ফরিদগঞ্জে শিশু সোহানের হত্যকারী এসএসসি পরীক্ষার্থী এই আব্দুল আহাদ

মামুন হোসাইনঃ ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির শরীফ তালুকদারের ছেলে আঃ আহাদ। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। আহাদ এ বছর পাশ্ববর্তী শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বড় কাউছার তালুকদার একজন গাড়ি চালক। বাবা ¯হানীয় একটি বেকারিতে কাজ করতো।
স্থানীয়রা জানায়, মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় আব্দুল আহাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।

অষ্টম শ্রেণিতে সরকারি বৃত্তি লাভ করে এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুনাম খুড়িয়েছে।নিজে পড়ার সাথে সাথে এলাকায় বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতো।

তারপর থেকে এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার শুরু করে, ভারতীয় একটি সিআইডি সিরিয়াল দেখে অপরাধের প্রবনতা বাড়তে শুরু করে, নবম শ্রেণি পড়া অবস্থায় তার নিকটতম আত্মীয় তার সাথে প্রেম করে করে, দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া আহাদ, পাশ্ববর্তী একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে তার এক আত্মীয়র বাড়িতে উঠে,কয়েকদিন পরে তার কাগজপত্র ও মেয়ের কাগজপত্র ডুবলিকেট বানিয়ে রোটারি করে,নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে পরবর্তীতে বাড়ির লোকজন এই মেধাবী ছাত্রকে বিয়ে পড়িয়ে দেয়, অভাবী সংসারে শুরু হয় আরো অভাব, এই বয়সে সংসারে আলাদা থাকতে হয়। পড়াতে শুরু করে পাইবেট, তারই একজন হতভাগ্য সোহান। বেশ কিছুদিন ধরেই সে সোহানকে পড়াতো।

গত ৪/৫ মাস পূর্বে সে তারই নিকাত্মীয়কে প্রেম করে বিয়ে করে। এই মেধাবী ছাত্রকে পড়াশোনার খরচ ও সকল কিছুর দায়িত্ব নেয় সোহানের বাবা,মামা ও চাচারা।সোহানকে পড়াইতো, তাদের বাসায় খাওয়া দাওয়া করতো, স্বামী স্ত্রী দুইজনকেই সোহানের ফ্যামিলি জামা কাপড় থেকে সব কিছুইতেই সহযোগিতা করতো। তার অভাবে পিছু ছাড়ছে না, মোবাইলে আসক্তি ও অপরাধ বিষয়ক সিরিয়াল সিআইডি দেখতে দেখতে দেখতে তার মধ্যে আরো অপরাধ করার প্রবণতা জন্ম নেয়।

সূত্রে জানা গেছে, সোহান নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ ও এলাকার লোকজনের পাশাপাশি সেও হন্যে হয়ে খুঁজেছে। প্রথমে মসজিদের মাইকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করে। পুলিশ গত ৮দিন ধরে প্রথমে নিখোঁজ সোহানকে খোঁজা ও পরে সোহানের খুনিকে খোঁজার বিষয়ে সর্বদা পুলিশকে সহায়তা করেছে। সবক্ষেত্রে সে সামনে থেকে সকল কাজ করেছে। হত্যা মামলাটি দায়েরের পর পুলিশ যখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আঃ আহাদকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহ করতে থাকে এবং নজরদারিতে নিয়ে আসে, তখনও সে স্বাভাবিক ছিলো এবং এসএসসি পরীক্ষা দেয়।

উল্লেখ্য চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানকে (৮) হত্যার অভিযোগে এক কিশোরকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ওই কিশোর মাটিতে পুঁতে রাখে বলে দাবি করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।

২৪ মে ( বুধবার) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মো. মিলন মাহমুদ। শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহান হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল মঙ্গলবার ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, ১৫ মে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের ছেলে আদিল মোহাম্মদ সোহান মাগরিবের নামাজ পড়তে বাড়ির পাশের মসজিদে যায়। নামাজ শেষে ছেলে মসজিদ থেকে বাড়িতে না আসায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন আনোয়ার হোসেন ও তাঁর স্বজনেরা। পরদিন ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন আনোয়ার। ১৯ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে সোহানের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় ওই দিনই শিশুটির বাবা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ধারণা করে, যে সময়ের মধ্যে শিশু সোহান নিখোঁজ হয়, তা খুবই কম সময়। খুব কাছের লোকের মাধ্যমে এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়।

তদন্তকালে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিশুর গৃহশিক্ষক ওই কিশোরকে আটক করে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর জানায়, সে নিয়মিত ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখে। ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ এলাকা থেকে শিশু সোহানকে বাড়ির পাশের নির্জন নার্সারিতে ধরে নিয়ে যায়।

সেখানে সোহানের মুখ ও গলায় চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ সময় ওই কিশোর গৃহশিক্ষক তার মায়ের মুঠোফোন ব্যবহার করে শিশু সোহানের মায়ের মুঠোফোন নম্বরে মুক্তিপণের জন্য কল দেয়। কিন্তু সোহানের মা তাঁর সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে মুঠোফোন ঘরে রেখে যান। যে কারণে ফোন ধরতে পারেননি।

এমন পরিস্থিতিতে কিশোর গৃহশিক্ষকও সোহানের পরিবারের সঙ্গে খোঁজাখুঁজিতে যুক্ত হয়। রাত ১২টার দিকে সবাই ঘরে চলে গেলে ওই কিশোর ঘটনাস্থলে সোহানকে দেখতে যায়। গিয়ে দেখে সোহান জীবিত নেই। এরপর রাত একটার দিকে সে এক প্রতিবেশী নারীর রান্নাঘর থেকে দা ও কোদাল এনে মাটি খুঁড়ে আরেক ব্যক্তির জমিতে লাশ পুঁতে রাখে। এরপর পানি দিয়ে দা পরিষ্কার করে ওই রান্নাঘরে রেখে দেয়। তার মায়ের ব্যবহৃত সিম কার্ডটি পুকুরে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ আরও বলেন, ওই কিশোর অপরাধীর বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরিবারে আর্থিক সংকট আছে। সোহানের গৃহশিক্ষক হওয়ার কারণে সে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিল। সে জানত, সোহানদের ঘরে কিছু টাকা আছে। যে কারণে সে এই পরিকল্পনা করে। সিরিয়ালে সে দেখেছে, ৪০ সেকেন্ড মুখ চেপে ধরলে মারা যায় না এবং অজ্ঞান হয়ে থাকে। কিন্তু তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি বরং শিশুটির মৃত্যু হয়।

সম্পর্কিত খবর