
সমির ভট্রাচার্য্য : তীব্র শীতে কয়েক দিন ধরে চাঁদপুর ও কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলায় শিশুরা ব্যাপক হারে শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। অধিকাংশ শিশুই রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
গত ২২ ডিসেম্বর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ১৫ দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবির) চাঁদপুরের মতলব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫ হাজার ১শ ৪৩ জন শিশু। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে ২৭৪ শিশু। ভর্তির এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণের বেশি।
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ থাকায় ও দূষিত পানি পান করায় শীতে এত হারে শিশুরা শীতকালীন ডায়রিয়া বা রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য চিকিৎসকদের।
আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতালের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২২ ডিসেম্বর থেকে গতকাল রোববার (৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত ১৫ দিনে ওই হাসপাতালে শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে মোট ৫ হাজার ১শ ৪৩ জন। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয় ২৭৪ জন। শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু ভর্তি হয়েছে
এ সংখ্যা বছরের স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণের বেশি। ভর্তি হওয়া শিশুদের বাড়ি চাঁদপুর, কুুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের জেলায়। আজ সোমবার দুপুর একটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৮৫ শিশু।
সূত্রটি আরও জানায়, ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে চাঁদপুর সদরের ২৬৪, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪৬, হাজীগঞ্জের ১৬৬, কচুয়ার ২৮৭, মতলব উত্তরের ১৪৪, মতলব দক্ষিণের ১০৫, কুমিল্লার বরুড়ার ১৯৬, ব্রাহ্মণপাড়ার ৮১, বুড়িচংয়ের ১৬৪, চান্দিনার ২৫৮, কুমিল্লা সদরের (আদর্শ) ১৫৬, কুমিল্লা সদরের (দক্ষিণ) ১২৪, দেবিদ্বারের ২৭০, দাউদকান্দির ২০৯, মুরাদনগরের ৩৫১, তিতাসের ১৩৭, লক্ষ্মীপুর সদরের ১৩২ ও রামগঞ্জের ৯৭ জন। বাকিরা এসেছে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী ও শরিয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে।
গত সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার প্রতিটি ওয়ার্ড ডায়রিয়া রোগীতে ভরপুর। হাসপাতালের বারান্দায়ও অনেক রোগী। রোগীদের অধিকাংশই শিশু। রোগীদের চিকিৎসা ও সেবায় গলদঘর্ম হচ্ছেন কর্মরত চিকিৎসক ও নার্স।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার গৃহবধূ শান্তি আক্তার বলেন, কয়েকদিন ধরে তাঁর পুত্রসন্তান শোয়াইব মিয়া (১) ঘন ঘন বমি ও পাতলা পায়খানা করছে। সঙ্গে জ¦রও আছে। আজ সকাল সাতটায় এখানে এনেছেন। চিকিৎসক খাবার স্যালাইন, সুজি ও বেবিজিংক খেতে দিয়েছেন। তার অবস্থা ভালোর দিকে।
আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতালের স্টেশন প্রধান ডা. আল ফজল খান বলেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। এ সময় বংশবৃদ্ধি ও সক্রিয় হওয়ার অনুকূল পরিবেশ পায় ভাইরাস। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এবং দূষিত পানি পান করায় এ সময় শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমিও হতে পারে। জ¦রও হতে পারে।
আল ফজল খান আরও বলেন, শূন্য থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ও নিয়ম করে পরিমিত খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ৬ মাসের অধিক বয়সী শিশুদের খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি প্রতিদিন ১টি করে বেবি জিংক ট্যাবলেট এক চামচ পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। স্যালাইন খাওয়ানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পূর্ণ এক প্যাকেট স্যালাইন অবশ্যই আধা লিটার পানিতে গুলে নিতে হবে। আক্রান্ত শিশুদের ডাবের পানি, চিড়ার পানি ও স্যুপ খেতে দিতে হবে। এ রোগ সারতে ৫ থেকে ৭ দিন লাগতে পারে। শিশুদের পাতলা পায়খানা, বমি বা জ¦র হলে বাড়িতে নিয়ম মেনে ওর স্যালাইন খাওয়াতে হবে। নেতিয়ে পড়লে বা অবস্থার অবনতি হলে বিলম্ব না করে শিশুকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তাঁর হাসপাতালে শয্যা ৭০টি। প্রতিদিন গড়ে সেখানে ১০০ থেকে ১২০ জনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। হাসপাতালে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও চিকিৎসা-সরঞ্জাম রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং শিশুদের প্রতি যত্নবান থাকলে এ রোগ এড়ানো সম্ভব।