রেহানা ইয়াছমিন প্রতিকার চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি ।
এ ব্যাপারে প্রথম স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষিকা রেহানা ইয়াছমিন গতকাল ৩ জুন সন্ধ্যায় দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকা কার্যালয়ে তার সন্তান নিয়ে নিজে উপস্থিত হয়ে বলেন, লিখিতভাবে জানানোর পরও চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না । সহযোগিতা করছে না । ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি ।খোদ আবেদনও রাখতে চাচ্ছে না জেলা শিক্ষা শিক্ষা অফিস । তার খুঁটির জোর কোথায় । আদালতে সাজারও পরও তার চাকুরী বহাল থাকে কিভাবে প্রশ্ন প্রথম স্ত্রী শিক্ষিকার ।

তিনি আক্ষেপ করে করে বলেন দেশে কি কোন আইন কানুন নেই । বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করবেন । সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে ।

অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম এর স্ত্রী ৫৪নং হামানকর্দ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষিকা রেহানা ইয়াছমিন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১৩এর উপবিধি (০১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের করার জন্য আবেদন করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রেহানা ইয়াছমিন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ডিস্ট্রিক একাউন্টস এন্ড ফিনান্স অফিসার, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

তিনি লিখিত আবেদন পত্রে উল্লেখ করেন, আমি রেহানা ইয়াসমিন, পিতা-মৃত ডাক্তার মোঃ আব্দুস সাত্তার, মাতা-মৃত আজমতেন্ন্ছো, সাং-কাশারা, পো: পাইকপাড়া, থানা-ফরিদগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর আপনার অধীনস্থ চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন ৫৪ নং হামানকর্দ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা।

উল্লেখিত বিষয়ে সহকারি শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম, পিতা: মৃত হাবিবুল্লাহ প্রধানিয়া, মাতা: মৃত সুফিয়া বেগম, সাং-উত্তর পাইকাস্তা, পো: আশিকাটি, থানা ও জেলা চাঁদপুর আমার স্বামী হয়। আমি তার স্ত্রী বিগত ২০০২ সালে আলীগঞ্জ পিটি আইতেছি সিইনএড ট্রেনিং করতে গিয়ে পরস্পর পরস্পরকে পছন্দ করে বিগত ৮-১০-২০০২ ইং তারিখে ইসলামিক শরীয়তের বিধান মতে রেজিস্ট্রিকৃত কাবিন নামা মূলে শিক্ষক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সাথে আমার বিবাহ হয়।

দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করাকালীন অবস্থা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের ঔরসে এবং আমার গর্ভে সাতটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। প্রথম দুইটি সন্তানের পরবর্তী পাঁচটি সন্তান আমার স্বামী আমাকে চাপ প্রয়োগ করে এবরশন করে।

বর্তমানে তার ওরসে আমার গর্বের দুইটি সন্তান জীবিত আছে। একটি পুত্র সন্তান নাম মোঃ মাহি হাসান, বয়স ১৯ বছর। একটি কন্যা সন্তান নাম- মেহেরুন মহিনী, বয়স ১৪ বছর। মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম যৌতুকের দাবিতে আমাকে ৬/১১/২০২১ইং তারিখে হত্যা করার চেষ্টা করা এবং আমার সন্তানদেরকে শারীরিক মানসিক আত্মিক নির্যাতন করায় আমি বিগত ২৩/১১/২০২১ইং তারিখে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল, সদর থানা, চাঁদপুরে দরখাস্ত মামলা নং ৪১৮/২০২১ দায়ের করি। যাহা তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মোঃ শহিদুল ইসলাম শাহীন চার্জসীটভুক্ত হয়ে নারী ও শিশু মোকাদ্দমা নং-৮০/২০২২ রেজি:ভুক্ত হয়।

উক্ত মোকাদ্দমায় বিগত ১৬/০২/২০২২ইং তারিখে শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে /িঅ ইস্যু হয় এবং অদ্যবধি পর্যন্ত ১ বছর ৩ মাস কারাগারে আটক হিসাবে রহিয়াছে।

উত্তম মোকাদ্দমাটি বিগত ১০/০৪/২০২৩ তারিখে শিক্ষক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। বর্তমানে উক্ত মোকাদ্দামাটি সাক্ষী চলমান রয়েছে। মোঃ শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন চরিত্রহীন নারীদের সহিত একের পর এক পরকীয়া জড়িত থাকিয়া, বহুবিবাহে লিপ্ত থাকিয়া আমাকে এবং আমার দুই সন্তানকে মানসিক শারীরিক ও আর্থিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করার চেষ্টা করে।

এমতাবস্থায় আমি বিগত ৩১/১২/২০২১ তারিখে শহিদুল ইসলাম ও তার পরকীয়া প্রেমিকার লিলুফা আক্তারের বিয়ের কাবিন সংগ্রহ করিয়া দেখিতে পাই বিগত ১৫/১০/২০২১ইং তারিখে আমার স্বামী মোঃ শহিদুল ইসলাম আমার অনুমতি ব্যতীত এবং সালিশি পরিষদের অনুমতি ব্যতীত সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তারপর পরকিয়া প্রেমিকা লিলুফা আক্তারকে বিবাহ করেছে। নিরুপায় হয়ে আমি ৪/১/২০২২তারিখে বিজ্ঞ আমলী আদালত চাঁদপুরে মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সি আর মোকাদ্দামা নং ২২/২০২২দায়ের করি। বিগত ২২/৫/২০২৩ তারিখে মোকাদ্দমাটির রায় প্রচার হয়। রায়ে শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলামের ৪মাস সশ্রম কারাদন্ড, ১মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১০হাজার টাকা জরিমানা হয়।

যেহেতু সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১৩এর উপবিধি (০১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের আদেশের অনুবৃত্তিক্রমে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের বিধান রয়েছে সেহেতু উক্ত আইন ও ইকুইটি অনুযায়ী ২টি ফৌজদারি মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও সার্চসীটভুক্ত আসামী শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলামকে তার চাকুরী হতে বাধ্যতামূলক অবসর দানের আদেশ হওয়ার জন্য আবেদন করছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত ২৩নং পাইকাস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি ।

সম্পর্কিত খবর