হাজীগঞ্জ আরিয়ানা মেডিকেল সেন্টারের প্রসূতির মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়!

গাজী মহিনউদ্দিন: হাজীগঞ্জে আরিয়ানা মেডিকেল সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনে দায়িত্বের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু’র অভিযোগ তুলে ধরেছেন স্বজনরা। একের পর এক দীর্ঘ হচ্ছে প্রসূতি মৃত্যুর তালিকা।

অপারেশনে অবহেলার দায় এড়াতে হাসপাতালের নিজস্ব লোকবল দিয়ে তড়িৎগতিতে রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সে কুমিল্লায় পাঠায়। কুমিল্লা টাওয়ার হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করে।

হাজীগঞ্জ বাজারের প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে সিজারিয়ান অপারেশনে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। আর্তনাতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এতিম হচ্ছে নবাগত শিশু। হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনে দায়িত্বের অবহেলায় ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। এতে এক সময়ের চিকিৎসা সেবায় সুনাম অর্জন করা হাজীগঞ্জ বাজারের প্রাইভেট হাসপাতালোর দায়িত্বে গাফিলতিতে আস্তা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ইসলামিয়া মর্ডান হাসপাতালে জরায়ু কেটে কনডম দিয়ে সেলাই, হাজীগঞ্জ সেন্ট্রাল হসপিটালে সিজারিয়ান অপারেশনে গাফিলতিতে মৃত্যু শয্যায় প্রসূতি, নবাগত শিশু পরপারে, ভিআইপি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের ৩দিন পর প্রসূতির মৃত্যু, চাঁদপুরের মুন হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনার রেশ না কাটতেই আবারো হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজার পৌর ভবন সংলগ্ন আরিয়ানা মেডিকেল সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনে দায়িত্বের অবহেলায় সানজিদা নামে ১৯ বছর বয়সী গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনায় ভোর রাতে হাসপাতালের সামনে হট্টোগোল সৃষ্টি হয়।

নিহত সানজিদা শাহরাস্তি উপজেলার মুড়াগাঁও গ্রামের হাজী বাড়ির মহিনুল ইসলামের স্ত্রী এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা মিয়াজী বাড়ির শাহজালালের মেয়ে।

প্রসূতি সানজিদার মৃতদেহ বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স প্রায় ৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও হাসপাতালের গেইট খুলে এগিয়ে আসেনি কেউ। প্রসূতির স্বজনদের আহাজারিতে জড়ো হতে থাকে উৎসুক জনতা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাজীগঞ্জ থানার এস.আই আব্দুল আজিজ সঙ্গীয় ফোর্স পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এসে সকাল ৮টায় প্রসূতির মৃতদেহ থানায় নিয়ে আসে।

প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তাদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। এনেসথেসিয়া কনসালটেশন ডা. আরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, অপারেশনের আগেই অসুস্থ্য ছিল প্রসূতি। এদিকে ডাক্তার জান্নাত আরা ঝুমা পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্টে বলছে অপারেশনের পূর্বে রোগীর অবস্থা ভালো ছিল। ডা. আবিদা সুলতানার সাথে যোগাযোগ করে বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

নিহত প্রসূতি সানজিদার মা শিল্পি বেগম ও মামার ভাষ্যমতে জানা যায়, ১৮ এপ্রিল হাজীগঞ্জ সেন্ট্রালে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে রোগীকে নিয়ে যায় স্বজনরা। সাম্প্রতিক সময়ে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় নড়ে চড়ে বসে তারা। সেন্ট্রাল হসপিটাল থেকে সিজারিয়ান অপারেশনে জন্য আরিয়ানা হসপিটালে পাঠায়। আরিয়ানা মেডিকেল সেন্টারে গাইনী ডাক্তার জান্নান আরা ঝুমু প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করান।

রাত ১০টায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় দেওয়া হলেও ইফতারের ঠিক আগ মূহুর্তে সন্ধ্যা ৬টায় সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। ভিআইপি হসপিটালের পরিচালক এনেসথেসিয়া কনসালটেশন ডা. আরিফুল ইসলাম সুমন এনেসথেসিয়া করান এবং ডা. আবিদা সুলতানার নেতৃত্বে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।

রোগীর স্বজনের ভাষ্যমতে বাচ্চাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে আনা হলেও প্রসূতি সানজিদাকে ভিতরে রেখে ইফতারিতে চলে যায় সবাই। রোগীর স্বজনরা বার বার রোগীর খোঁজ নিতে জিজ্ঞাসা করলে ভালো আছে বলে তাদের জানানো হয়।

ঘন্টাখানেক পর রোগীর অবস্থা গুরুত্বর বলে কুমিল্লায় পাঠানোর জন্য হাসপাতালের নিজস্ব লোক দিয়ে তড়িৎগতিতে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। কুমিল্লা টাওয়ার হসপিটালে নেওয়ার যাওয়ার পর আইসিওতে ভর্তি করার কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের জানায় রোগী অপারেশনের পরপরই মৃত্যু বরণ করে।

কুমিল্লা থেকে এ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে হাসপাতালের সামনে অবস্থান করে। হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে থানায় অবস্থান নেয় রোগীর স্বজনরা। কোন অভিযোগ না দেওয়ায় পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাই জানতে এনেসথেসিয়া কনসালটেশন ডা. আরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো ছিল না। হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। অপারেশনে কোন ত্রুটি হয়নি।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জোবাইল সৈয়দ বলেন, রোগীর স্বজনদের কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর