মতলব দক্ষিণে নির্যাতনের শিকার দুই সন্তানের জননী স্বামী গ্রেফতার

সমির ভট্টাচার্য্য : মতলব দক্ষিণ উপজেলায় স্বামীর পরকিয়ায় বাধা দেওয়ায় স্ত্রী সুমি আক্তার (২২) নামে দুই সন্তানের জননীকে নির্যাতন ও প্রাননাসের চেষ্টা চালায় পাষন্ড স্বামী জিসান ও তার পরিবার ।
ঘটনাটি ঘটেছে নারায়নপুর এলাকায় ।

এ ঘটনায় ঘটনায় স্বামী ও শশুর শাশুরীকে আসামী করে থানায় অভিযোগ করেন সুমি আক্তার । গত ১৭ জানুয়ারী রাতে পুলিশ পাষন্ড স্বামী জিসান আহম্মেদ রাজিবকে গ্রেফতার করেন ।

পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, গৃহবধূটির নাম সুমি বেগম (২২) তাঁর পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মোকুন্দসার গ্রামে। ওই গ্রামের ছামাদ বকাউলের মেয়ে তিনি। সুমির স্বামীর বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। ওই গ্রামের জিসান আহমেদ ওরফে রাজিবের (৩০) স্ত্রী তিনি। ২০১৪ সালে সুমি বেগমের সঙ্গে জিসানের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ওই দম্পতির জারা ও সাঈদ নামে দুটি সন্তান রয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করে সুমি বেগম জানান, বিয়ের সময় তাঁর পরিবার স্বামীকে বিদেশ যাওয়ার সময় ধার হিসেবে ২ লাখ টাকা দেন। ওই টাকা তাঁর স্বামী এখন পর্যন্ত পরিশোধ করেননি। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়াঝাটি ও দাম্পত্য কলহ লেগেই আছে। বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবিতে স্বামী তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। এ ছাড়া একাধিক নারীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর পরকীয়ার সম্পকর্ও রয়েছে।

এ নিয়ে প্রায়ই তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হতো। ৬ মাস আগে যৌতুকের দাবিতে স্বামী তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেন এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তিনি পিতার বাড়িতে ছেলেমেয়ে নিয়ে আশ্রয় নেন। পরে এলাকায় সালিস বৈঠকে মুচলেকা দিয়ে স্বামী পুনরায় তাঁকে তাঁর (স্বামী) বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সুমি বেগম বলেন, গত শনিবার রাতে ব্যবসার জন্য তাঁর কাছে পুনরায় তিন লাখ টাকার যৌতুক দাবি করেন তাঁর স্বামী। ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এ নিয়ে শশুর বাড়িতে তাঁর সঙ্গে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজনের কথা-কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে দেন স্বামী। এ অবস্থা থেকে নিজেকে কোনো রকমে রক্ষা করেন।

এরপর তাঁর স্বামী, শশুর ও শাশুড়ি মিলে তাঁকে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। তাঁর তলপেটে সজোরে লাথি মারেন এবং বুক, পিঠ ও চোখ-মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং বসতঘরের মেঝে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন এবং সেখান থেকে তাঁরা আহত সুমিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে পরিবারের লোকেরা তাঁকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে এখনো তিনি চিকিৎসাধীন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন দুই সন্তানের জননী সুমি।

এ ঘটনায় স্বামী জিসান আহম্মেদ বাজিব বলেন আমার স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে খাটের সাথে ধাক্কা খেয়ে সুমির চোখে আঘাত লাগে । আমি মারিনি ।

মতলব দক্ষিণ থানার ওসি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, এতে গতকাল রাতে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে তাঁর স্বামী, শশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। গতকাল রাতে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। আটক জিসানকে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে ।

সম্পর্কিত খবর