
মোঃ ইসমাইল : চাঁদপুরের হাইমচর ও হিজলা সীমান্তবর্তী এলাকায় মাঝ নদীতে বালি উত্তোলনে সক্রিয় রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। বালু খেকু নামে পরিচিত সেলিম খাঁন না থাকলেও তার হাল ধরে আছে বেশ কয়েকজনের একটি বালু সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানাজায়, হিজলা উপজেলার গাফফার তালুকদার, শরীয়তপুর উপজেলার সুমন বেপারী ও সম্রাটের নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে বালি উত্তোলন করে বলগেটে করে বালি বিক্রি করছে।
১০ হাজার ঘনফুট বলগেটে বালি ভরতে সময় লাগে এক ঘন্টা। প্রতি বলগেট বালু ২০ হাজার টাকায় ক্রয় করে নিয়ে যায় বলগেট কর্তৃপক্ষ। সারা রাতে কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ সিন্ডিকেট। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এ সিন্ডিকেটের লোকজন অবৈধ ভাবে ব্যবসা চালাতে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছে না।
নিজের মত করে নদী থেকে বালি উত্তোলন করে বালি বিক্রি করছে তারা। হাইমচরের প্রশাসনের কাছে এটি তাদের সীমানার বাহিরে হিজলা উপজেলা, অন্য দিকে হিজলা উপজেলার প্রশাসনের কাছে এটি তাদের সীমানার বাহিরে হাইমচর উপজেলা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। কাচা টাকার লোভে বালি উত্তোলন বন্ধ না করে সহযোগিতা করছে হাইমচর উপজেলার চরাঞ্চলে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। গত রবিবার সারা রাত বালি উত্তোলন করে এ সিন্ডিকেট। হাইমচরের সীমানার প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরে বালি উত্তোলন করা হয়।
বালি ভর্তি বলগেটগুলো হাইমচরের সীমানা দিয়েই পার হয়। কিন্তু হাইমচরের নীলকমল নৌপুলিশ এখন পর্যন্ত কোন বলগেট ধরতে সক্ষম হয়নি। গতকাল সন্ধ্যায় বালি উত্তোলনের প্রস্তুতির সংবাদ পাওয়া যায়। এ নিয়ে লোক মুখে রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। নীলকমল ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, সেলিম চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে বালি কাটার ফলে নীলকমল ইউনিয়ন নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। যে বালি কাটার জন্য সেলিম চেয়ারম্যান অপরাধী হয়ে তার মৃত্যু হলো। সেলিম চেয়ারম্যানের মরণের পর বন্ধ হয়নি সেই বালু উত্তোলন। তাহলে সেলিম চেয়ারম্যানের অপরাধ ছিল কী? যদি তার সেই অবৈধ কাজ চলমান থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউপি সদস্য জানান, হাইমচরের সাহেবগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকা ও হিজলা এলাকার বর্ডারের নদী থেকে বালি উত্তোলন করে সে বালি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এ বালি কাটার চক্রটি রাতের অন্ধকারে কখনো হাইমচরের সীমানায় আবার কখনো হিজলা সীমানায় বালি উত্তোলন করে। তারা এক সাথে কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজ সীমানার বাহিরের অজুহাতে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কী হাইমচরের সীমানার বাহিরে বালি উত্তোলন বৈধ? তা না হলে নীলকমল নৌপুলিশ ফাঁড়ি, কোষ্টগার্ড, প্রশাসন কারোইতো কোন প্রদক্ষেপ দেখছি না। কয়েকদিন যাবত বালি কাটছে সবাই কেমন যেন নিরব ভূমিকা পালন করছে।
নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনির শিকদার বলেন, হাইমচরে হোক আর হিজলায় হোক বালি উত্তোলন করছে এটা সঠিক। নদীতে বালি উত্তোলন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। বালু খেকু সিন্ডিকেট বালি কাটার সময় ৩ টি স্পীটবোটে নদীতে মহরা দেয়। যাতে কোন লোক তাদের ড্রেজিংয়ের নিকট না যেতে পারে। কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ একত্রে যৌথ অভিযান দিলে বালু খেকু চক্রগুলোকে সেটাফসহ আটক করতে পারবে।
প্রশাসনের লোকজন আমাদের সহযোগীতা চাইলে আমরা তাদেরকে সহযোগীতা করতে প্রস্তুত। চরাঞ্চল রক্ষায় যে কোন মূল্যে বালি উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা জানান, আমি নীলকম নৌপুলিশ ফাঁড়িকে বলেছি নদীতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য। তিনি আমাকে জানিয়েছেন হাইমচরের সীমানার ৫ কিলোমিটার দুরে বালি উত্তোলন করছে। যেহেতু বলগেট গুলো হাইমচরের সীমানা দিয়ে চলাচল করে তাই আমি তাদের বালি ভর্তি বলগেটগুলো আটক করতে বলেছি।
এ বালি কাটার পিছনে অনেক বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। নীলকমল নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কংকন কুমার বিশ্বাসের সরকারি মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে তিনি রিসিব করেন নি।