চাঁদপুরে আধুনিক সাংবাদিকতার বাঁক বদল ও আল ইমরান শোভন

………………….কাদের পলাশ……………….

কোনো এক মার্চ কী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়। মধ্য রাত। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। আমি এক সহকর্মীসহ (এ কে এম শাহেদ) চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা মোড়ে গল্প করছি। প্রসঙ্গ চাঁদপুরের সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা। এক ফাঁকে আমাদের সাথে যুক্ত হলেন আল ইমরান শোভন ভাই। তখন তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, বিডিনিউজ২৪ ডট কম এর চাঁদপুর প্রতিনিধি। আর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহে।

ডান হাত প্রসারতি করে জানতে চাইলেন কেমন আছি। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে মাথার চুলগুলো ভিজে আলাদা সিল্ক মারছে। মুখমন্ডলেও বৃষ্টির দাগ। হালকা মিহি আলোতে খুব স্মার্ট দেখাচ্ছে। আমার ধারণা পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি লম্বা মানুষ শোভন ভাই। একযুগ আগের গল্প হলেও পরিচয় আরো আগের। মিনিট দশেক দাড়িয়ে আমাদের সাথে কথা বললেন। সবশেষ একটি তথ্য জানালেন তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের চাকুরি ছেড়ে দিয়েছেন।

সহসাই যোগ দিবেন চ্যানেল২৪ এর চাঁদপুর প্রতিনিধি হিসেবে। ঠিক একদশক পর একই সময়ে অসুস্থ শোভন ভাইকে খুব মিস করছি। বাহিরে হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আমার মনের ভেতর সেই রাতের স্মৃতি আওড়াচ্ছে। অথচ আজ তিনি অসুস্থ হয়ে ভিনদেশে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হয়ে ফিরে আসার অপেক্ষায়।

আমার দৃষ্টিতে চাঁদপুরে আধুনিক সাংবাদিকতার বাঁক বদল করেছেন শোভন ভাই। তাঁর আচার আচরণে চাঁদপুরে সকল সাংবাদিক মহলে সুখ্যাতি। সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। ২০০৭ সাল আমি সবে মাত্র সাংবাদিকতা শিখছি। কারো কাছে নয়। নিজে নিজে। খবর নিয়ে জানতে পারি শোভন ভাই চাঁদপুরে সবচে দ্রুত গতির সাংবাদিক। মানে যখনই ঘটনা তখনই শোভন ভাইয়ের কাছে নিউজ বা তথ্য চলে আসে।

চলমান সকল ঘটনাই শোভন ভাইয়ের হাত হয়ে অন্য সাংবাদিকরা পাচ্ছে। শোভন ভাই বয়সে আমার থেকে খুব বেশি বড় না হলেও সাংবাদিকতায় অনেক সিনিয়র। আমি তাকেই র্টাগেট করি। স্থানীয় সাংবাদিকতায় নজর কাড়তে হলে তার মতোই হতে হবে।

তাকে দেখেই সাংবাদিকতায় আমার পথ চলা আরো গতিশীল হতে শুরু করলো। কিন্তু মাঝে মাঝে পিছু হটি। একটা অনিশ্চিত পেশায় পেরে উঠবো? নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে পথ চলতে থাকি। ভাবি রাস্তার পাশে একটা কম্পিউটার নিয়ে কম্পোজ করলেও চার-পাঁচশ টাকা আয় করা যাবে। ২০০২ সালেই যেহেতু কম্পিউটারের বেসিক প্রোগ্রামগুলো শিখেছি।

ততদিনে জানা হয়ে গেছে সাংবাদিকের বড় শত্রু সাংবাদিক। সে নিজে কিছু না হতে পারলেও অন্যের কিছু হওয়া নিয়ে হিংসায় বিভোর থাকে। নানান প্রশ্নে জর্জরিত করে তোলে সফল মানুষটিকে। সবশেষ না পারলে উড়ে এসে জুড়ে বসার গল্প শুনায়। অথচ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিরপাড়ার ছেলে জাতীকে স্বাধীনতা উপহার দেয়। প্রধানমন্ত্রী হয় অন্য কোনো গ্রামের মানুষ।

কিংবা আরো হাজারো সফলতার গল্প শুধু অজপাড়া গাঁয়ের মানুষের। আলোকিত আলোচিত মানুষের বেশিরভাগই গাঁ থেকে উঠে আসা মানুষ। ওই অথর্বদের কে বুঝাবে? যা হোক, সবশেষ ২০১০ সাল থেকে পুরো দমে মাঠে নেমে যাই। সাংবাদিকতাই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করি। এর মাঝে শোভন ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। কিন্তু সম্পর্কটা নিবিড় হয় না। হয়ে উঠে না।

অথচ আমি কিন্তু তাকে ফলো করছি। তার থেকে ভালো কাজ করার ব্রত নিয়ে পথ চলছি। সফল হতে পারি বা না পারি একজন দক্ষ ও ভালো মানুষকে আমি অনুকরণ করতে করতে এগিয়ে যাবে যা শুধু নিজের মাঝে বহন করছি। শ্রদ্ধাভাজনেষু আলম পলাশ ভাই আমার পথ প্রর্দশক। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, গতিশীল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তৈরির আমার গোপন ওস্তাদ আল ইমরান শোভন। যা এই প্রথম উপস্থাপন ও স্বীকার করলাম। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে খুব ভালোবাসি। তৃপ্তি বোধ করি।

সাংবাদিকতায় যেটুকু অর্জন তা নিয়ে গর্ববোধ না করি কিন্তু জেলা পর্যায়ে এর থেকে বেশি কিছু আশাও করি না। একজন সুঠামো দেহের মার্জিত মানুষ শোভন ভাই। তাঁর আশু সুস্থতায় দোয়া করা হয়েছে মসজিদ ও এতিমখানায়। মোনাজাতে মনের অজান্তেই চোখ থেকে জল ঝরছিলো আমার। এই এখনও যে লেখাটি লিখছি ঠোঁট কাঁপছে চোখের কোণে নোনাজল টলটল করছে। বুকের ভেতর এক ভিন্ন রকম খারাপ লাগছে। অর্থাৎ ভালো না লাগা। মানে শোভন ভাই অসুস্থ তা মন কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। একটা চরম সত্যকে মানতে না পাড়া মানেই খুব ভালোবাসি ।

ভালোবাসি এর চেয়ে গভীর শব্দ হয় না। হাজার হাজার শব্দবুনন হবে কিন্তু ভালোবাসা বা বোধ বোঝানো কোনো ভাবেই সম্ভব না। বুঝে নিবেন। প্রার্থনা ভাই যেন ভালো হয়ে যায়। টেলিভিশন সাংবাদিকতায় চাঁদপুরে আপনার অবদান অনস্বীকার্য। আপনার নেতৃত্বে চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম অনেক সমৃদ্ধ। আপনি অসুস্থ এখন আর ফোরামের জন্যে কাজ করতে ইচ্ছে হয় না। আপনাকে ছাড়া আমরা কাশ্মীর ভ্রমণ করেছি। করতে চাইনি।

আপনি অনুমতি দিয়েছেন তারপরেই আমাদের ভ্রমণের কার্যক্রম শুরু করি। আপনি কোনো ভাবেই চাননি এ ভ্রমণ বন্ধ থাকুক। আপনি চেয়েছেন বলেই এতো বড় কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। আপনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। ফিরে আপনাকে আসতে হবে। কারণ আবার আমার একসাথে ঘুরতে যাবো। কক্সবাজার সেন্টমার্টিন প্রকৃতিকে উপভোগ করবো। আপনাকে ফিরে আসতেই হবে।

এখনো অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে ভাই। আরো অনেক কাজ করতে চাই একসাথে। আপনি আমার হৃদয়ের গোপন আসনে গুরু। আপনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তা আপনাকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবেন। আমরা আবার মাঠে ময়দানে তথ্যের জন্য দৌড়াবো। একসাথে এক হয়ে কাজ করবো। সে অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। নিশ্চয় আপনি সুস্থ হয়েই ফিরে আসবেন। আল্লাহ আমাদের নিরাশ করবেন না।

লেখক পরিচিতি:
কাদের পলাশ
সাধারণ সম্পাদক
চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম ।

সম্পর্কিত খবর