চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেডে ছবির ফাঁদে পর্যটকদের হয়রানি

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী : পরিবার- পরিজন ও স্বজন কিংবা ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে চাঁদপুরের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র বড়স্টেশন মোলহেড বেড়াতে গিয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলোকে ধারণ করে রাখতে কে-না চায়। আর তাই আনন্দঘন স্মৃতি ফ্রেমে বন্দী করতে প্রয়োজন হয় একজন ফটোগ্রাফারের।

মোলহেডে ভাড়াটিয়া ও অনভিজ্ঞ কিছু কিশোর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বড়স্টেশনে লাইসেন্স বিহীন ফটোগ্রাফি করছে। এরমধ্যে অনেকেরই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাতো নেই বরং আদব-কায়দারও কোন বালাই নেই।

একজন পর্যটকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে আচরণ করতে হয় সেটাও তারা জানে না। আবার এদের মধ্যেই অনেকেই ফটোগ্রাফির আড়ালে পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে না বলা সত্ত্বেও একাধিক ছবি তুলে পর্যটকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা তাদের নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

কোন পর্যটক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বা এর প্রতিবাদ জানালে সিন্ডিকেটে জড়িত ৫/৭ জনের একদল জড়ো হয়ে পর্যটকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ।

অভিযোগ উঠেছে, এই বিনোদন স্থানটিতে অবৈধ ফটোগ্রাফারদের দৌরাত্ম বেশী। তারা একটি ডিএসএলআর পুঁজি করে বিভিন্ন অপরাধ করে ফেলে। কেননা তারা লাইসেন্স বিহীন এবং তাদের ডাটাবেজও নেই। যার কারণে তারা যেকোনো অন্যায় করে সটকে পড়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিনোদন স্থানটিতে অবৈধ ফটোগ্রাফারদের সংখ্যা প্ৰায় ৩০জন। এরা অরজিনিয়াল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফটোগ্রাফার নয়। স্থানীয় রাজনৈতিক ও কিছু যুবকের ছত্রছায়ায় এই সমস্ত ফটোগ্রাফাররা দিন দিন অপরাধ করেই যাচ্ছেন। এদের একটা অংশ কিশোর গ্যাংয়ের চক্রের সাথে জড়িত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোলহেডে এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে মোলহেডে ছোটখাটো ব্যবসা করে আসছি। সেই সুবাধে এখানের অনেক কিছুই চোখে পড়ে যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো ফটোগ্রাফারদের পর্যটক হয়রানি। এখানে অ-পেশাদার ফটোগ্রাফারদের সংখ্যা বেশী। যার কারণে তারা অনায়াসে মোলহেডে ঘুরে বেড়ায় এবং বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড করছে। এমনকি রাত বাড়লেই তারা মাদকের আড্ডা জমায়।

তিনি আরও বলেন, যদি এ সমস্যার প্রতি নজর না দেয় তবে পর্যটকরা বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হবে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবং তাদের অন্যায়ের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়ে যাবে। আমরা চাই না মোলহেডের বদনাম হোক।

এদেরকে ধরিয়ে দেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা অনেক শক্তিশালী, তখন আমাকে মারবে। এ ভয়ে সাহস হয়না।

সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর ঘুরতে আসা এক পর্যটক বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্রে ফটোগ্রাফ দিয়ে ফটো তুলে হয়রানির শিকার হওয়া তৌহিদ ইসলাম বাংলাদেশের জনপ্রিয় গ্রুপে হয়রানি বিষয় নিয়ে একটি পোস্ট করেন, তাঁর অভিযোগটি চাঁদপুরের বিভিন্ন পেইজ, আইডি সহ বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করা হয়।

ওই পোস্টটি নজড়ে আসার পর চাঁদপুর বঙ্গবন্ধু পর্যটন এরিয়ার বড়ষ্টেশন এলাকা কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম তাৎক্ষণিক এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তিনি শনিবার তিনজন ফটোগ্রাফারকে তাঁর হেফাজতে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এছাড়াও ৫ টি ক্যামেরা আটক করে থানায় নিয়ে যায় । ফেসবুকে ওই পোস্টের পর মোলহেডে নতুন করে আর কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে টহল টিম বসানো হয়েছে।

এদিকে মোলহেডে বেড়াতে এসে ঠিক একই ধরনের ফটোগ্রাফারের হাতে হয়রানির শিকারের অভিযোগ প্রায় সময় দেখা যায়। কিছু ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান হয়, অধিকাংশই কুল-কিনারাই পাওয়া যায় না। এসবের মূল কারণ অপেশাদার ফটোগ্রাফার।

স্থানীয় কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম বলেন, মোলহেড ও মিনি কক্সবাজার ছবিওয়ালাদের হাতে হয়রানির অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষনিক তা সমাধান করার চেষ্টা ও পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ছিনতাই, ইভটিজিং, অতিরিক্ত ভাড়াসহ নানা হয়রানী থেকে পর্যটকদের নিরাপদ রাখতে তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, মাঝে-মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়ে তা সমাধানের কাজ করি।

তাই পেশাদার ফটোগ্রাফার চিহ্নিতকরণ ও পর্যটক হয়রানি রোধে ডাটাবেজের তৈরির উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

সম্পর্কিত খবর