রামপুরে সপ্রাবির পুরাতন ভবন দরপত্র ছাড়া বিক্রির অভিযোগ!

শওকত আলী : চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৪৯ নম্বর পাঁচগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের অংশ যথাযথ কর্র্র্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন প্রকার অনুমতি ও দরপত্র আহবান ছাড়াই বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি সদস্যরা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগসাজস ও তার সহায়তা নিয়ে সম্প্রতি ভবনের একাংশ ভেঙে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ধরণের অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী এ ঘটনায় মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা: দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন গিয়ে ভবন ভেঙে বিক্রি করে দেয়ার সত্যতা মিলেছে। ভেঙে দেয়া পুরাতন ভবনের স্থানে এখন নতুন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শৌচাগার নির্মাণ কাজ চলছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ছয়টি শৌচাগার করার জন্য এই ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু সরকারি নিয়ম মোতাবেক কোন স্থাপনা বা ভবন ভেঙে সরানো কিংবা অপসারণ করতে হলে কর্তৃপক্ষের দাপ্তরিক নির্দেশনা এবং দরপত্র আহবান ছাড়া কোন ভবন অপসারণ করা যায় না। অথচ এই বিদ্যালয়ের একটি অংশ নিয়ম না মেনেই ভেঙে ফেলেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পুরাতন ভবনের একাংশ ভেঙে রড বিক্রি করেছেন প্রায় দুই লাখ টাকা। তারা বিক্রির অর্থ সরকারি কোষাগারেও জমা দেয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়মেন্নেছার কাছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার একক সিদ্ধান্তে এ ভবনটি ভাঙা বা বিক্রয় করা হয়নি। আমি এটি বিক্রির কোন টাকাও গ্রহণ করিনি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর রেজুলেশন করে ভবনের একাংশ ভাঙা হয়। পরবর্তীতে চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আব্দুল হাই ওই রেজুলেশন দেখে ভাঙার অনুমতি দেন। তারই প্রেক্ষিতে ভবনটির একাংশ ভেঙে অপসারণ করা হয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মেহেদী মাসুদ বলেন, সভার সিদ্ধান্তের আলোকেই ভবনের একাংশ ভাঙা হয়েছে। এই বিষয়ে উপজেলায় দাপ্তরিক সব কিছু যোগাযোগ রক্ষা করেছেন প্রধান শিক্ষক। আলোচনা করে দেখিছি, এটি ভাঙার জন্য যে পরিমান অর্থ খরচ হবে এবং যে পরিমান টাকা পাওয়া যাবে তাতে দরপত্র আহবান করে কোন লাভ হবে না। যে কারণে এটি এভাবে ভেঙে বিক্রি করা হয়েছে।

সদর উপজেলা সাবেক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্তের রেজুলেশন আমি দেখেছি। কিন্তু ভবনের একাংশ ভেঙে অপসারণ করা বা বিক্রির বিষয়টি আমাকে প্রধান শিক্ষিকাসহ কেউ জানায়নি। বিদ্যালয় ভবন কিংবা ভবনের অংশ ভেঙে অপসারণের যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা এখানে মানা হয়নি। সম্পূর্ণ অনিয়ম করে ভাঙা হয়েছে।

সদর উপজেলার বর্তমান সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রাবেয়া বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষিকা যে কাজটি করেছেন, সেটি সঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন এবং মতামতের ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দরপত্র আহবান করে বিক্রি বা অপসারণ করতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি অনিয়ম করেছেন।

চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন মোবাইল নাম্বার ০১৭১১-২৬২৮৯ থেকে বলেন,এ ব্যাপারে আমি জানিনা। আমি যেহেতু জানিনা,এখন জানতে পেরেছি। রোববার সরোজমিনে গিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ বিষয়টি জেনে বলেন, সরকারি যে কোন স্থাপনা বা বিদ্যালয় ভবন দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ভাঙার নিয়ম রয়েছে। দরপত্র আহবান ছাড়া কোন ভাবেই সরকারি কোন স্থাপনা ভাঙা সম্ভব নয়। এই ধরনের কাজ সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনিয়ম।

সম্পর্কিত খবর