চাঁদপুর-৩ আসনে লড়াই হবে নৌকা-ঈগল প্রতীকে

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার- প্রচারণা।

নৌকা আর ঈগল প্রতীকের প্রার্থীরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী নিজে এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা দিনরাত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার সাঁটানো, মাইকিং, পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ার মত নয়।

চাঁদপুর ৩ আসন (চাঁদপুর সদর-হাইমচর ) আসনে নৌকা- ঈগল প্রতীক লড়াইয়ের আভাস মিললেও এ আসনে অন্য দলের মনোনীত প্রার্থীরা এক প্রকার নিশ্চিন্তে সময় পার করছেন।

রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর চাঁদপুর -৩ আসন থেকে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের ডাঃ দীপু মনি ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. শামছুল হক ভূইয়া। এ শক্তিশালী দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন এবং ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে বিরাজ করতে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।

চাঁদপুর ৩ আসনে মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ দীপু মনি এর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূইয়া (ঈগল) এই দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনী লড়াই হবে বলে ভোটারা মনে করছেন।

ডাঃ দীপু মনি এ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি চাঁদপুর-৩ আসনে বিভিন্ন কারণে বেশ আলোচিত, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের কন্যা, বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নারী শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাধিকবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চাঁদপুর-৩ আসন থেকে গত ৩ বারের নির্বাচিত এমপি ডা. দীপু মনি। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য আছে বলা যাবে না। কারণ এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরাই জয়লাভ করেছিল। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে এই আসনে বিএনপির আধিপত্য ভঙ্গ করেন ডা. দীপু মনি। ওই নির্বাচনে ডা. দীপু মনি পান ১৩৪৮৩৬টি ভোট আর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জি এম ফজলুল হক ১১৬০৬৮টি ভোট পেয়ে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। এবারও চতুর্থবারের মতো নৌকার মনোনয়ন পান ডাঃ দীপু মনি।

চাঁদপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ডাঃ দীপু মনির মূল প্রতিদ্বন্ধী (ঈগল) প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। এ আসনে অন্য কোনো প্রার্থী ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে জমজমাট লড়াই চলছে ঈগলের। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সরব নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে বাগযুদ্ধে ছড়িয়ে পড়েছে।

ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া ২০১৪ সালে চাঁদপুর-৪ আসনে (ফরিদগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শুরুতে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান। ২০০১ সালে তিনি দলীয় প্রতীকে চাঁদপুর-৩ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

এছাড়াও সাবেক এ সংসদ সদস্য চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে একেই প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামছুল হক ভূইয়ার পক্ষে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগেরই কিছু সংখ্যক নেতৃবৃন্দ। চাঁদপুর ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছেন নৌকার মাঝি ডাঃ দীপু মনি।

চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর)- আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫,০৮,৯৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৬৩,৮৯৩ জন । নারী ভোটার ২,৪৫,০৩৯ জন। একটি পৌরসভা, ২ টি উপজেলা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ২৬২ তম আসন। চাঁদপুর সদর উপজেলা ও হাইমচর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকা।

চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, স্বতন্ত্র মো. রেদওয়ান খান বোরহান ট্রাক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের অ্যাডভোকেট মো. মহসীন খান, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন মোমবাতি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো: মিজানুর রহমান ফুলের মালা, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের মোঃ. কাওছার মোল্লা।

সম্পর্কিত খবর