তরপুরচন্ডীতে মাদ্রাসা ও স্কুলের সম্পত্তি ব্যক্তিদের নামে খারিজের অভিযোগ !

স্টাফ রিপোর্টারঃ চাঁদপুর সদর উপজেলার ৭নং তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ড আনন্দ বাজার এলাকায় আশ্রাফিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও আব্দুল আওয়াল গাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ব্যাক্তি নামে খারিজ করে দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিসহ শিক্ষকদের ঘুমে রেখে মাদ্রাসার সম্পত্তি নিজেদের নামে খারিজ করার বিষয়টি এলাকায় জানা জানি হওয়ার পর সর্বস্তরে ব্যাপক আলোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। রক্ষক যখন বক্ষক হয়, তখন সামাজিক দায়য়িত্ব নিয়ে ও প্রশ্ন উঠে এলাকার সুধী সমাজে।আশ্রাফিয়া দাখিল মাদ্রসার সম্পত্তি কি ভাবে নিজেদের নামে খারিজ করা হয়েছে, তা নিয়ে নানাহ প্রশ্ন সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

মাদ্রাসার সম্পত্তি দখলের পায়তারা থেকে রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসী সক্রিয় হয়ে উঠছে। যে কোন সময় এই ন্যাককাড় ঘঠনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছে এলাকাবাসী।

জানা যায়, তরপুরচন্ডী আশ্রাফিয়া দাখিল মাদাসায় দানকৃত জমিদাতা আবদুল আউয়াল গাজীর ছেলে মোঃ শহীদ উল্ল্যাহ গাজী,আহম্মদ উল্ল্যাহ গাজী,সিদ্দিক আলী গাজী এবং মেয়ে সকিনা বেগম,রহিমা বেগমসহ ৫ সন্তান ২০১৫ সালে নিজেদের নামে মাদ্রাসার ৮১শতংশ সম্পত্তি তাদের নামে খারিজ করে নিয়েছে। অথচ তার পিতা আবদুল আউয়াল গাজী দুই দলিলে আশ্রাফিয়া দাখিল মাদাসার জন্য ৮১ শতাংশ জমি দান করে।

১৯৮৯ সালের ৬ জুলাই আশ্রাফিয়া দাখিল মাদাসার জন্য প্রথম দলিলে ৩০ শতাংশ, এবং একই মাসে ২৩ জুলাই দ্বিতীয় দলিলে ৫১ শতাংশ জমি দান করেন। মোট ৮১ শতাংশ সম্পত্তি আউয়াল গাজী নিস্বার্থ ভাবে মাদ্রাসায় দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সর্ব মহলে ব্যাপক প্রশাংসা কুড়ান। কিন্তু তার ছেলে ও মেয়েরা পিতার দানকৃত সম্পত্তি নিজের নামে খারিজ করে নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত ও ঘৃনিত হন।

এলাকার শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থপনের প্রয়োজন হলে এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত মতে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম করণ করা হয় আবদুল আউয়াল গাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সে বিদ্যালয়ের জন্য আবদুল আউয়াল গাজীর ৮১ শতাংশ সম্পত্তি থেকে ৩০ শতাংশ সম্পত্তি আব্দুল আউয়াল গাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দান করে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। তখন মাদ্রাসার সেক্রেটারি দায়িত্বে ছিলেন আবদুল মজিত মিজি।

সময়ের বিবর্তনে আবদুল আউয়াল গাজীর দান করা সম্পত্তি এখন তার সন্তানরা নিজেদের নামে খারিজ করে নেয়। মাদ্রাসা ও স্কুলের ভূমি নিয়ে এখন চলছে টানাপোড়া। মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যে পরিমান সম্পত্তি থাকার দরকার, সে সম্পত্তি নিয়েই এখন দুঃচিন্তায় রয়েছে মাদ্রাসা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। আব্দুল আওয়াল গাজীর ৫ সন্তানের ভিলেনী চিন্তাধারায় মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পক্তি এখন জটিলার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি দেখবে কে?

সরকারি বিধি অনুযায়ী মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় জন্য সম্পত্তি উদ্ধার করতে না পারলে ঝুঁকিতে পড়বে এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এলাকার শত শত কমলমতি শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষৎ ধুলিস্যাৎ হবে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে।

বর্তমান সরকার শিক্ষা বিস্তারের জন্য শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানাহ প্রদক্ষেপ হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তরপুরচন্ডীর আশ্র্রাফিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও আবদুল আউয়াল গাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন সম্পত্তির জন্য মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু তরপুরচন্ডীতে এ দুটি বিদ্যালয়ের সম্পত্তিগত বিষয় নিয়ে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি সঠিক ভাবে শিক্ষা প্রদান করার বিষয়ে চরম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ নিয়ে ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসী জানান, এলাকার শিক্ষা বিস্তারের জন্য আবদুল আউয়াল গাজী যে মহতি মনের পরিচয় দিয়েছে, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। কিন্তু তার দানকৃত সম্পত্তি তার সন্তানদের সাথে নিয়ে একটি কু-চক্রী মহল উদোশ্যমূলক ভাবে নিজেদের নামে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি খারিজ করেন।

বিষয়টি সত্যি দুঃখ্য জনক। বিদ্যালয়ের স্বার্থে দ্রæত সম্পত্তিগুলো প্রতিষ্ঠানের নামে ফিরিয়ে না আনতে পারলে এ এলাকার শিক্ষা বিস্তারের চরম ভাবে বাঁধাগ্রস্ত হবে। সরকার যেখানে বর্তমানে দুর্নীতির লাগাম টানছে, সেখানে তরপুরচন্ডীর এক চক্রটি কিভাবে এতবড় প্রতারনা করে ৮১শতাংশ সম্পত্তি নিজেদের নামে খারিজ করেছে। এটা একটা চরম দুর্নীতি, যারা এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের দুর্নীতিদমনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা প্রয়োজন রয়েছে বলে সাধারণ মানুষ জানিয়েছে।

এই ব্যাপারে আশ্রাফিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ দর্জি জানান, আব্দুল আওয়াল গাজী ১৯৮৯ সালে দুই দলিলে মাদ্রাসার নামে ৮১ শতাংশ ভূমি দান করে। কিন্তু কিছু দিন আগে আমরা মাদ্রাসা কতৃপক্ষ এই সম্পত্তি খারিজ করতে গেলে দেখি মরহম আব্দুল আওয়াল গাজীর ছেলে ও মেয়েরা নিজেদের নামে তা খারিজ করে নিয়েছে।

মাদ্রাসা ও স্কুলের এই সম্পত্তি সঠিক ভাবে ফিরে পেতে কয়েক দফা এলাকায় বসি কিন্তু তারা কোন মিমাংসা করতে রাজি নয়নি।এছাড়াও এই বিয়ষে আমরা মাদ্রাসা কতৃপক্ষ এসিল্যান্ডে বিএস সংশোধনী মামলা করি এবং তদন্ত রিপোর্ট আমাদের পক্ষে আসে। আমরা চাই যথাযত কতৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা যথাযত সমাধান করবে। একই সাথে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে উনি স্কুলের দানকৃত সম্পত্তি ফিরে পেতে যথাযত সহযোগীতা করেন।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি, ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা মাল জানান, আশ্রাফিয়া দাখিন মাদ্রাসা সম্পত্তি আবদুল আউয়াল গাজী দান করেন, তার ছেলেরা মাদ্রাসার ৮১ শতাংশ সম্পত্তি খারিজ করে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এসিল্যান্ড অফিসে অভিযোগ রয়েছে, আমরা এলাকা বাসী এটার একটা সুষ্ঠ সমাধান চাই।

এ বিষয়ে জমিদাতা আবদুল আউয়াল গাজীর ছেলে মোঃ সিদ্দিক আলী গাজী সাথে যোগাযোগ তিনি জানান, উক্ত সম্পত্তি আমার বাবা আবদুল আউয়াল গাজীর নামে বিএস হওয়ায় আমরা তা খারিজ করি। আমার নিজের সম্পত্তি থেকে আবদুল আউয়াল গাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৩শতাংশ , এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫শতাংশ দান করি।

৮১ শতাংশ সম্পত্তির ভেতরে মায়ের নামে ও বিএস হয়েছে।সে সম্পত্তি এখনো রয়েছে।মাদ্রাসা ও স্কুলের কোন সম্পত্তি খাওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই।

সম্পর্কিত খবর