ঘূর্ণিঝড় মোখা: চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের বসতিদের শঙ্কা কেটেছে

বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মেঘনা নদীর পশ্চিমে ৩০টিরও অধিক চরাঞ্চল রয়েছে।

ঘুর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কায় ছিলেন দুই পাড়ে বসবাসরত হাজার হাজার বাসিন্দা। কিন্তু দিনের শেষ বেলাও অন্যদিনের মতো সূর্যাস্তের দেখা মিলে। ঠিক ওই মুহুর্তে পদ্মা-মেঘনা নদী উত্তাল এবং বাতাসের গতি ছিলো অন্য দিনের তুলনায় বেশী।

রবিবার (১৪ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহরের বড় স্টেশন তিন নদীর মোহনার পূর্ব পার্শ্বে শত শত দর্শনার্থী ভীড় জমায়। ঘুর্ণিঝড় মোখার প্রভাব কেমন এটি দেখতে আসেন অনেকে। আবার উৎসুক কিছু মানুষ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে বিকেল ৫টার পর থেকে। এছাড়াও রাজরাজেস্বর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হযরত আলী নদী এলাকায় নৌ-পুলিশ ও রেডক্রিসেন্ট সদস্যদের তৎপরতা ছিলো লক্ষনীয় ।

মোলহেডের গোলাকার স্থানটির উত্তর ও দক্ষিণে লাল পিতা দিয়ে বিপদজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। যাতে কোন দর্শণার্থী শেষ স্থানে যেতে না পারে। এই বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াছ। তিনি কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে দর্শনার্থীদের বিপদজনক স্থানে না যাওয়ার দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে চাঁদপুর সদর মডেল থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও দায়িত্ব পালন করতে দেখাগেছে।

ফরিদগঞ্জ থেকে মোলহেডে এসেছেন দর্শনার্থী আব্দুর রহিম ও কামরুল হাসান। তারা বলেন, আমরা স্বাভাবিকভাবে এখানে ঘুরতে আসি এবং সময় কাটাই। তবে আজকে ঘুর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে নদীতে বড় বড় ঢেউ ও বাতাসের তীব্রতা দেখতে পেলাম।

চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম বলেন, বিকেলে এসে দেখলাম মেঘনা নদীতে কোন নৌযান নেই। তীব্র বাতাস ও বড় বড় ঢেউ পাড়ে এসে আছরে পড়ছে। ভয়ে জেলেরাও নদীতে নামে না।

চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্ মো. শোয়েব জানান, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা ৬টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে এবং দূর্বল হয়ে সিটুয়ে, মায়ানমারে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দূর্বল হতে পারে।

তিনি আরো জানান, চাঁদপুর অভ্যন্তরীন নদী বন্দর সমূহের জন্য ৪ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় থাকবে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম সন্ধ্যায় জানান, মেঘনা নদীর পানির উচ্চতা তেমন বাড়েনি। আজকে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১.৮৮ সেন্টিমটার এবং সর্বনিম্ন ছিল ১.০৭ সেন্টিমিটার। আর গতকাল শনিবার (১৩ মে) পানির উচ্চতা ছিল ১.৮২ সেন্টিমিটার। শহর রক্ষা বাঁধসহ অন্যান্য এলাকা আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বিঅআইডাব্লিউটিসি চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাটের দায়িত্বরত সহকারী মহা ব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) ফয়সাল আলম চৌধুরী জানান, চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুই পাড়ে প্রায় ৯০টি যানবাহন পারাপারের জন্য অপেক্ষমান আছে।

চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, শুক্রবার দিনগত রাত চাঁদপুর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ। আজকে নদী উত্তাল। এখনো জেলার আভ্যন্তরীন নৌ বন্দরকে ৪ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পর আবার লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল চলবে। কারণ উপকূলীয় এলাকায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায়। সার্বিক খোঁজ খবর নেয়ার পর সিদ্ধান্ত আসবে।

সম্পর্কিত খবর