চাঁদপুরে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ!

চাঁদপুর শহরের খলিশাডুলী এলাকায় অবস্থিত অর্পণ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা রোগীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রটিকে এক ধরণের টর্চার সেলে পরিণত করেছেন পরিচালক মিতাতের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী তরুণ সরকার জানান, আমাকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে তারা, আমি আমার পরিবারের কাছে ঔষধ চাওয়ার কারণে আমাকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন।

এছাড়াও শাহরাস্তি উপজেলার সূচিপাড়া এলাকার শরিফ মিজি নামের একজন রোগীকেও ব্যাপক নির্যাতনের কথা জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় অর্পণ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নেই পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা কর্মী। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণও নেই। ন্যূনতম মান বজায় রেখে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার নামে চলছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নজরদারির অভাবে কেন্দ্র হয়ে উঠেছে রোগীদের জন্য টর্চার সেল।

এমন একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে চাঁদপুর শহরের মঠখোলা এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, ‘অর্পণ মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামে বিশেষায়িত এই চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রায়ই ভেসে আসে রোগীর কান্নার আওয়াজ। কখনো কখনো রাতে গগণবিদা কান্নায় ঘুম ভেঙ্গে যায় তাদের। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নিরাময় কেন্দ্রটিতে প্রতিদিনই রোগীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করে থাকে। ভিতরে চিকিৎসা সেবা দানের আড়ালে যে আলাদা টর্চার সেল রয়েছে যে তা তাদের অজানা ছিল।

১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই নিরাময় কেন্দ্রে থাকা তরুণ সরকার নামক একজন রোগী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিনই তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন, মারধর করা, ঘুষি দেওয়া এবং শাস্তি হিসেবে না খাইয়ে রাখা হয়। কখনো রাতের বেলা দাঁড় করিয়ে রাখে। খাবারের কোনো নিয়ম নেই। পঁচাবাসি খাবার জোর করে খাওয়ানো হয়। শুধু কথায় কথায় মারধর আর ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোই এখানকার চিকিৎসা।

তিনি আরও বলেন, আসক্তির কারণে অস্থির হয়ে উঠলে কর্মীরা আমাকে লাঠি দিয়ে পেটান। গোপনাঙ্গে মেরে জখম করে দেন। কিল ঘুষি তো আছেই। মাঝে মাঝে এই অমানবিক আচরণ সহ্য করতে আমার মতো অনেকেই গলা ছেড়ে চিৎকার করি। কেউ আমাদেরকে বাঁচাতে আসে না। সবাই মনে করে এখানে চিকিৎসা হচ্ছে। কেন্দ্রের ইনচার্জ মিতাত তাদেরকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে পায়ের ও ঘাড়ের মধ্যে চেপে ধরে মারধর করে।

আমার হাতে আঘাত করলে আমার ডান ও বাম দুই হাতের হাড়ই ভেঙ্গে যায় এবং প্রয়োজনীয় ডাক্তার না দেখানোর কারণে আমার হাত এখন প্রায় অকেজো। আমি এখন কাজ করতে পারছি না। তিন সন্তান নিয়ে বর্তমান খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। চিকিৎসক আমাকে ভাঙ্গা হাতে রড লাগানোর জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। অর্পণ মাদকাসক্তির পরিচালক মিতাত হোসেন মুঠোফোনে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক।

আমরা কাউকেউ নির্যাতন করিনা। এ ব্যাপারে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এমদাদুল ইসলাম মিঠুন জানান, মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে কোন রোগীকে নির্যাতন করার সুযোগ নাই, অর্পণ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রটি এখনো অনুমতি পায়নি। তাদের বিরুদ্ধে যদি এ ধরণের লিখিত অভিযোগ কোন রোগীর পরিবার করে থাকে তাহলে উক্ত অভিযোগটি আমাদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিবেদক
তরুণ সরকার
পিতা- রতন সরকার
মাতা- পুতুল সরকার
আদর্শ মুসলিম পাড়া
কুমিল্লা রোড, চাঁদপুর।

সম্পর্কিত খবর