শাহরাস্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করায় প্রতিবাদ সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে এই সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুই শতাধিক মুক্তিযুদ্ধা অংশ নেন।

প্রতিবাদ মাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ।

প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান বিএসসি’র সভাপতিত্বে ও শাহরাস্তি উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কমান্ডার শাহজাহান পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ইয়াকুব আলী মাস্টার, সহকারি কমান্ডার মৃণাল কান্তি দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ উল্লাহ পাটোয়ারী।

প্রতিবাদ সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে উপজেলা আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মিন্টু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির মত গুরুত্বপর্ণ দায়িত্বে থেকেও তার এমন বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ অপমানিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ স্বাধীনতার নেতৃত্বে দেয়া দলের দায়িত্বে থেকে একজন মানুষ কী করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অপমানজনক বক্তব্য দিতে পারে।

বক্তারা বলেন, যে কামরুজ্জামান মিন্টু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করেছেন, মুক্তি যুদ্ধের সময় হয়তো তার জন্মই হয়নি। হলেও হয়তো তিনি শিশু-কিশোর ছিলেন। তাছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ পরিবারের সন্তান। এটি সকল মুক্তিযোদ্ধারা জানেন। তিনি কেবল আমাদের অপমান করেনি, তিনি আওয়ামী লীগের ইমেজকে নষ্ট করার অপেচেষ্টা করেছে। আমরা তার এমন দৃষ্ঠতার কঠোর বিচার দাবী করছি। যেহুতু আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আর বর্তমান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপদেষ্টা, তাই তার কাছেই আমরা বিচার দিলাম। তারা অবিলম্বে কামরুজ্জামান মিন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিঃস্কার করার দাবী জানান।

বক্তারা আরো বলেন, যুদ্ধের সময় শাহরাস্তি উপজেলার অনেক কৃতি সন্তান দেশের নানা প্রান্তে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। কিন্তু তারা এই উপজেলারও মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের গর্ব, মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম তিনিও অন্য জেলায় যুদ্ধ করেছেন। তিনি গোটা বাংলাদেশের গর্ব। কাজেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করার আগে সঠিক তথ্য জানতে হবে।

কামরুজ্জামান মিন্টু যদি অবিলম্বে তার বক্তব্যে জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা না চায়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো। শুধুমাত্র শাহরাস্তি বা চাঁদপুরেই নয়, সারা দেশে কেউ যদি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।

উল্লেখ্য : গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত ইফতার পার্টিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করেন শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মিন্টু। ওই বক্তব্য তিনি বলেন, এ উপজেলায় ১৫/১৬ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অথচ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আছে ৫/৬শ’ জন। যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, তারাই এইসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বানিয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, সেদিনের বক্তব্যে আমার শব্দ চয়ানে কিছু ভুল ছিল। আমি কখনো কোন অবস্থাতেই মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে না। আমি বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক। মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সর্বোচ্চা সম্মান করি। এই অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য আমি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

সম্পর্কিত খবর