মতলব উত্তরে তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

মতলব উত্তর প্রতিনিধি :বৈশাখের শুরু থেকেই তীব্র তাপদাহে পুড়ছে মতলব উত্তরসহ সারাদেশ। আরো দুদিন এই অবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কয়েক দিনের টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। গরমে হাসফাস অবস্থা মানুষের। দক্ষিণের বায়ুপ্রবাহ না থাকায় তাপ প্রবাহের স্থায়ীত্ব বেশি হচ্ছে। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।

এদিকে তীব্র তাপদাহে দীর্ঘসময় ধরে লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে মতলব উত্তর উপজেলার সাধারণ মানুষ। গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেল ৩টায় মতলব উত্তরে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দুপুর ১২টায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৫৭ শতাংশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার বেশীরভাগ এলাকায় দিনের দীর্ঘ একটা সময় ধরে বিদ্যুতের যথাযথ সরবারহ থাকছে না। দিনের দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ আসলেও আধা ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ এক ঘন্টার বেশী থাকছে না।

মতলব উত্তর উপজেলার সরদারকান্দি এলাকার বাসিন্দা আকতার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নামাজের সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা ঠিকমতো নামাজও পড়তে পারি না। প্রায় সময় বিদ্যুৎ থাকে না। কয়েকঘন্টা পরপরই বিদ্যুৎ আসে, কিছুুক্ষণ থাকার পর আবার চলে যায়।’ লোডশেডিয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীরা। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

এক এসএসসি পরীক্ষার্থী জানান, ‘বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকায় পড়াশোনা করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে ঠিকমত পড়তে বসতে পারিনা’ নতুন বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বেপারী বলেন, প্রচণ্ড গরমে মনে হচ্ছে পুরো উপজেলা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় চলাচল করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাযায়, ৫দিন যাবৎ থেকে উপজেলায় তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এতে হাসপাতালেও গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরমে ডায়রিয়া, জ্বর, হিটস্ট্রোক আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশুসহ ২৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। গরমে শিশুরাই বেশি ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. সামসুদ্দীন জানান, ‘স্বাভবিক সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল দিনে ১৪ মেগাওয়াট ও রাতে ১৮ মেগাওয়াট। ‘তীব্র গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দিনে ১৬ মেগাওয়াট ও রাতে ২১ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। আবার রাত ১২ টার পর বিদ্যুৎ পাচ্ছি মাত্র ৯ মেগাওয়াট। আমরা চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। যার ফলে গ্রাহকদেরকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারছি না।’

মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ‘গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, শরীরে ঘাম বসে নিউমোনিয়া, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর ও প্র্রস্র্র্রাবে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। এসব রোগ নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে তারা। আমরা শিশুকে ঘরের বাইরে বের হতে না দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি অভিভাবকদের। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও টাটকা খাবার খাওয়াতে ও ফ্যানের নিচে রাখতে বলছি।’

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল হাসান বলেন, ‘বিশেষ প্রয়োজন না হলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বাসা থেকে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রয়েছে। হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা হাসপাতালে এসে চিকিৎসাসেবা নেয়ারও অনুরোধ করা হলো।’

সম্পর্কিত খবর