চাঁদপুরের ঐতিহাসিক ৮টি বিনোদন কেন্দ্রিক পর্যটন নির্ভরস্থল

শওকত আলী : ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের তিন নদীর মোহনাসহ অল্প ব্যয়ে কম সময়ে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য চাঁদপুরে রয়েছে ,ঐতিহাসিক ৮টি বিনোদন কেন্দ্রিক পর্যটন নির্ভরস্থল চাঁদপুর জেলার ঐতিহাসিক কালের সাক্ষীর নিদর্শন।

এ চাঁদপুর নৌ-সীমানায় বেষ্টিত এলাকার পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলস্থলসহ আটটি স্থান ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত শহরের তিন নদীর মোহনা চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকার মোলহেড, হরিপুর জমিদার বাড়ি,হরিণা ফেরিঘাট, রূপসা জমিদার বাড়ি, সাহেবগঞ্জ নীলকুঠি, চান্দ্রা লোহাগড়া মঠ, মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র ও হাজীগঞ্জে ঐতিহাসিক বড় মসজিদ ।

ফরিদগঞ্জের ঐতিহাসিক পর্যটন নির্ভর চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী উল্লেখ্যযোগ্য নিদর্শনের স্থান রয়েছে। যে স্থানটি এখন শত বছরের পুরাতন ও কালের সাক্ষি হিসেবে দন্ডমান। এখানে বহু বছর আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত-শত ভ্রমন পিপাসু ও আবেগপবন মানুষেরা এ জায়গা গুলোতে আসে। এখানটিতে এসে তারা তাদের মনের মাধূরি মাখা মনের খোরাক মিটাতেও আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেছে।

যেখানটি বর্তমানে দর্শনিও স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানকার এ শত বছরের পুরাতন কালের স্বাক্ষী ও নিদর্শন গুলো পুরো আনন্দ উপভোগের জন্য দর্শনার্থীদের জন্য একটি উল্লেখ্যযোগ্য স্থানে পরিনত।

এখানে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য তাদের বিনোদনের জন্য আরো উপযোগী করে তোলা প্রয়োজন। এ স্থান গুলো আরো সুন্দর করার জন্য সরকারি অর্থ ব্যয়ে এ স্থানগুলো আরো আলোড়ন সৃস্টিকারী স্থান হিসেবে গড়ে তোলার দাবী এলাকাবাসীর। এলাকারবাসী জানান, এ বিনোদন নির্ভর স্থানগুলোকে আরো বিনোদন উপযোগী করে তুলতে সরকার এখানকার এ পর্যটন নির্ভর স্থানকে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় নিয়ে সঠিক ভাবে পরিচালিত করলে এখান থেকে প্রতিদিন মানুষকে বিনোদন দিয়ে বিরাট অংকের অর্থ উপার্যন করতে পারে বলে স্থানীয় সচেতন নিটিজেনদের মতামতে প্রকাশ পেয়েছে।

প্রতি বছর ২টি ঈদ, বিশেষ উৎসব ও অবসরকালীন সময়ে যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে চাঁদপুর জেলার ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এ ৭টি স্থান ঘুরে আসতে পারেন। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ভ্রমণপিপাসুরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসব স্থানে আসে আনন্দ উপভোগ ও ভ্রমণের জন্য।

চাঁদপুরের ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত শহরের তিন নদীর মোহনা চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকার মোলহেডসহ প্রাকৃতিক পরিবেশে এসব স্থানগুলোতে আসলে কিছু সময়ের জন্য হলেও মন প্রফুল্লতায় ভরে উছে এবং শীতল বাতাসে মন ভরে উঠে। এখানে কিছুখন বসে থাকলে মনে হয় যেন প্রকৃতির বাতাসে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।

আপনি চাঁদপুরের বিনোদনের জন্য আসলে কীভাবে এসব পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করবেন তা’ যেনে নিন:
রেলওয়ে চাঁদপুর স্টেশন মোলহেড এলাকা—-

চাঁদপুর এসে এখান থেকে চাঁদপুর শহরের চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মোলহেড থেকে শুরু করতে পারেন। লঞ্চঘাট থেকে নেমেই এই অভিরাম ও নয়নাভিরাম স্পটটি। রিকশায় ভাড়া মাত্র ২০ টাকা। হেঁটেও আসা যায় ১০মিনিটে। শহরের কালিবাড়ী জিরো পয়েন্ট থেকে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসতে অটোরিকশায় লাগবে প্রতিজনের জন্য ১০ টাকা ভাড়া। সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিটা।

তিন নদীর মোহনা চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মোলহেডে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মিলন স্থল, শেষ বিকেলের পরন্ত সময় সূর্যাস্ত,ডুবার দৃশ্য দেখা যাবে, মেঘনায় ট্রলার ও স্পীডবোট দিয়ে ঘুরতে ঘুরকে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। এস্থানটিতে বিভিন্ন প্রকার দামের নাস্তা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মোলহেড:— এখান থেকে হরিণা ফেরিঘাট

অল্প সময়ে এসব কাজ শেষে মোলহেড থেকে রওনা করতে পারবেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে হরিণা ফেরিঘাট। সেখানে যেতে ভাড়া লাগবে প্রতিজন ৫০ টাকা। সেখানে তাজা ইলিশ ভাজা খাওয়া, নদীর অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যাবে এবং মনোরম পরিবেসে ছবিও তুলতে পারবেন আনন্দের সাথে।

চাঁদপুর সদরের হরিপুর জমিদার বাড়ি:—

হরিণা ফেরিঘাট, এখান থেকে অটোরিকশা যোগে যেতে হবে সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের হরিপুর জমিদার বাড়িতে। সেখানে যেতে ভাড়া লাগবে প্রতিজন ৪০-৫০ টাকা। যদি নিজস্ব বাইক থাকে খুব কম সময় লাগবে। সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। হরিপুর ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িতে আপনি কমপক্ষে ৩০মিনিট সময় থাকলেই মন ভরে যাবে।

সে প্রবীন জমিদারদের পুরোনো নকশায় তৈরি বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে সেখানে। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে সেখানে। জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আছে প্রয়াত জমিদারদের সমাধিস্থল।

বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখা ও ছবি তুলতে ভালো সময় কাটাতে পারবেন। এটি শুধুমাত্র দর্শনীয় স্থান নয়, এখানে সিনেমা ও নাটকের শুটিংও হয়েছে কয়েক বছর পূর্বে। জমিদারদের বর্তমান প্রজন্মদের থেকে অনুমতি নিয়ে শুটিং করতে পারবেন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা জমিদার বাড়ি ও লোহাগড়া মঠের দৃশ্যপট:—

চাঁদপুর সদরের চান্দ্রা হরিপুর ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি ভ্রমণ শেষে পাশবর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা জমিদার বাড়ি, সাহেবগঞ্জ নীলকুঠি, চান্দ্রা লোহাগড়া মঠ পরিদর্শনে যেতে পারবেন। এতে সময় ব্যয় হবে ৫ ঘণ্টার মতো। এক্ষেত্রে মোটরসাইল না থাকলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে যেতে পারবেন। ৫ ঘণ্টার জন্য কমপক্ষে ভাড়া গুনতে হবে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মত। এই উপজেলা ভ্রমণের সময় সফরসঙ্গী নেওয়া যেতে পারে একাধিক। এসব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো গড়ে ৫-৭ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে।

হরিপুর জমিদার বাড়ি, রূপসা জমিদার বাড়ি,লোহাগড়ার মঠ ভ্রমণ শেষ। এখন যেতে পারবেন,ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ কমপ্লেক্রে:—-

৩টি ঐকিহাসিক নিদর্শন দেখে আপনি ফরিদগঞ্জ ভ্রমণ শেষে আপনি পাশবর্তী উপজেলা হাজীগঞ্জে ঐতিহাসিক বড় মসজিদ পরিদর্শন করে নামাজ আদায় করে নিতে পারেন। সেখান থেকে বাস যোগে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা হতে পারবেন। লঞ্চে যেতে চাইলে সেখান থেকে যেতে হবে চাঁদপুর সদর নৌ-টার্মিনাল লঞ্চঘাট এলাকায়।

চাঁদপুর সদর থেকে নদী পথে অথবা সড়ক পথে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র:–

সেখানে থেকে বেশি সময় কাটাতে চাইলে ঘুরে আসা যাবে, মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র লিমিটেড এলাকায়। নারায়ণগঞ্জ থেকেও লঞ্চে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে আসা যায়। এখানে পর্যটকরা পরিদর্শনসহ সবকাজেই নগদ ব্যয় করতে হবে। এখানের খাওয়া -দাওয়া উন্নত মানের এবং দামও মোটামুটি বেশী।

চাঁদপুরের তরুণ লেখক ও কবি মনিরুজ্জামান বাবলু ভ্রমণ প্রসঙ্গে বলেন, চাঁদপুরের ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে অনেক। তবে অল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করতে হলে আপনাকে তিন নদীর মোহনা, হরিপুর জমিদার বাড়ি, হরিণা ফেরিঘাট, ফরিদগঞ্জের ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শন করতে পারেন।

এছাড়া সময় নিয়ে ভ্রমণ করতে চাইলে হাজীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বড় মসজিদ, অলিপুর মাজার, শাহ সুজা ও আওরঙ্গজেবের মসিজদ, শাহরাস্তির রাস্তি শাহ্ মাজার, মন বাগান, কচুয়ার সাচার রথ, মানসী মুড়া পরিদর্শনে যেতে পারেন। এছাড়াও মন ভাল করার জন্য সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখতে যেতে পারেন হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী মেঘনা পাড়ের সুন্দর্যবর্ধন নদীর কিনাড়ায়।

ভ্রমন ও ফিচার লেখক রিফাত কান্তি সেন বলেন, চাঁদপুরের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে কিছু কিছু স্থাপনা এখনো সঠিক ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি।

আবার কোনটি সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। যেমন সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বড় সুন্দর গ্রামের ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদটি সংস্কার করা হয় সরকারি ভাবে। এখন সেখানে খুবই সুন্দর পরিবেশ করা হয়েছে। এছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী ও শোল্লা এলাকায়ও রয়েছে,বড় জমিদার বাড়ি যা’চোঁখে দেখলে মন ভরে যাবে এবং চোঁখ জুড়িয়ে যাবে।

সম্পর্কিত খবর