চাঁদপুরের ৫টি আসনে ২০ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী নির্বাচনে ভোটারদের দেওয়া মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এক অষ্টমাংশ মানে হচ্ছে আট ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ এক অষ্টমাংশের কম ভোট পেলে তিনি নির্বাচন কমিশনে জমাকৃত টাকা ফেরত পাবেন না। এটাকে জামানত বাজেয়াপ্ত করা বলে। কোন প্রার্থী এক অষ্টমাংশের বেশি ভোট পেলে তিনি নির্বাচন কমিশনে জমাকৃত টাকা অর্থাৎ জামানত ফেরত পাবেন।

চাঁদপুরের ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মোট ৩০ জন প্রার্থী। নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী ফলাফলে বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় ২০ প্রার্থী জামানত হারান।

জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন, চাঁদপুর-১ (কচুয়া): আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. সেলিম প্রধান চেয়ার প্রতীক ৫৭৭৯ ভোট এবং জাসদের সাইফুল ইসলাম মশাল প্রতীক ৩৮২১ ভোট পেয়ে জামানাত হারালেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. সেলিম মাহমুদ নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৩০৭ ভোট। মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬১৮টি। এর মধ্যে ২৭১১টি ভোট বাতিল হয়েছে। ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৫৯, ভোট কেন্দ্র ১০৯ টি।

চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ): আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইসফাক আহসান পেয়েছেন ২১ হাজার ৩৩৫ ভোট। জাতীয় পার্টির এমরান হোসেন মিয়া লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন ১২৬৫ ভোট। বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির মো. মনির হোসেন একতারা প্রতীক পেয়েছেন ৯৫৮ ভোট এবং জাসদের মো. হাছান আলী সিকদার মশাল প্রতীক পেয়েছেন ৫৮৭ ভোট পেয়ে জামানত হারালেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) প্রতিক নিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম জয়লাভ করেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৯ টি। মোট ভোট পড়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ২৬টি। এর মধ্যে ২৮২৮টি ভোট বাতিল হয়েছে। ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৮টি, ভোট কেন্দ্র ১১৫৫ টি।

চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর): আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেদওয়ান খাঁন ট্রাক প্রতীক পেয়েছেন ১ হাজার ২২৮ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মহসীন খান লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন ৮২৮ ভোট। জাকের পার্টির মো. কাওছার মোল্লা গোলাপ ফুল প্রতীক পেয়েছেন ১ হাজার ৪৩৭ ভোট।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন মোমবাতি প্রতীক পেয়েছেন ৭৩৩ ভোট এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান ফুলের মালা প্রতীক পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে বিশাল ব্যবধানে চতুথবারের মতো আওয়ামীলীগ মনোনীত (নৌকা), প্রতীক নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জয়লাভ করেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৬৬ টি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূইয়া ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৪ হাজার ১৯৭ ভোট।

মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২৪২টি। এর মধ্যে ৩৩১০টি ভোট বাতিল হয়েছে। ভোটার সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৩২টি, ভোট কেন্দ্র ১৬৫ টি।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) : আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম প্রার্থী ড. মো. শাহজাহান নোঙ্গর প্রতীক পেয়েছেন ১ হাজার ৭৪ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাজ্জাদ রশিদ লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন ৫৯০ ভোট। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ফুলের মালা প্রতীক পেয়েছেন ২০১ ভোট। ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির প্রার্থী আবদুল গনি আম প্রতীক পেয়েছেন ২০৮ ভোট।

তৃণমুল বিএনপি প্রার্থী মোঃ আবদুল কাদির তালুকদার সোনালী আঁশ প্রতীক পেয়েছেন ৩৬০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) প্রতিক নিয়ে মুহম্মদ শফিকুর রহমান জয়লাভ করেন। তিনি পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৪৫৮ টি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. শামছুল হক ভূইয়া ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৪২৫ ভোট। তিনি ১ হাজার ৩৩ ভোটে পরাজিত হন। চাঁদপুরের সব কয়টা আসনের মধ্য ফরিদগঞ্জ আসনে নৌকার সাথে ঈগল প্রতিকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। মোট ভোট পড়েছে ৯৫ হাজার ৮৪০টি। এর মধ্যে ২৭৬৪টি ভোট বাতিল হয়েছে। ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৯টি, ভোট কেন্দ্র ১১৮ টি।

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি) : আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ প্রার্থী সৈয়দ বাহাদুর শাহ্ মুজাদ্দেদী চেয়ার প্রতীক পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪৪ ভোট। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রার্থী মো. মনির হোসেন মজুমদার মশাল প্রতীক পেয়েছেন ৩৮০ ভোট। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ফুলের মালা প্রতীক পেয়েছেন ৫৫৬ ভোট। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী আক্তার হোসেন ছড়ি প্রতীক পেয়েছেন ১৩৭ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

এ আসনে নৌকা প্রতীকে মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ৮৩ হাজার হাজার ২২৭ ভোট পেয়ে ৫ম বারের মত জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে গাজী মোঃ মাঈনুদ্দিন পেয়েছে ৩৮ হাজার ৬৩৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে আলহাজ্ব সফিকুল আলম ফিরোজ পেয়েছে ২২ হাজার ৫৩৫ ভোট।

মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯১টি। এর মধ্যে ৩৮৭৬টি ভোট বাতিল হয়েছে। ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬১টি, ভোট কেন্দ্র ১৫৩ টি।

এবার মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে প্রত্যেক প্রার্থীকে সরকারি কোষাগারে ২০ হাজার টাকা করে জমা দিতে হয়েছে। এটিই নির্বাচনী জামানত।

জামানত বাজেয়াপ্ত একাধিক প্রার্থীরা বলেন কত ভোট পেলাম সেটা বড় কথা নয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাই বড় ব্যাপার। আগামীতে আরও ভালো করবো।’

চাঁদপুর জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন বলেন, নির্বাচনে ভোট দেওয়া ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার সব নাগরিকেরই সমান। যেসব প্রার্থী মোট কাস্টিং ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোটও পাননি, তারা নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী জামানতের টাকা ফিরে পাবেন না। তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।

বগুড়া-৭ আসনে বর্তমান এমপি মহাজোট প্রার্থী জাপার আলতাফ আলী জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে তিনি ২৬ হাজার ৫৪ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

সম্পর্কিত খবর