ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবৃতি

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাহেদ সরকার পত্রিকা অফিসে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আপনারা জানেন ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ধারাবাহিক ভাবে ক্ষমতায় রয়েছে।

গত ১৫মে যমুনা টেলিভিশনের এমপির কাছে প্রশ্ন শীর্ষক লাইভ অনুষ্ঠানে মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি ৫১ মিনিটের বক্তব্যটি আমাদের নজরে এসেছে। তিনি তার বক্তব্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকের নাম উল্লেখ করে যেভাবে বক্তব্য প্রদান করেছেন, তা দুঃখজনক। মহান জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য এভাবে কথা বলার কারনে শুধুমাত্র আমরা নই পুরো ফরিদগঞ্জবাসী হতাশ! তিনি নিজেকে বড় দেখাতে গিয়ে দলের, সরকারের এমনকি দলের নেতাকর্মীদের সম্মানহানী করেছেন। একটি মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে একের পর এক মিথ্যা ও মিথ্যে তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন।

বাস্তবতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দিয়ে পাঠায় আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সকল স্তরের নেতাকর্মীরা দলের আদেশ মেনে প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করেছি। ইতিপূবের্র নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা তার বড় প্রমাণ দিবে। কিন্তু ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে তৃতীয় বারের মতো মনোনয়ন দিয়ে পাঠায়।

আমরা তাকে সর্বোচ্চ শক্তি ও মাঠে অবস্থান করে বিজয় নিশ্চিত করে সংসদে পাঠাই। ইতিপূর্বে তিনি ২০০১ সালে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোটের ছকের কাছে আমরা হেরে যাই।

২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের সময়ে আমরা জয়ের কাছাকাছি চলে এসেছিলাম কিন্তু আমাদের প্রার্থীর দলের নেতৃবৃন্দের র্সাবক্ষনিক ভাবে যোগাযোগ না রাখার কারণে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা হেরে যাই।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আমরা প্রার্থীর দিকে না তাকিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে দলের সর্বোচ্চ স্তরের নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করায় তিনি বিজয়ী হতে পেরেছিলেন। পক্ষান্তরে উনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি জামাতের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের প্রতিহত না করার নির্দেশ প্রদান করেন।

এবং তিনি বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের সুরে সুর মিলিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনকে নিয়ে বিএনপি’র রাতের ভোটের অভিযোগের স্বীকার করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।

দুঃখের বিষয় নির্বাচনের পর থেকে তিনি পূর্বের ন্যায় দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে বাইরে রেখে নিজেই প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক প্রতিনিধি সৃষ্টি করে নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখাসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সুসংগঠিত নেতৃত্ব সর্বদা তার দিকে চেয়ে ছিল।

মাননীয় সংসদ সদস্য নিজের প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সকল কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতিনিধিদের অত্যাচারে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হামলা ও মামলার স্বীকার হচ্ছে।
২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২য় বারের মত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। যার সুবাতাস ফরিদগঞ্জের প্রতিটি অঞ্চলে লেগেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ পর্যায়ের তালিকা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রনালয়ের উপজেলা পর্যায়ের তালিকা দেখলেই প্রমাণ মিলবে।

শফিকুর রহমান বলেছেন,“ ৫০ বছরে যে সমস্ত কাজ হয়নি আমি সেগুলো করে দিয়েছি” এমন বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ধারাবাহিক ১৪ বছরের উন্নয়নকে অস্বীকার করে শুধুমাত্র একটি সময়কালকে উল্লেখ করেছেন।

তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকার, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে অসম্মানজনক বক্তব্য দিয়েছেন। তা আমাদেরকে তথা আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কে বিব্রত করেছে।

২০১২ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, ১৫ই আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার প্রতিবাদকারী হিসেবে কারা নির্যাতিত ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় সুসংগঠিত। এই কমিটির সহযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ,স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ, যুবমহিলা লীগ, হর্কাস লীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের সম্মেলন হয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়। বিএনপি জামায়েতকে প্রতিহত করা এবং জাতীয় ও দলীয় সকল কর্মসূচি পালন করে আসছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন, দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং দু‘টি পৌরসভা নির্বাচনে আমাদের দলের মনোনীত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি মহোদয় দলের পরিক্ষিত নেতাদের মনোনয়নের পরিবর্তে তার প্রতিনিধি ও জনবিচ্ছিন্ন লোকদের মনোনয়ন নিশ্চিত করায় দলের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয় এবং ইউপি নির্বাচনে তার ভুমিকা ও সাংগঠনিক সহযোগিতা ছিল না।

অথচ তিনি বলেছেন নির্বাচনের সময় রাত ১২.০০ ঘটিকার পর আওয়ামীলীগ নেতারা প্রশাসনের লোকজনের সাথে হাত মিলিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার পরিবর্তন করে নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের হারানো হয়েছে। ইহা সম্পূর্ণভাবে অসত্য। উনার কথা-বার্তায় এটি প্রতীয়মান হয় তিনি বিএনপি’র মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন।
অথচ যমুনা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে তিনি মিথ্যাচার করে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এছাড়া ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও তিনি বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে দল এবং সরকারকে বিব্রত করেছেন।

একজন সংসদ সদস্য একটি আসনের সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি। ইতিপূর্বে যে সকল সংসদ সদস্য ফরিদগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের বা বর্তমানে অন্যান্য সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যদের এলাকায় আসার রেকর্ড দেখলে এবং বর্তমান সংসদ সদস্য মহোদয়ের এলাকায় আসার রেকর্ড দেখলে যে কেউই বলবেন, আমাদের সংসদ সদস্য একজন জনবিচ্ছিন্ন এমপি।

তিনি দলের ও সরকারের উন্নয়নের প্রচার বাদ দিয়ে দলের নেতাকর্মী ও তার দলীয় রাজনীতির প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে বেশি সময় কাটিয়েছেন। দলের একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিকে পর্যন্ত তুচ্ছ তাচ্ছিল করতে তিনি দ্বিধা বোধ করেন নি। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠানে হামলা চালায় উনার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি বাহিনী। সেই হামলার মাধ্যমে তারা জাতির পিতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সাইনবোর্ড ভাংচুর করে এবং দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে আহত করেন। পরে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই সাজানো মামলা দিয়েছেন। আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা ওই মামলায় এখনো আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।

ওনার এসকল প্রতিনিধিরা টি আর, কাবিখা, কাবিটা,গভীর নলকূপ স্থাপন (গভীর নলকূপ ২৫/৩০ হাজার টাকা), বয়ষ্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ কার্ড, টিসিবি কার্ড এবং রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ হতে শতকরা ৩০ ভাগ ব্যক্তিগত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিতরণ করেন। যা তদন্তে প্রমাণ মিলবে ।

১৫মে প্রচারিত যমুনা টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মুহম্মদ শফিকুর রহমানের বক্তব্য তার অবস্থান নিশ্চিত করেছে যে তিনি কখনো আওয়ামীলীগের ছিলেন না। তিনি বিশেষ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়ে নিজের এবং তার প্রতিনিধিদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন।

মাদকের ব্যাপারে সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি জিরো টলারেন্স দেখাবেন এমন স্বপ্ন দেখিয়ে , নির্বাচিত হওয়ার পর মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ীদেরকে প্রতিনিধি বানিয়ে উনার রাজনীতি পরিচালনা করেছেন। এখন মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জনপ্রিয় বলে তিনি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও জনগণের কাছে তা হাস্যকর বলে প্রতিয়মান। উল্লেখ্য, প্রতিনিধি প্রথা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কোথায় প্রচলিত না থাকলেও উনি প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই উনার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তাই আজকের প্রেস বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে তার এই বক্তব্যকে প্রত্যাখান করছি।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
নিবেদক:-

মো. আবু সাহেদ সরকার                                                     আবুল খায়ের পাটওয়ারী (যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা)
সাধারণ সম্পাদক                                                                              মেয়র, ফরিদগঞ্জ পৌরসভা, চাঁদপুর।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,                                                                        সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,       ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখা।                                                                                ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখা।

সম্পর্কিত খবর