হাজিগঞ্জ সিহিরচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি গায়েব!

স্টাফ রিপোর্টার : “কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই” এ প্রবাদটির সাথে মিলে গেছে হাজিগঞ্জ উপজেলার ১১৫নং সিহিরচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে।

বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে বের হলেই অন্যের জায়গা। স্কুলটির ভূমি ৪৫ শতাংশ থাকলেও মাত্র ১২ শতাংশ জমির উপর স্কুল ভবনটি, সামনে পিছনে অন্যের জমি। ছোট্ট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিনোদন বা খেলাধুলার মত নিজস্ব নেই কোন মাঠ। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও খেলাধুলার কার্যক্রম অন্যের জায়গায় হয়। অথচ স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন কাগজ-পত্রে ৩৩ শতাংশ জমি দেখানো হয়েছে। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন মজুমদার সিআইপি ১২ শতক ভুমি স্কুল কে দান করেন।

কিন্তু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরেও প্রধান শিক্ষক মো: জুলফিকার আলী মজুমদার বা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা কাগজপত্র ও রেকর্ড ঠিক করে জায়গা বুঝে নেননি।

এই বিদ্যালয়টির অবস্থান হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩নং কালচৌ ইউনিয়নের সিহিরচোঁ গ্ৰামে। জানা যায়, ১৯৮০ সালে ৬ জন দাতা সদস্য ১৪১নং সিহিরচোঁ খতিয়ানের ৩টি দাগের মধ্যে ৩৩ শতক জমি দান করেন । এরপর ৩৩ বছর পর ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয় স্কুলটি। তারপরে আরও ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি কিংবা প্রধান শিক্ষক কেউ খোঁজ রাখেন না স্কুলের মূল সম্পত্তির পরিমাণ কত এবং তার অস্তিত্ব কোথায়? এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। মূলত স্কুলটির মূল ভবন রয়েছে জয়নাল আবেদীন মজুমদার সিআইপি এর দান করা ১২ শতক জমির উপর।

বাকি ৩৩ শতাংশ জমি কাগজ-কলমে থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৩২ বছরেও স্কুলের নামীয় বাকি ৩৩ শতক জমির দখলে নেই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেই ৩৩ শতক জমির একাংশ বর্তমান প্রধান শিক্ষকের বাড়ির সাথে এবং তা তার দখলেই আছে।

সরেজমিন গিয়ে কথা হয় প্রধান শিক্ষক মোঃ জুলফিকার আলী মজুমদার সাথে। তিনি জানান, আমি ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। এর আগে বিদ্যালয়ের জন্য আমার বাবা, চাচারা, এই সম্পত্তি দান করেন। বাকি বেদখল জমির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ওই জমিগুলো বিভিন্ন স্থানে পতিত পড়ে আছে। এছাড়া ও জমির দলিল গুলো দেখাতে বললে তিনি দেখাতে রাজি হননি। তিনি বলেন জমির কাগজ দেখাতে হলে আমার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমতি নিতে হবে।

তার অনুমতি ছাড়া কাগজ দেখানো বারণ। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন কাগজ দেখাতে হলে আমার অনুমতি কেনো লাগবে? আমি এমন কোনো নির্দেশনা দেইনি। উনি ইচ্ছা করলেই কাগজ দেখাতে পারেন। ভূমিগুলোর রেকর্ড ও কাগজপত্র এতো বছর ঠিক করা হয়নি কেনো জানতে চাইলে তিনি তার কোনো উত্তর না দিয়ে বিষটি কৌশলে এড়িয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়,২০১৩ সালে স্কুলটি সরকারীকরণের সময় শুধুমাত্র কাগজ-কলমে এর মূল জমির অস্তিত্ব উপস্থাপন করা হয়। দখলে যাওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনি কেউ। কিছু দাতা সদস্যরা ওয়ারিশ হিসাবে উক্ত সম্পত্তি প্রথম থেকেই দখলে রেখেছেন। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, জুলফিকার আলী মজুমদার এলাকায় দরবার কারবার ও বিভিন্ন দালালি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি স্কুলের সম্পত্তির দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। পূর্বে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক থাকলেও বর্তমানে তা নেমেছে ষাট এর কোঠায়। এর কারণ প্রধান শিক্ষকের স্কুলের প্রতি উদাসীনতা।

সভাপতি জয়নাল আবেদীন মজুমদার (সিআইপি) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, স্কুলের যে কোনো বিষয় প্রধান শিক্ষক একক সিদ্ধান্ত নেয়। আমার সাথে যোগাযোগ করেন না এবং কোন মিটিংয়ে আমাকে জানানো হয় না। সে তার ইচ্ছামত কাজ করে চলেছে। আমি স্কুলে জুম মিটিংয়ের জন্য সেটআপ করে দিয়েছি। সেটা ব্যবহার করেও চাইলে আমায় মিটিংয়ে সংযুক্ত করতে পারে কিন্তু তিনি তা করেন না।

আপনারা স্কুলের রেজ্যুলেশন খাতায় দেখবেন দীর্ঘদিন যাবত আমার কোনো স্বাক্ষর নেই কারণ আমায় বাদ রেখেই উনি মিটিং করেছেন। তার বাবা চাচা স্কুলের জন্য ভূমি দান করেছেন এবং এই কারণেই সহকারী শিক্ষক হিসাবে তার নিয়োগ হয়। সে কারণে নিয়োগের পর থেকেই স্কুলটাকে তিনি তার নিজস্ব সম্পত্তি মনে করেন। এজন্য সে অন্য কারো সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করেনা। কারো কোনো মতামত নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।

এ বিষয়ে হাজিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের সকল সম্পত্তি দেখে রাখার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। যদি তিনি কোন কাজে সমস্যা দেখেন আমাদেরকে জানালে আমরা সহযোগীতা করবো। আমি বিষয়টি যেহেতু অবগত হয়েছি তা অবশ্যই খতিয়ে দেখব। তিনি আরও বলেন কিছুদিন আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারি কমিশনার (ভূমি) হাজিগঞ্জ তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে তদন্ত প্রতিবেদনটি বর্তমানে ডিজি অফিসে আছে।

উল্লেখ্য যে স্কুলের ভূমির পরিমাণ ৪৫ শতক হলেও হাজিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে ৩৬ শতক এবং ভূমি অফিসের রেকর্ড বুকে লিপিবদ্ধ আছে ৩৫ শতক।

সম্পর্কিত খবর