মৈশাদীতে বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী একাডেমিতে নবীন-বরণ

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেছেন, কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হাতে দেখলাম স্মার্টফোন।

এটা কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে। এখন যেহেতু অনলাইনে ক্লাশ হচ্ছে না, বিদ্যালয়ে সরাসরি ক্লাশ হচ্ছে, তাই এই মোবাইল শিক্ষার্থীদের কোন কাজে লাগছে না। মোবাইল থাকলেই ফেসবুক ব্যবহার হয়, অনেকেরেই একাউন্ট আছে। আবার অনেকে টিকটক ভিডিও বানায়। ফেসবুক আর টিকটক একজন শিক্ষার্থীদের জীবনে কোন কাজে আসবে না এবং জীবনের কোন কাজে এটি মূল্যায়িত হবে না। এখন থেকে তোমাদের ফেসবুক একাউন্ট ডিএক্টিভ কর।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী একাডেমির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ ও পাঠদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিসি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের এই বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইচএসসি থেকে মাষ্টার্স পর্যন্ত ৭ বছর সময়কে খুবই গুরুত্ব দিয়ে মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। আর যদি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পার, তাহলে বাকী ৫০ বছর বেঁচে থাকলেও সেটা তোমার জন্য বৃথা। তোমাদেরকে অনুরোধ করব, আবেগের যে বেগ আছে সেটি বন্ধ করতে হবে। যে কাজটি করলে শিক্ষক, অভিভাবক ও গুরুজন নিষেধ করবে একাজটি ভাল নয়, সেটি মানতে হবে। তোমাদের এই সময়টাকে বিনিয়োগ কর, তাহলে ভাল কিছু করতে পারবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে জাতি গঠন করা। একটি প্রতিষ্ঠান বেছে বেছে ভালো শিক্ষার্থীদের ধরে এনে তাদেরকে পড়াবে এটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়। গোলাপ গাছ লাগালেত ভাল ফুল ফুটবেই। কিন্তু জঙ্গলের একটি গাছ, যেটি অবহেলায় পড়ে আছে, সে গাছের ফুল হয়ত সুন্দর নয়, ফুল যদি নাও হয় সে গাছ দেখতে সুন্দর। সে গাছটিকে খুঁজে এনে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে সুন্দর করা হচ্ছেই স্বার্থকতা। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব দিক দিয়ে ভাল করছে।

কামরুল হাসান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন বই হাতে পেতে কয়েকমাস চলে যেত। পুরো বছরে আমরা ছয় মাস বই পড়েছি। তোমরা এখন বছর জুড়ে সময় পাচ্ছ। তোমাদেরকে কমপক্ষে ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা পড়ার কাজে থাকতে হবে। ৬ ঘন্টার বেশী ঘুমাবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে তোমাদেরকে। তাহলে এখন থেকে তোমাদের নিজকে তৈরী করতে হবে।

একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির অধ্যক্ষ শাহ্ মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বক্তব্যে বলেন, এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী নিজের জীবনের সকল অর্থ এই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠান শহরে করলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারতেন। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্যে হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের পিছিয়ে পড়া এবং অবহেলিত শিক্ষার্থীরা যেন এগিয়ে যেতে পারে। তারা যেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে অধ্যয়ন করে সকল স্থানে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরতে পারে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠান সেই কাজই করে আসছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সুনাম অর্জন করেছে। ফলাফলও খুবই ভাল। আমি আশা করব আগামী বছর এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য লটারিতে অংশগ্রহন করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহানাজ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন, সেটি তোমাদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে। আমরা যখন স্কুল ও কলেজে পড়েছি, তখন একজন জেলা প্রশাসককে অনুষ্ঠানে দেখার সুযোগ হয়নি। চাকরীতে যোগদান করতে এসে দেখার সুযোগ হয়েছে। আজকে তোমাদের মাঝে জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মহোদয় তোমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। তোমাদেরকে এর থেকে উৎসাহিত হতে হবে। তোমরাও যেন ভাল পড়াশুনা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পার।

দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সালমা আলম হিরা ও সিফাত মিজির যৌথ সঞ্চালনায় শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মাওলানা আব্দুর রউফ ও সমাজ কর্ম বিষয়ের প্রভাষক আদনান আল মুরাদ।

দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হিরা আক্তার এবং নবীনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিংকি আক্তার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৈশাদি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। এছাড়া একাডেমির বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্য পূর্বে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করেন অতিথি এবং দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। সব শেষে একাডেমির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে মনোমুগ্ধকর সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন হয়।

সম্পর্কিত খবর