চাঁদপুরে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পুরষ্কার বিতরণ

মহসিন হোসাইন: ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত ও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক বাস্তবায়িত, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম- ৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পের চাঁদপুর জেলার-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার( ১৬ জানুয়ারি)বেলা ১২টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে এ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুদুল আলম মাসুদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, শিশুদেরকে খেলার চলে বিদ্যালয়মূখী করা, তাদেরকে পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে আপনাদের বেশ ভূমিকা রয়েছে তা আমি জানি।

বিশেষ করে প্রাক প্রাথমিকের শিশুদের আপনারা বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন,তাদের পিছনে সময় ব্যায় করেন এবং বিদ্যালয়মূখী করার জন্য অনেক কাজ করেন সেটাও আমি জানি।

তিনি আরো বলেন, যারা আমাদের পিছিয়ে পড়া শিশু রয়েছে,তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, যারা রিকশা চালায়, তারা তেমন শিক্ষিত নয়, কোনো টেকনিক্যাল কাজ‌ও জানেন না, কোনো হাতের কাজ‌ও জানা নেই তার। সে শুধু শারীরিক কাজেই অভ্যস্ত। এর বাইরে সে কিছুই পারেনা। এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হ‌ওয়ার কারণেই তিনি একজন দিনমজুর, নয়তো রিকশা চালক হয়ে জীবন যাপন করেন।

জেলা প্রশাসক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আমরা চাই কোনো শিশু যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। সকল শিশুর অধিকার রয়েছে লেখাপড়া করার। তাই সরকার এই সুযোগ করে দিয়েছে।

সরকার আমাদের দেশে যারা গরীব আছে, অসহায় আছে তাদেরকে যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছে লেখাপড়ার জন্য। আর এজন্য মন্দির ভিত্তিক শিশু গণশিক্ষা ব্যাবস্থা সহ বিভিন্ন উপায়ে সুযোগ দিয়ে রেখেছেন।

যারা গরীব , দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার কাজে সুযোগ তৈরি করে দেওয়া এবং এই যে আপনারা যারা শিক্ষক আছেন, আপনারা শুধু এটাকে ৫ হাজার টাকার সীমাবদ্ধ মনে করবেন না। আপনি একটা ভালো কাজ করছেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মানুষ হ‌ওয়ার জন্য। এটাও কিন্তু মহৎ কাজের মধ্যে পড়ে।

তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা শিক্ষক তারা দেখবেন কোন শিশুগুলো ঝরে পড়েছে, কোনো শিশুটি বিদ্যালয় যায়নি, লেখাপড়া থেকে বিচ্যুতি হয়েছে, তাদেরকে বিদ্যালয়মূখী করার বিষয়ে আপনারা কখনোই ত্রুটি রাখবেন না।

তিনি আরো বলেন, আমার কেন যেন মনে হয় আমরা কেন যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছি না। যদি করতাম, তাহলে আর এতো শিশু শিক্ষা হতে বঞ্চিত হতো না, লেখাপড়া থেকে বাদ যেতো না।

আপনাদের যে কাঙ্ক্ষিত অর্জন সেটা কেবলমাত্র মন্দিরে গিয়েই সীমাবদ্ধ নয়, সেটার জন্য দুনিয়াতেও ভালো কাজগুলো করতে হবে। সর্বোপরি, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমগুলোর আরো ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। কোনো শিশুই যেন শিক্ষা থেকে ঝড়ে না পড়ে। এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- চাঁদপুর জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোস্তাফিজুর রহমান,অভিভাবকদের মধ্যে থেকে বক্তব্য রাখেন অজন্তা দে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধীন মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম- ৬ষ্ঠ পর্যায় হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে এসময় উপস্থিত ছিলেন- চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম এর পরিবর্তে ছিলেন পুলিশ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী সুভাষ চন্দ্র রায়, প্রত্যেক উপজেলা থেকে আগত শিক্ষক- শিক্ষিকা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠান শেষে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ৫ জন শিক্ষকের মাঝে- প্রিয়াংকা সরকার, কৃষ্ণ কুমার সরকার, রুপালী রানী দাস, মিতা রানী, লতা রানী সাহা এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে ১০ জনের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন। তারা হলেন, ইউভান দে অক্ষর, অরিন সরকার, রনিতা সরকার, অঞ্জিতা দাস, ঐন্দ্রীলা সরকার, সুরপা রানী কর্মকার, রিকিয়া রানী দাস, শিশীর সাহা, অর্পী রানী দাস, অর্জুন সরকার এর মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন। এক‌ই সাথে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদের মাঝেও পুরস্কার‌ও তুলে দেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পবিত্র গীতা পাঠ করেন- গীতা শিক্ষক কৃষ্ণ কুমার সরকার।

সম্পর্কিত খবর