চাঁদপুর মেডিক্যাল সেন্টারের নাম করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন ইলিয়াছ

স্টাফ রিপোর্টারঃ চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ সড়কের পূর্ব পাশে বিদেশগামী লোকদের মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হিলশা মেডিক্যাল সেন্টারের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে বিভিন্ন লোকদের কাছে শেয়ার বিক্রি ও চাকুরী দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরন বলিয়ারচর এলাকার আমিনুল হকের পুত্র প্রতারক ইলিয়াছ।

এ বিষয়ে চাঁদপুর আদালত, পুলিশ সুপার বরাবর ও মডেল থানায় ইলিয়াছের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়।

ভোক্তভোগী মিশন রোড এলাকার মোঃ মহসীন ভূঁইয়া জানান, লোক মারফতে ইলিয়াছের সাথে আমার পরিচয় হয়। সে পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন বিদেশগামী লোকদের মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হিলশা মেডিক্যাল সেন্টার নামীয় একটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান খোলে এবং উক্ত মেডিকেল সেন্টারের শেয়ার হওয়ার জন্য আমাকে প্রস্তাব করলে আমি সরল বিশ্বাসে রাজি হই। অতঃপর উভয়ের বিভিন্ন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমি উক্ত প্রতিষ্ঠানে শেয়ার হই। শেয়ার হওয়ার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও ইলিয়াছ প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমোদন আনতে না পারায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা চালু করতে পারেনা। এমতবস্থায় বিভিন্ন লোকজন তার কাছে শেয়ারের টাকা ফেরৎ নিতে আসে।

তখন আমার সন্দেহ হলে আমিও এ প্রতিষ্ঠানে থাকবোনা মর্মে জানিয়ে দেই। সেও তাতে রাজি হয়। এক পর্যায়ে শালিশি বৈঠকের মাধ্যমে কাট ছাট করে আমি শেয়ারের ২২ লক্ষ টাকা পাওনা হই। উক্ত টাকার বিপরীতে ইলিয়াছ আমাকে ৩০/১০/২০২২ইং তারিখে তার নামীয় ব্র্যাক ব্যাংক এর একটি চেক প্রদান করে। যার হিসাব নং- ০৯০২১০২১৫৩০২৩০০১, চেক নং- এসবিসি ৫৬২০৪০৮। এছাড়াও ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত দেওয়া হয়।

ভোক্তভোগী মহসীন আরো জানায়, উক্ত চেকখানা আমি আমার একউন্টে জমা দিলে তাহা পরবর্তীতে জানতে পারি তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। এক পর্যায়ে চেকটি ডিজঅনার হয়ে আসে। বিষয়টি আমি ইলিয়াছকে জানালে সে আমাকে টাকা না দেওয়ার জন্য নানান তালবাহানা ও মামলা হামলার ভয়ভিতি প্রদর্শন করে এবং আমাকে প্রাণ নাশেরও হুমকী দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানাকে লিখিত ভাবে অবহিত করি। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি সে একজন প্রতারক। এ প্রতিষ্ঠানের নাম করে বিভিন্ন মানুষের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের নাম করে মানিক কাজি নামে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ও মমিন খান নয়নের কাছ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তাদেরকেও টাকা না দিয়ে চেক প্রদান করে। কিন্তু তারাও সেই চেক জমা দিলে জানতে পারে একাউন্টে কোন টাকা নেই। তাদের সাথেও প্রতারনা করা হয়েছে। এমনকি চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার মামুন পাটওয়ারী নামে এক ব্যাক্তি ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হয়। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই মামুন পাটওয়ারী কিডনি রোগে আক্রন্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর পর তার পরিবারের লোকজন ইলিয়াছের কাছে টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে তাদেরকে মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে আসার জন্য বলে।

এক পর্যায়ে টাকা না দেওয়ার পায়তারা করে এবং বিভিন্ন মামলা হামলার হুমকী ধমকি দেয়। এমনি ভাবে হিলশা মেডিক্যাল সেন্টারের নামে বহুলোকের কাছ থেকে শেয়ার বিক্রি করে প্রতারনার মাধ্যমে বহু টাকা হাতিয়ে নেয়। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা সহ নানান অভিযোগের কারনে চাঁদপুর আদালতে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে জানা যায়।

বেশ কিছু দিন পূর্বে ব্যবসার কথা বলে সোহেল আকবর নামে এক লোক থেকে ১৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তিনি টাকা না পাওয়ায় প্রতারক ইলিয়াছের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বাড়ির মালিকের বহু টাকা ভাড়া বাবদ আটকিয়ে রেখেছে বলে ও জানা যায়। বাড়িওলা এ টাকা চাইতে গেলেও হয়রানির স্বিকার হন।

উক্ত প্রতিষ্ঠানে ডাঃ নাজমুল হককে নিয়োগ দেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও তাকে কোন বেতন দেওয়া হয়নাই। পরে ডাঃ নাজমুল হক বেতনের টাকা ফেরৎ পেতে ইলিয়াছের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেওয়ার নাম করে বহু লোকজনের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইলিয়াছের বিরুদ্ধে। এ হিলাশ মেডিক্যাল সেন্টারের নামকে পুঁজি করে নানান মানুষের কাছ থেকে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি এখনো শুধু একটি নাম ফলক ও বিল্ডিং দাড়িয়ে রয়েছে। এখানে কার্যক্রমের কোন অনুমোদন এখনো পায়নি এবং প্রতিষ্ঠানটিও চালু হয়নি। তাই যাদের কাছ থেকে শেয়ারের নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা নিঃস্ব হয়ে ইলিয়াছের কাছে টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে সে প্রতিষ্ঠান ছেরে বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দেয়।

খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, ইলিয়াছ এক সময় এলাকায় দর্জির কাজ করতো। পরবর্তীতে একটি চক্র গঠন করে বিভিন্ন ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের নাম করে মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছে। তার সাথে একটি বিরাট চক্র রয়েছে। তারা বিভিন্ন মানুষকে লোভ দেখিয়ে ইলিয়াছের সাথে সম্পৃক্ত করায় এবং তাদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে, এ চক্রের মূলহোতাই ইলিয়াছ।

এ বিষয়ে ইলিয়াছের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ভোক্তভোগীরা টাকা না পেয়ে এবং ইলিয়াছের প্রতরনার স্বিকার হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভোক্তভোগীরা প্রতারক ইলিয়াছের কাছ থেকে যেন তাদের টাকা ফেরৎ পায় তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছে।

সম্পর্কিত খবর