শাহরাস্তিতে ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

শাহরাস্তি প্রতিনিধিঃ চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেনের দাবি, প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষায় মানসিক ভারসম্যহীন ওই ছাত্রীকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে যাওয়ার নোটিশ করায় পরিকল্পিত ভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ছাত্রীর মা।
ঘটনার বিবরনে সরেজমিন পরিদর্শন ও অভিযোগর প্রেক্ষিতে জানা যায়, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭ম শ্রেনীর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম নিঝুম গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার প্রতিদিনের ন্যায় বিদ্যালয়ে এসে শ্রেনী কক্ষে পাঠ গ্রহন করে।

৫ম ঘন্টার ক্লাস শেষ হওয়ার পর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মজিবুর রহমান বিএসসি ওই শিক্ষার্থীকে মাঠে ডেকে এনে বেত্রাঘাতে রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে নিজেকে বাঁচতে শিশুটি দৌড়ে পালাতে গেলে অপর সহকারী শিক্ষক মোঃ কাউছার আলম শিক্ষার্থীর পিছনে ধাওয়া করে বিদ্যালয়ের অদূরে নারায়ণ মাষ্টারের বাড়ির সামনে পূনরায় বেত্রাঘাত করে। এতে শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে শিক্ষক তাকে রেখে চলে যান।

বিদ্যালয়ের আয়া মায়া রানী তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে যায়। তার মা মেয়ের শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা করান। পরদিন ১৫ মার্চ তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ওই শিক্ষার্থীর মা মুকছুদা বেগম জানান, আমার মেয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন, ঘটনার দিন বিকেলে ঐ বিদ্যালয়ের আয়া মায়া রানি আমার মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। মেয়ের এ অবস্থার কারণ জানতে চাইলে আয়া জানান, নিঝুমকে শিক্ষকরা পিটিয়েছ, সে কেন বাড়ি আসেনা এজন্য। সে কোনো অন্যায় করেছে ভেবে আমিও তাকে মারতে উদ্যত হই। পরে মেয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে বললে আমি তার অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। মেয়ে জানায় ক্লাসে শিক্ষক কাউসার তাকে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা ও নোংরা দৃষ্টিতে তাকানোয় সে তাঁকে বেয়াদব বলে। আর তিনি মুজিব স্যারকে ভুলভাল বুঝিয়ে আমাকে মাইর খাওয়ায়।

ঘটনার দিন মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ডাঃ মাহফুজ ও বি্দ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে জানাই,তারা আমার মেয়ের অবস্থা দেখেন, কিন্তু কোন শান্তনা বা প্রতিকারের আশ্বাস ও দেননি। আমি মেয়েকে নিয়ে থানায় যাই, ওসি সাহেব মেয়েকে দেখে সমবেদনা জানান এবং আমাকে ইউএনও স্যারের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দেন। পর দিন ১৫ মার্চ আমি ইউএনও স্যারের নিকট লিখিত অভিযোগ জানাই। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম নিঝুম জানায়,ঘটনার দিন কাউছার স্যার আমার দিকে নোংরা দৃষ্টিতে তাকালে আমি তাঁকে বেয়াদব বলি, আর তিনি মুজিব স্যারকে ভুলভাল বুঝিয়ে আমাকে মাইর খাওয়ায়। নিঝুম আরো জানায়, দুই আড়াই মাস পূর্বে টিকা দিতে গেলে কাউছার স্যার আমাকে তার সাথে সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয়, শিক্ষকের সাথে কি করে সম্ভব? এমন প্রশ্নে সে নিজেকে আমার দুরসম্পর্কের ভাইয়ের পরিচয়ে দাঁড় করায়। তাতেও আমি রাজি না হলে বিভিন্নভাবে আমার উপর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে।

অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মজিবুর রহমান বিএসসি জানান, এই শিশুটি অস্বাভাবিক আচরণের মাধ্যমে প্রায়ই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জ্বালাতন করে। ঘটনার দিন তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার মাকে ফোন দেয়া হলে মেয়েটি বাড়ির দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে তার মাকে আটকে এসেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এক পর্যায়ে শিশুটি সহকারী শিক্ষক মোঃ কাউছার আলম ও অন্যন্য শিক্ষার্থীদের ঢিল ছোঁড়া শুরু করলে আমি বেত হাতে ভয় দেখিয়ে তাকে একটি সিএনজিতে উঠিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।

অপর সহকারী শিক্ষক মোঃ কাউছার আলম জানান, মেয়েটি বিভিন্ন সময়ে আমাকে ও অন্যন্য শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জ্বালাতন করতো। মানসিক কারনে তার আচরণ শিষ্ঠাচারের বাইরে চলে যেত। এক পর্যায়ে এসবের প্রতিকার না পেয়ে এখান থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার আবেদন দিয়েছি। ঘটনার দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমি ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে শিশুটিকে মৃদু বেত্রাঘাত করেছি।

কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, শিশুটি অস্বাভাবিক আচরণের কারনে প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল বিধায় তার সুচিকিৎসার জন্য অভিভাবকদের অনেকবার জানিয়েছি। তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় গত ডিসেম্বর মাসে পরিচালনা কমিটির সভায় তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার অভিভাবককে এ বিষয়ে নোটিশ দেয়া হলে তাঁরা তা গ্রহণ করেন নি। ঘটনার দিন তাকে মৃদু শাসন করে বাড়িতে পাঠালে তার মা সেখানে তাকে পুনরায় শাসন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার জন্যই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তিতে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন রশীদ জানান, ওই ছাত্রীর মায়ের দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিনকে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর