ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্নাঙ্গতা অর্জনের স্বীকৃতিই-স্থায়ী সনদ

…………………………….মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল……………………….

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তার ২১ বছরে পদার্পনের সঙ্গে এবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিক্ষিত স্থায়ী সনদ অর্জন করেছে। প্রায় অর্ধলক্ষ প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ২০ হাজার বর্তমান শিক্ষার্থীর নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী সনদ অর্জন আনন্দের বাতাবরণ নিয়ে এসেছে।

অসংখ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্জনের সাথে নতুন এই সংযোজন বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে যে পরিমাণ সুনাম অর্জন করেছে, তারই স্বীকৃতি।

বিশ্বমানের দৃষ্টি নন্দন গ্রীন ক্যাম্পাস, শিক্ষার গুণগত পরিবেশ ও মান, শিক্ষা প্রদান সংক্রান্ত সকল কর্মক্ষমতা, ডিজিটাল শিক্ষাপ্রদান পদ্ধতি এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরোপিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শর্ত পূরণের মাধ্যমেই এ স্থায়ী সনদ অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের মঞ্চে নিজেদের স্বকীয়তা প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে সুবিশাল ক্যাম্পাস, যেখানে আছে নিজস্ব ছাত্রাবাস, পরিবহন ব্যবস্থা, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল, লাইব্রেরি, সুবিশাল খেলার মাঠ এবং আরো শিক্ষাসহায়ক নানাবিধ সুযোগ সুবিধা। সব কিছু মিলিয়ে সাভারের বিরুলিয়ায় ‘ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি’তে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি দেশের নজরকাড়া ক্যাম্পাসগুলোর অন্যতম। শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশ ও গবেষণাকর্মে সহায়তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরি যাতে রয়েছে দেশি-বিদেশি রেফারেন্স বই, ই-বুক, প্রোজেক্ট রিপোর্ট, ই-জার্নাল, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক ম্যাগাজিন ও আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকা। লাইব্রেরির সকল কর্মকান্ডই অনলাইন ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়ে থাকে।

ক্রীড়াবান্ধব ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ইনডোর এবং আউটডোর খেলাধুলার সব সুবিধা, দৃষ্টি নন্দন বিশাল খেলার মাঠ। পাশেই বাস্কেটবল গ্রাউন্ড এবং গল্ফ কোর্স। এছাড়া টেনিস কোট, ফুটসাল কোর্ট, ব্যাডমিন্টনসহ অন্যান্য সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন রয়েছে ক্যাম্পাসে।

অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকেও দেশের মধ্যে এগিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিতকরণে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তৈরী করেছে ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টার’ ও ‘গো-এডু’র মতো প্লাটফর্ম। আর এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ভার্সনে শিক্ষা গ্রহণে আরো উজ্জীবিত করেছে ‘একজন শিক্ষার্থী, একটি ল্যাপটপ’ প্রকল্প।

প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর ঘরেই ল্যাপটপ থাকায় করোনা কালীন সময়ে পিছিয়ে ছিল না কেউ; বরং অনলাইন ও মিশ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় আজ তাদের প্রায় প্রত্যেকেই পেয়েছে সমাবর্তন; যোগ দিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক সেবায়। সেই সাথে নতুন করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উন্নত বিশ্বের মতো দেশেও ধারণা দিতে যাচ্ছে অনলাইন ডিগ্রি ও প্লাটফর্ম ভিত্তিক শিক্ষাদান পদ্ধতির।

বিশ্ববিদ্যালযের ট্রাষ্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খানের দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনার জন্যই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফলতার র‌্যাঙ্কিং এখন ঈর্ষণীয় অবস্থানে। কিউএস ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং ২০২৩-এ এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫ম এবং বেসরকারি বিশ্বদ্যিারয়ের মধ্যে এর অবস্থান ৩য়।

এছাড়াও ‘ইউআই গ্রিনমেট্রিক ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং ২০২৩’ এ বিশ্বের মধ্যে ১৯তম, দক্ষিণ এশিয়ায় ৭ম এবং বাংলাদেশে প্রথম স্থানে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। আর ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন ইউনিভার্সিটি ইমপ্যাক্ট র‌্যাঙ্কিং ২০২২’-এ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটি প্রথম স্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ও স্বীকৃত সবকটি র‌্যাঙ্কিং এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তার মর্যাদাপূর্ন অবস্থান ধরে রেখেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অলিম্পিকখ্যাত বিশ্ব সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজিতে (ডব্লিউসিআইটি-২০২১) ‘ই-এডুকেশন এন্ড লার্নিং’ এ “গ্লোবাল আইসিটি এক্সসেলেন্স এওয়ার্ড” পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউইনভার্সিটি।

অতি সম্প্রতি নাসা কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক হ্যাকাথন ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২২’ প্রতিযোগিতায় ১৬২টি দেশের ২৮১৪ দলের মধ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের দল ‘টিম ডায়মন্ডস’ ‘মোস্ট ইন্সপিরেশনাল’ প্রোজেক্ট হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

১২৫ টি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশীপে বিশ্ববিদ্যালয়টি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি তরুণ পেশাদারদের ভবিষ্যত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, গুনগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের চাকরি বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে শিক্ষা ও উন্নয়নকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্যোগের প্রচার, গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও এ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রগণ্য। বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা কেন্দ্র, উদ্ভাবন ল্যাব এবং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো ক্ষেত্রগুলিতে ফোকাস করে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি উদ্যোক্তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এর মাধ্যমে ছাত্রদের ফান্ড দিয়ে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে অনুপ্রাণিত ও সমর্থন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস ইনকিউবেটর এবং এক্সিলারেটর সহ বেশ কয়েকটি উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের তাদের ধারণাগুলিকে কার্যকর ব্যবসায় বিকাশ করতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীদের নতুন কোম্পানি, পণ্য এবং পরিষেবা তৈরির দিকে পরিচালিত করেছে যা অর্থনীতির বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান অর্জনে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষকগণকে গবেষণামূলক কর্মকান্ডে প্রচুর আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন যা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। ২০২২ সালেও গবেষণা বরাদ্দে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করেছে। ফলশ্রুতিতে বিশ্বখ্যাত স্কোপাস ইনডেক্স (ঝপড়ঢ়ঁং ওহফবী) ও ন্যাচার ইনডেক্সে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রয়েছে মযাদাপূর্ন অবস্থান। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পিএইচডি এবং গবেষণায়ও এ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রনী ভূমিকা রাখতে আশাবাদী। সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পি এইচ ডি প্রোগ্রাম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশাবাদী বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশণ ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আরো অধিক কার্যকর গবেষনা কাজ চালিয়ে যাবে যা বাণিজ্যিকভাবে ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশী, যারা দেশের পতাকা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মোবিলিটি প্রোগ্রামের আওতায় সম্পূর্ণ স্কলারশিপ সহ অসংখ্য শিক্ষার্থী এবং শিক্ষককে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে বিভিন্ন দেশে নিয়মিত পাঠানো হয়। ডিআইইউ-এর ইন্টার এক্সচেঞ্জ বিদেশি শিক্ষার্থী ও অনুষদরাও দেশের জন্য ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করছে। ইউরোপীয় কমিশন কর্তৃক ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরাসমাস ল্যাব স্থাপন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সাফল্য।

এগিয়ে চলার ২১ বছরের সব অর্জন এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী সনদ প্রাপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন উদ্যোমে পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দেখা দিবে। কর্তৃপক্ষের আশা সেদিন আর বেশী দূরে নয়, যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বিশ্ববাজারের চাহিদা পূরণ করে সারা পৃথিবীতে দেশের ব্র্যান্ড ও ইমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
লেখক পরিচিত : মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল
ঊর্ধ্বতন সহকারি পরিচালক (জনসংযোগ)
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সম্পর্কিত খবর