চাঁদপুর পৌরসভার ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ!

চাঁদপুর খবর রিপোর্ট : চাঁদপুর পৌরসভায় কর্মচারীদের গ্রাচ্যুয়িটি (পেশাজীবীদের ভবিষ্যত তহবিল) নিয়ে চাঞ্চল্যকর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চাঁদপুর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) আবুল কালাম ভুঁইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী (অবসর প্রাপ্ত)এএইচএম শামসুদ্দোহা, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মশিউর রহমান, হিসাব রক্ষক মনিরুজ্জামান এবং সাবেক হিসাব রক্ষক আবুল হাসেম এই অনিয়মে সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।

এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাচ্যুয়িটি প্রক্রিয়ায় পৌরসভার নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত হারে গ্র্যাচুয়িটি কর্তনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী কর্মচারীদের গ্রাচ্যুয়িটি কর্তনের হার সর্বোচ্চ ৩০%-৫০%।

কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, উল্লেখিত কর্মকর্তারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই হার ২০০%-এ উন্নীত করে প্রায় কোটি টাকার অধিক অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। এই পদ্ধতিতে তারা এ পর্যন্ত নিজেদের ব্যাংক একাউন্টে প্রায় কোটি টাকার বেশি গ্রাচ্যুয়িটি আদায় করেছেন। যা পৌরসভার অর্থ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের জালিয়াতি এবং অসাধু চর্চার উদাহরণ।

এই অনিয়মের খবর জানার পর চাঁদপুর পৌরসভা কর্মচারী সংসদ ক্ষোভে ফেঁটে পড়ে। তারা অভিযোগ করেন, এ ধরনের অনিয়ম পৌরসভার আর্থিক ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি কর্মচারীদের প্রতি অবিচারের নজির সৃষ্টি করেছে। কর্মচারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি পৌর প্রশাসক গোলাম জাকারিয়াকে অবহিত করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর পৌর প্রশাসক গোলাম জাকারিয়া দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসক জানিয়েছেন, “আমরা পৌরসভার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মচারী জানায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা তাদের নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য প্রতি মাসে ২০০% হারে নিজেদের একাউন্টে গ্রাচুয়িটির টাকা জমা করতো। এ বিষয়ে কিছুই জানতোনা পৌরসভার অন্যান্য কর্মচারীরা। যেখানে অন্যান্য কর্মচারীদের গ্রাচ্যুয়িটি জমা হয় ৩০/৫০% হারে।

সেখানে এই ৫ কর্মকর্তার এ ধরণের অনিয়ম কর্মচারীদের ভিতরে ক্ষোভের জন্ম দেয়। এখন পর্যন্ত তারা প্রায়, গত ১ বছরে ৩০ লাখ টাকার মতো গ্রাচ্যুয়িটি জমা করে। পৌরসভায় সৃষ্ট এই অনিয়মের সমাধান না হলে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কর্মচারীরা আরও বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা বলেন, “আমাদের অধিকার হরণ করে যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।” পৌরসভার অন্যান্য কর্মচারী এবং নাগরিকরা দাবি করেছেন, এই অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পৌরসভায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক। তারা আরও জানান, এরকম আর্থিক অনিয়মের ঘটনা পৌরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে এবং কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে।

চাঁদপুর পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মশিউর রহমান দৈনিক চাঁদপুর খবরকে জানান, আমরা টাকা অত্মসাৎ করি না। এটি কর্মচারীরেদ অবসরকালীন তহবিল। একটি অ্যাকাউন্ট থেকে আরেকটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ৩০%-৫০% কর্তনের বিষয়টি অনিয়ম। তবে কর্মচারীদের ভালোর জন্য এটি আমরা করেছি।

চাঁদপুর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) আবুল কালাম ভুঁইয়া দৈনিক চাঁদপুর খবরকে জানান, পৌরসভায় কর্মচারীদের গ্রাচ্যুয়িটি (পেশাজীবীদের ভবিষ্যত তহবিল) থেকে এক্সইএন ৮০/৯০ লাখ টাকা পাবে। এ টাকা পৌরসভা দেওয়া সম্ভব না। তাই নিয়ম মেনেই অর্থ আদায় করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোন টাকা আদায় করা হয় না।

সম্পর্কিত খবর