চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী মাঠ উত্তাল

স্বপন কর্মকার মিঠুনঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মাঠ উত্তাল হয়ে উঠেছে। চলছে পাল্টা পাল্টি পথ সভা।

আবার কোনো কোনো প্রার্থীর পথসভা জনসভায় রুপ নিচ্ছে। কোনো কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর পথসভায় উত্তেজনামুলক বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। এতে করে নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

নৌকা প্রতীক ও আওয়ামীলীগের ২ স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা সরবর হয়ে উঠেছে।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬৪, চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে যারা নির্বাচন করছেন তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে বর্তমান সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধকালিন ১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ও জাতীয় সংসদ এর ১ নং প্যানেল স্পিকার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, হাজিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান গাজী মোঃ মঈনুদ্দিন স্বতন্ত্র ( ঈগল) প্রতীক, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা কলাবাগান ক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ শফিকুল আলম ফিরোজ স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীক,

ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ্ মোদাদ্দেদী (চেয়ার) প্রতীক, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের আলহাজ্ব ড. বাকীবিল্লাহ মেশকাত চৌধুরী (ফুলের মালা) প্রতীক, বাংলাদেশ সাংস্কৃতি মুক্তি জোটের আক্তার হোসেন (ছড়ি) প্রতীক, জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) মনোনীত প্রার্থী চাঁদপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মজুমদার (মশাল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

আওয়ামীলীগের দল মনোনীত নৌকা প্রতীক প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের ২ জন স্বতন্ত্রসহ মোট ৭ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। পৌষের শীত উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন।

জানা যায়, এ আসনে ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত সংসদে যাওয়ার সুযোগ হয় বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর অবঃ রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের। তিনি পরবর্তীতে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি চারবার নির্বাচিত হয়ে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের আস্থা অর্জন করছেন।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম তার নির্বাচনী আসনে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ নিয়ে বহুবার এসেছে। তৃণমুলের জনগণের সঙ্গে তার একটা নিভীড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তার উভয় উপজেলায় ভোট ব্যাংক রয়েছে।

তার অনুসারী ও কর্মী সমর্থকরা বলেন, এই নির্বাচনী আসন লুটপাটকারিদের হাতে নিরাপদ নয়। লুটপাটে সুবিধা বঞ্চিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলে শাহরাস্তি-হাজিগঞ্জ উপজেলার শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন। এই আসনে নৌকা আর মেজর রফিকুল ইসলামের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ আ. লীগ মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা ও দলীয় সভাপতি দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এই আসন থেকে অতিতে পাঁচ বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন এবং আমি চার বার নির্বাচিত হয়ে যথাযথভাবে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করেছি। ফলে জনগণের সাথে আমার একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে।

সাধারণ মানুষ আমাকে অনেক ভালবাসে, এটা আমি জানি। তারই ধারাবাহিকতায় নেত্রী ষষ্ঠ বারেও আমাকে মনোনীত করে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি আশা করছি, আমার নির্বাচনী এলাকার আপামর জনগণ এবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আবার সংসদে কথা বলার সুযোগ করে দিবেন। এবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন গ্রহনে জননেত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর, জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় আমার শাহরাস্তি-হাজিগঞ্জ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করতে স্বক্ষম হয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো লুটতরাজ কারিদের সুযোগ দেইনি। এলকার জনগন শান্তিতে বসবাস করতে পারছে। কাউকেই হয়রানি করা হয় নাই। আমার এলাকার শান্তি প্রীয় জনগণ তাদের আমানত রক্ষা করতে আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাজিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান গাজী মঈনুদ্দিন। তিনি আওয়ামিলীগের সংগ্রামী নেতা, তৃনমুল পর্যায়ের নেতা বলে পরিচিতি রয়েছে তার। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক প্রার্থী হিসেবে হাজিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি নিয়ে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক পাওয়ার আশায় দল হতে ফরম সংগ্রহ করে ছিলেন। তিনি দলীয় প্রতীক নৌকা না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হাজিগঞ্জে তার পরিচিতি থাকলেও সংসদীয় আসনের শাহরাস্তি উপজেলায় সাধারণ ভোটারদের কাছে তিনি তেমন পরিচিত লাভ করতে না পারলেও রাজনৈতিকভাবে দলীয় একাংশ নেতা-কর্মীদের কাছে তার নামডাক রয়েছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ভোট ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে তিনি নির্বাচন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি -হাজিগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

তার অনুসারীরা বলছেন, গাজী মাঈনুদ্দিন হাজীগঞ্জ উপজেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মাঠে রয়েছেন। তারা দাবি করছেন, গাজী মাঈনু্দ্দিন ভাই আগামী ৭ জানুয়ারী ২০২৪ ঈগল প্রতীক বিপুল ভোটের ব্যবোধানে বিজয় লাভ করবে।

দলীয় আরোক স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য ও ঢাকা কলাবাগান ক্রিড়াচক্র ক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ শফিকুল আলম ফিরোজ। তাকে আগে কখনও এলাকার রাজনৈতিক ময়দানে তেমন দেখা না গেলেও কিছু কিছু সময় নিজ গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছে তিনি নিজ উপজেলায় অসহায় মানুষদের দান করাসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে কিছুটা পরিচিতি লাভ করেন। শাহরাস্তি ও হাজিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ তাকে আগে কখনও দেখেননি, ব্যানার, ফেস্টুনে তার নাম দেখলেও এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তাকে বাস্তবে মাঠে দেখছে। তার পক্ষে শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান মিন্টু, পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল করিম মিন্টু ও পৌর শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি আহসান মঞ্জরুল ইসলাম জুয়েল সহ একাধিক নেতা কর্মী প্রকাশ্যে নির্বাচনী সভা সমাবেশ করছেন এবং তার ট্রাক প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন।

তার সমর্থকরা বলছেন, মোঃ শফিকুল আলম ফিরোজ ভাই আওয়ামীলীগের লোক তিনি শাহরাস্তির সন্তান। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ে যাচ্ছেন, ইনশাআল্লাহ আমাদের প্রার্থীর জয় হবে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি নেয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়ে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মঈনুদ্দিন গাজী নির্বাচনী বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য দিয়ে বলেন, হাজীগঞ্জবাসী আমাকে ভোট দিলে এক লাখ ভোটের ব্যবোধানে আমি বিজয় হবো।

এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ’ ৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯শ’ ৫১ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬শ’ ১০ জন।

সম্পর্কিত খবর