হাইমচর ইউনিয়নে চাল কম দেওয়ায় ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ!

বিশেষ প্রতিনিধি :হাইমচর উপজেলায় জেলেদের মাঝে বরাদ্দকৃত চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩২ কেজি চাল। জাটকা ধরার নিষিদ্ধ সময়ে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় জেলেদের এই চাল দেয়া হচ্ছে। আগামী মার্চ, থেকে এপ্রিল পর্যন্ত টানা দুই মাস জাটকা মাছ আহরণ, বিপণন,পরিবহন, কেনা-বেচা, বিনিময় ও মজুদ নিষিদ্ধ থাকবে।

রবিবার সকালে হাইমচর উপজেলার ৫ নং হাইমচর ইউনিয়নের ৮,৭ ও ৯নং ওয়ার্ডের জেলেরা চাল বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে পাঁচজন জেলের হাতে চাল তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ইউপি জুলফিকার আলি জুলহাস সরকার এতে উপস্থিত ছিলেন, ট্যাগ অফিসার ও ইউপি সদস্যসহ আরও অনেকে। সরেজমিনে জানা যায়, জেলেদের জনপ্রতি ৩৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩০ কেজি চাল।

চাল নিতে আসা বেশ কয়েকজন জেলে এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়নি। জেলেদের এই অভিযোগের বিষয়ে ৫ নং হাইমচর ইউপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি জুলহাস সরকার কে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।

১২ মার্চ রবিবার সকালে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ৫ নং হাইমচর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের জেলে খালেক বেপারী, ৯ নং ওয়ার্ডের জেলে খোকন গাইন, আসলাম, রাজ্জাক আলী, আবু ছায়েদ মোল্লা, সহ প্রায় ২০ জন জেলে এ অভিযোগ করে বলেন আমাদের জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যশষ্য (চাল) বিতরণে অনিয়মকারী, চাঁদাবাজ, স্বজনপ্রীতি ও আত্মসাৎকারী ৫নং হাইমচর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সদস্যগণের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহন ও বঞ্চিত প্রকৃত জেলেদের খাদ্যশষ্য (চাল) প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন।

নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ ৫নং হাইমচর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও জেলে বান্ধব সরকারের জেলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিবন্ধিত প্রকৃত জেলেদের একাংশ। আমরা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা অর্জন করে থাকি। ইলিশের বাড়ী চাঁদপুরকে সমৃদ্ধ করতে সর্বোপরি ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মসূচী বাস্তবায়নে বিশেষ করে ”মা ইলিশ রক্ষা” ও ”জাটকা নিধন প্রতিরোধ” কর্মসূচীতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে আসছি। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত জেলেদের সহায়তামূলক কর্মসূচীর আওতায় নিবন্ধিত জেলে তালিকা অনুযায়ী বিগত বছরগুলোতে খাদ্যশষ্য (চাল) পেয়ে আসছি। কিন্তু গত বছর ( ০১ মার্চ-৩০এপ্রিল/২০২২) ও চলমান ( ০১ মার্চ- ৩০ এপ্রিল/২০২৩) কর্মসূচীতে (জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচী) জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যশষ্য (চাল) অত্র ইউনিয়নের মেম্বারগণ নিবন্ধিত তালিকা অনুসরণ না করে নিজেদের পছদ-অপছন্দের ভিত্তিতে উক্ত খাদ্যশষ্য (চাল) বিতরণ করে আমাদের মতো আরও অনেক প্রকৃত জেলেদেরকে বঞ্চিত করে চরম অনিয়মের নজির সৃষ্টি করেছে। নিজস্ব আত্মীয়-স্বজন ও অনুসারী অজেলেদের নিকট টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ সহ বিতরণকৃত সকলের কাছ থেকে(দুই লট একত্রে) ১৫০.০০-২০০.০০ (দেড়শত থেকে দুইশত) টাকা করে নগদ চাঁদা আদায় এবং ওজনে প্রতি জনকে ৫–১০ (পাঁচ থেকে দশ) কেজি করে কম দিয়ে জেলে বান্ধব বর্তমান সরকারের এ মহত কর্মসূচীকে বিতর্কিত করে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে খুন্ন করেছে ।

এমতাবস্থায় আমরা প্রকৃত জেলেগণ মহোদয়ের নিকট জোর আবেদন করছি যে, আপনার কর্তৃক স্বাক্ষরিত চুড়ান্ত সংশোধিত জেলে তালিকা অনুযায়ী খাদ্যশষ্য (চাল) বিতরণে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারগণের অনিয়ম, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে জেলে বান্ধব সরকারের গৃহীত কর্মসূচী সফল বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করবেন ।

উল্লেখ যে, নিবন্ধন তালিকার ১৫%-৩৫% ভাগ পর্যন্ত প্রকৃত জেলেদেরকে বঞ্চিত করে সমপরিমাণ খাদ্যশষ্য (চাল) নিজস্ব আত্মীয়- স্বজন ও অনুসারীদের মাধ্যমে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বারদের শপথ ভঙ্গের সামিল ।

অতএব, মহোদয় সমীপে আকুল আবেদন, আপনার স্বাক্ষরিত চুড়ান্ত তালিকাভূক্ত জেলেদের খাদ্যশষ্য (চাল) বিতরণে এহেন অনিয়ম, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির হোতা সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বারগণের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি আমরা বঞ্চিত প্রকৃত জেলেগণ আমাদের অনুকূলে খাদ্যশষ্য (চাল) পাওয়ার জন্য মহোদয়ের সূ-মর্জি কামনা করছি।

জেলেদের চাল কম দেওয়ার ব্যাপারে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের একটা খরচ আছে। গুদাম থেকে চাল আনতে গাড়ি ভাড়া,গাড়ি থেকে নামানো, ওই চাল যারা ওজন করছেন তাদের দুই-চার কেজি দেয়া সব মিলিয়ে ওজনে চাল কিছুটা কম দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বলেন আমার কাছে কয়েকজন জেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সততা পাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টা আমি এই মাত্র জেলেরা আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। জেলেদের চাল কম দেওয়ার এবং নিবন্ধিত জেলেদের চাল না দেওয়া এই অভিযোগ করেন। সত্যতা পাওয়া গেলে যারা ওজনে কম দিয়েছেন এবং নিবন্ধিত জেলেদের চাল না দেওয়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত খবর