চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে বোগদাদ-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ৩

মাসুদ হোসেন : চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঘোষেরহাটে যাত্রীবাহী বোগদাদ ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহতের ঘটনা ঘটে।

ঘাতক বোগদাদ বাস এই দুঘটনার জন্য দায়ী বলে প্রত্যক্ষদশীরা অভিযোগ করেন ।ঘাতক বোগদাদ বাসের রিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেছে যাত্রীসাধারণ । চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘোষেরহাট নামক স্থানে একের পর এক ঘাতক বোগদাদ বাসের আঘাতে মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে । কিন্তু উক্ত ঘাতক বোগদাদ বাসের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে । এর সাথে কুমিল্লার বোগদাদ বাসের মালিক হক সাহেব ও চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডের এক শ্রেনীর শ্রমিক নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে ।

জানা গেছে,বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী) ফজর নামাজ পড়া অবস্থায় ঘোষেরহাট মিয়ার বাজার জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মহামায়া থেকে ৫ জন যাত্রী নিয়ে সিনজিটি চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ঘোষেরহাট মসজিদের সামনে একটি ঢাকা মেট্রো-উ ১৪-১৪৯২ নম্বরের একটি পিকআপ চালক সড়কের উপর দাঁড় করিয়ে নামাজ পড়তে গেলে সেই পিকআপকে অতিক্রম করার সাথে সাথে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৯৮৪৪ নম্বরের কুমিল্লাগামী যাত্রীবাহী বোগদাদ বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজিটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজির পেছনের ৩ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এবং সামনের দুই যাত্রীর মধ্যে মহামায়া এলাকার পাটওয়ারী বাড়ির মুকছুদ পাটওয়ারী কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও অন্য যাত্রী ও সিএনজি চালক অক্ষত রয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নের ধলাইতলী বেপারী বাড়ির হারুন বেপারীর ছেলে হাবিবুর রহমান (২৫) ও চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা এলাকার বাসিন্দা হলেও খালিশাঢুলী ওয়াবদা গেইট এলাকার মৃত ইউসুফ আলী হওলাদারের ছেলে নেছার আহমদ হাওলাদার (২৫)। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত আরেকজনের পরিচয় এখনো সনাক্ত করা যায়নি।

নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৪ ভাই বোনের মধ্যে নিহত হাবিবুর রহমান গত দুই মাস আগে দুবাই থেকে দেশে এসেছে। নতুন আরেকটি দেশে যাওয়ার জন্য মেডিকেল রিপোর্ট আনতে এদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে এ দূর্ঘটনার শিকার হন, ৯ ভাই বোনের মধ্যে নিহত নেছার আহমেদ হাওলাদার এক মেয়ে সন্তানের জনক। তিনি সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর এলাকার শশুর বাড়ি থেকে ফজরের আগেই বের হয়ে চাঁদপুরে তার মাছের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে এবং নিহত আরেকজনের মধ্যে মতলবের বর্দী আড়ং বিষ্ণপুর এলাকার মৃত বশির প্রধানীয়ার ছেলে মাহাবুব প্রধানীয়া (৫০) সদরের মহামায়া এলাকায় ভাড়া বাড়ি থেকে চাঁদপুরের একটি হোটেলে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি এক ছেলে সন্তানের জনক।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিরা জানান, ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকআতের সময় মসজিদের পাশের বিকট শব্দে আওয়াজ শুনে নামজ শেষ করে এসে দেখি এই অবস্থা। ৫ জন যাত্রীর মধ্যে তিনজনই সাথে সাথে মারা যায়। নিহতদের মধ্যে কারো মাথার খুলি উল্টে মগজ বের হয়ে যায় কারো চোখ উল্টে পরে যায়। দূর্ঘটনার শিকার সিএনজি চালক এমরান হোসেন বলেন, মহামায়া ৫ জন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিলাম। ঘোষেরহাট মসজিদের সামনে গেলে সড়কের উপরে পার্কিং করা থাকায় কুয়াশার কারনে বেশি একটা বুঝা না যাওয়ায় কাছাকাছি গিয়ে ওভারটেক করার সময় সামনে থেকে বোগদাদ বাসটি এসে সজোরে আঘাত করলে এ দূর্ঘটনার শিকার হই।

এ ঘটনায় প্রায় ২ ঘন্টার মত সড়ক বন্ধ থাকার পর খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং প্রায় ৪ ঘন্টার মত সড়কে যানজট লেগে ছিল। পরে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে আসেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার এএসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, নিহতদের লাশ সনাক্ত করে লাশ ও দূর্ঘটনার শিকার যানবাহনগুলো থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সম্পর্কিত খবর