মাসুদ হোসেন : চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ ইয়াসির আরাফাত বলেছেন, নারী সমাজ নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট করছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অল্প বয়সী মেয়েরা পরিবার ছেড়ে অচেনা এক বেকার যুবকের সাথে চলে যাচ্ছে।
তাই প্রযুক্তির সম্পর্কে জেনে শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিবেন অভিভাকরা। এই প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের বেশিরভাগই জানা নেই। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে তার সম্পর্কে আগে অবগত হতে হবে।
গতকাল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তর শাহতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সাংবাদিক সোহেল রুশদী’র অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ড্রেস বিতরণকালে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষক, পরিবার ও সমাজের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। মানুষ প্রযুক্তি চালাবে, প্রযুক্তি যেন মানুষকে না চালায় সেদিকে নজর রাখতে হবে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের সঠিক ধারনা থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষার্থীদেরকেও স্মার্ট হতে হবে ভালো লেখাপড়ার মাধ্যমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হয়ে দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন বড় বড় দায়িত্ব নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। পুরুষদের তুলনায় নারীদের কাজের ভূমিকা অনেক বেশী। তাই তোমরা ভালো মত পড়াশোনা করে একদিন দেশ ও বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা করি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে শিক্ষার্থীদেরও ভূমিকা থাকতে হবে ।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, আমি এ এলাকায় এসে খুবই আনন্দিত যে, এ এলাকার সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অত্যন্ত আধুনিক ও শিক্ষাব্যবস্থাও খুবই ভালো। এখানকার শিক্ষকদের মানসম্মত পাঠদানের কারনে আজ শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আসছে। এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতি সাংবাদিক সোহেল রুশদী সাহেব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের লেখাপড়ার মাধ্যমে ভালো ফলাফল করে বিদ্যালয়, পরিবার ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী নারী হয়ে এগিয়ে যেতে পারলে তোমরাও সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তোমরাই হবে আগামীর সমাজ গঠনের দক্ষ সৈনিক।
সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী বলেন, এ এলাকাটি হচ্ছে কৃষিনির্ভর এলাকা। এখানকার অনেকেই তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তাই প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস বিতরণসহ অসহায়দের যেকোন প্রয়োজনে এগিয়ে আসার চেষ্টা করি। বর্তমান সরকার গ্রামকে শহর করার লক্ষ্যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কল্যাণে এ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
এ এলাকাটি একটি আলোকিত এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আসছে। তিনি আরো বলেন, এ এলাকার অপরাধ মূলক সকল অপকর্ম কমিয়ে আনতে চাঁদপুর জেলা পুলিশের ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি যেকোন অপরাধের বিষয়ে স্বোচ্ছার। এই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা গত কয়েক মাস আগে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আমি উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মডেল থানার ওসি আব্দুর রশিদ সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সরকার চায় একজন শিক্ষার্থীও যাতে কোন কারনে ঝরে না যায় তাই তোমরা ভালো মত পড়াশোনা করে বিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রাখবে।
এ বিদ্যালয়টি একটি মডেল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাবো তোমাদের ভালো লেখাপড়ার মাধ্যমে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, যার মধ্যে শিক্ষার মানসিকতা আছে একমাত্র সেই পারে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস বিতরণ করতে। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেনীর ছাত্রীদের এই সময়টা একটা টিনেজ বয়স।
এই বয়সের মেয়েরা রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। এই বয়সের সাথে মোবাইলের ব্যবহার হচ্ছে অহরহ। তারা মোবাইলে এই রঙিন স্বপ্নটা কাজে লাগিয়ে পরিবারের অবাধ্য হয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনে। মোবাইলে আসক্ত হয়ে অচেনা একজন বেকার ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে বিয়ে পর্যন্ত রূপ নেয়। কয়েকদিন পর ঠিকমত চালাতে না পেরে সংসারে নেমে আসে অশান্তি। কোন উপায় না পেয়ে মেয়েটি ফিরে আসে তার বাবার বাড়িতে। তিনি আরো বলেন, ১৮ বছরের আগে বিয়ে হলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে হয় ঐ মেয়েকেই। কারন এই বয়সে একটি মেয়ের বিয়ে হলে তার শারীরিক গঠনতন্ত্র পরিপক্ব না হওয়ায় সন্তান ধারন করেন। পরিপুষ্ট খাবার আর গ্রোধ এর অভাবে একটি অপরিপক্ক সন্তান জন্ম দিতে হয়। অপুষ্ট সন্তান জন্মের ফলে সেই সময়ে ছেলের পরিবার ঐ মেয়েকেই দোষারোপ করে থাকেন বেশিরভাগ।
কোন উপায় না পেয়ে অনেক মেয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয়। অথচ ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়েদের একটা স্বাধীনতা ও শারীরিক গঠনতন্ত্র তৈরির বয়স। কিন্তু এই বয়সেই অনেক মেয়েকে পোহাতে হয় সংসারের অশান্তি।
উত্তর শাহতলী জোবাইদা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী, ইউপি সচিব মোহাম্মদ কুদ্দুছ আখন্দ রোকন ।
আরো বক্তব্য রাখেন শাহতলী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বিলাল হোসাইন, শাহমাহমুদপুরের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য ফিরোজা বেগম, মধ্য কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা আক্তার। বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী লাখী আক্তারের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নয়ন চন্দ্র দাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত সকলের সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম ও রুবিনা আক্তার। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাদিয়া আক্তার ও রাহেলা আক্তার শান্তা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক ইউপি সদস্য শফিক কারী, ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন খান, উক্ত বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা মেহেরুন নেছা, সহকারি শিক্ষক মোঃ ইদ্রিস আলী, দিপঙ্কর দে, মোঃ নেছার আহমেদ, আব্দুল মান্নানসহ অত্র এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠান শেষে চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ এর মায়ের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন শাহতলী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ বিলাল হোসাইন।
