শাহাতলী- ভড়ঙ্গারচরে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় অনাবাদি শত শত কৃষি জমি

মাসুদ হোসেন : চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ছোট শাহাতলী-ভড়ঙ্গারচর এলাকার প্রায় একশ একর কৃষি জমি এখন পানির নিচে ডুবে আছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক বছর ধরে ঐ গ্রামের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। এর মাঝেও অনেক কষ্ট করে ঐসব জমিতে ধানের চারা রোপন করলেও তা পচে নষ্ট হচ্ছে।

এছাড়াও থেমে থেমে আসা বৃষ্টির পানি জমে থাকার ফলে আগে থেকে রোপনকৃত ধানের চারাগুলো পানির নিচে ডুবে গিয়ে চপে নষ্ট হয়ে বিপাকে পড়ছেন গ্রামের অসংখ্য কৃষক। তাদের চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যায় শত শত বিঘা জমির ধানের চারা। ফলে কৃষকের বুকে জমছে চাপার আর্তনাদ। তাদের চোখে-মুখে ফসল হারানোর শঙ্কার ছাপ লেগেই থাকে বছরের পর বছর।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার মৌসুম শেষ হলেও শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ছোট শাহাতলী ও ভড়ঙ্গারচর এলাকার শত শত কৃষি জমি তলিয়ে আছে পানির নিচে। এ এলাকাগুলো কৃষি নির্ভর হলেও তা এখন শুধু অতীত। ফলে গ্রামবাসীর আয়ের বড় একটা অংশ আসে কৃষি ফসল থেকে।

তবে একসময়ে এই জমিগুলোর পানি নিষ্কাশন হতো চাঁদপুর লাকসাম রেলপথের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার ছোট একটি খালের সংযোগ ছিল ডাকাতিয়া নদী থেকে বের হওয়া বিশ্ব খালের সাথে। ছোট খালটি এখন আর দেখা নেই। আবার রেল লাইনের পাশের বাড়ির মালিকরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই রাস্তা নির্মাণ করায় এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কয়েকজন কৃষক।

দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার, আবুল কালাম, দেলোয়ার হোসেন দুলু সহ কয়েকজন কৃষক জানান, এক সময় এই বিলে বোরো, রোপা, আমন ও রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, পেয়াজ, রসুন, মরিচ সহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল আবাদ হতো। কিন্তু এই বিলের পানি নামার অংশগুলো কয়েকজন জমির মালিক ভরাট করে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। কালভার্ট বা নালা না থাকায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বিলটি ক্রমান্বয়ে অনাবাদি হয়ে পড়েছে।

এখানকার জমির মালিকরা অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন, যেখানে সেখানে যে যার মতো বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর এলাকার বিভিন্ন ব্রিজ ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে এলাকার কৃষি জমিগুলো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের উপযোগী করে তোলতে প্রশাসনের সু দৃষ্টি কামনা করছি।

এ ব্যাপারে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোরসালিন হোসেন বলেন, এ এলাকার জমিগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুতই খান খনন করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী বলেন, ঐ এলাকার কয়েকজন কৃষক আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চাঁদপুর জেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান সবুজ দৈনিক চাঁদপুর খবরকে বলেন, আমার জানা মতে এ এলাকাটি একটি কৃষি নির্ভর এলাকা। এর আগেও শাহমাহমুদপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এখানকার খাল খনন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোন কাজই না হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা আজ দুঃচিন্তায়, হুমকির মুখে শত শত কৃষি জমি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি কৃষি জমিও যাতে অনাবাদি পড়ে না থাকে’ সে লক্ষ্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে অনাবাদি এসব কৃষি জমিগুলো চাষাবাদের উপযোগী করে তোলতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানান।

সম্পর্কিত খবর