ফরিদগঞ্জে এক বছরে ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকার ইয়াবা উদ্ধার

মামুন হোসাইন: ফরিদগঞ্জে মাদক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্য ফরিদগঞ্জ। জালের মতো তা ছড়িয়ে গেছে উপজেলার প্রায় প্রতিটি কোনায় কোনায়।

ফরিদগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর তথা ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ১৬ হাজার ৬শথ ৭৭ পিচ ইয়াবা, ৪৯ কেজি ৯৭৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।

১৬,৬৭৭ পিচ ইয়াবার আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইয়াবা উদ্ধার করতে গিয়ে এ সময় পুলিশ ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে নগদ ৩৯ হাজার টাকাও উদ্ধার করে। মাদক বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় ১৬৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই সাথে ২০১ জনকে আটকে করে পুলিশ।

অপ্রতিরোধ্য মরণঘাতী নেশা ইয়াবা এখন নানা অপরাধের প্রধান নিয়ামক। এই ভয়াল মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন। ইয়াবায় আসক্ত সন্তানের হাতে বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম অত্যাচারের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নেশাখোর মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার ক্রোধে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

গত এক বছরে ফরিদগঞ্জে মাদকের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো- ২৮ জানুয়ারি ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ৪ কেজি গাঁজাসহ দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি উপজেলায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ৪০ বছর বয়সের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। ২ মার্চ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভাটিয়ালপুর থেকে ১ হাজার ৫০পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি আটক করে পুলিশ।

৯ এপ্রিল উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নে ৪০ পিচ ইয়াবাহসহ শরীফ (৩১) নামের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬ এপ্রিল উপজেলার লক্ষীপুর গ্রাম থেকে গভীর রাতে পুলিশ শাহজাহান আটিয়া (৪০) নামের একজনকে ৫০ পিস ইয়াবাহসহ আটক করে। ১৮ মে উপজেলার রূপসায় মাদকসহ ২জনকে আটক করে পুলিশ।

৮ জুন উপজেলার গোবিন্দপুর থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ তাসলিমা বেগম (২৬) নামের এক নারীকে আটক করে পুলিশ। ২৪ জুলাই উপজেলার ১৪নং ইউনিয়ন থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে শামিমকে ৫১ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছে পুলিশ। ২৭ জুলাই উপজেলার পৌর সদরে ১শ ৫ পিস ইয়াবা ও ১ কেজি গাঁজাসহ পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে।

২৯ জুলাই উপজেলার আইটপাড়া গ্রাম থেকে ১ কেজি গাঁজাসহ ২ জনকে আটক করে পুলিশ। ২৪ আগস্ট পৃথক অভিযানে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ২ কেজি গাঁজাসহ ২জনকে আটক করে। ২৪ ডিসেম্বর : ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভাটিয়ালপুর এলাকা থেকে ২০৭ পিস ইয়াবাসহ শরীফ শেখ বাবু নামের একজনকে আটক করে চাঁদপুর ডিবি পুলিশ।

বিগত বছরে ফরিদগঞ্জে মাদক উদ্ধারে সবচেয়ে সফল পুলিশ কর্মকর্তা হলেন এস আই নুরুল ইসলাম। তাঁর এই সফলতার পিছনের রহস্য সম্পর্কে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মূলত দেশ প্রেম থেকে আমার এ কাজ। আমি মনে করি এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। রাষ্ট্র আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। আমি কাজ করতে গিয়ে দেখেছি- কত মায়ের কান্না, বাবার অসহায়ত্ব।

এই মাদকের ভয়াল থাবায় অনেক পরিবারের শান্তি হারিয়ে গেছে, অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব ঘটনা দেখে আমি স্থির থাকতে পারতাম না। ঘটনাগুলো আমাকে মানসিক যন্ত্রনা দিতো। আল্লাহপাক যেহেতু আমাকে সুযোগ দিয়েছেন, তাই আমি আমার ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছি। অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজের ভিতর এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।থ তিনি আরো বলেন, ‘সমাজের প্রায় প্রতিটি অপরাধের অপরাধী কোনো না কোনোভাবে মাদকের সাথে যুক্ত। হত্যা, ধর্ষণ, মারামারি, চুরি ডাকাতি, অপহরণ এই ঘৃণ্য কাজগুলো যারা করে এদের অনেকেই মাদকের সাথে যুক্ত।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে কিশোর তরুণদের বাবা-মাকে অনেক বেশী সচেতন হতে হবে। স্কুল, কলেজে গিয়ে মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন আমি করে যাচ্ছি। কারণ ভোক্তা কমাতে পারলেই এ আন্দোলনের সফলতা আসবে। সকল পেশাজীবী এবং সব শ্রেণির মানুষকে একযোগে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

যাকে যেভাবে বুঝানো যায়, বিশেষ করে মেডিকেল সায়েন্স এবং ধর্মীয় বিষয়গুলোও মাদকসেবী এবং কারবারীদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। আমি ঠিক সেভাবেই এগুচ্ছি। আমাদের উর্দ^তন কর্মকর্তারা বিষয়টি মনিটরিন করছেন এবং মাদক উদ্ধার ও এর ভয়াবহতা থেকে সমাজকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।থ

সম্পর্কিত খবর